Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

দূষণ-সচেতনতা কই, প্রশ্ন উৎসবের শহরে

পরিবেশবিদেরা বলছেন, থার্মোকল ও প্লাস্টিক সাধারণ ভাবে পচে গিয়ে পরিবেশে মিশতে পারে না। তাই যেখানে-সেখানে এগুলি ছড়িয়ে রাখলে দূষণ ছড়ায়। ঘুরেফিরে সেই দূষণের বিষ ঢোকে মানুষের শরীরেই। এ নিয়ে সচেতনতার প্রচারও চলে।

ময়দান ভরেছে আবর্জনায়। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

ময়দান ভরেছে আবর্জনায়। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২২
Share: Save:

দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল, ময়দানের গাছের গোড়ায় যেন সাদা রং লেপে দেওয়া হয়েছে। কাছে গিয়ে দেখা গেল, রং নয়। গাছের গুঁড়ি ঘিরে রাখা তারজালির ভিতরে পুরে দেওয়া হয়েছে এঁটো থার্মোকলের প্লেট! শুধু তাই নয়, ময়দানের ইতিউতি ছড়িয়ে রয়েছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, চিপসের প্যাকেট।

উৎসবের শহরে শুধু হুজুগ-হুল্লোড় নয়, লেগে রইল দূষণের ছাপও। যা দেখে পরিবেশকর্মীদের অনেকেরই আক্ষেপ, এই শহর যতই উন্নত হোক, পরিবেশ নিয়ে আমজনতার টনক নড়তে এখনও ঢের দেরি।

পরিবেশবিদেরা বলছেন, থার্মোকল ও প্লাস্টিক সাধারণ ভাবে পচে গিয়ে পরিবেশে মিশতে পারে না। তাই যেখানে-সেখানে এগুলি ছড়িয়ে রাখলে দূষণ ছড়ায়। ঘুরেফিরে সেই দূষণের বিষ ঢোকে মানুষের শরীরেই। এ নিয়ে সচেতনতার প্রচারও চলে। কিন্তু সেই প্রচার কতটা ফলপ্রসূ হয়, সেই প্রশ্ন বারবারই উঠেছে। সোমবার দিনভর হুল্লো়ড়ের ছবি দেখার পরে আরও জোরালো হয়েছে সেই প্রশ্ন।

কেন এমন ভাবে নোংরা করেন আমজনতার একাংশ? এ দিন দুপুরেই গড়ের মাঠে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল মধ্য তিরিশের যুবককে। সপরিবার পিকনিক সেরে এঁটো থার্মোকলের প্লেট গাছের গো়ড়ায় জড়ো করছিলেন তিনি। কিঞ্চিৎ ভ্যাবাচাকা খেয়ে তাঁর উত্তর, ‘‘কোথায় ফেলব বলুন?’’ ময়দান তো খাবার জায়গা নয়। তিনি খেয়ে এঁটো পাতা কোথায় ফেলবেন, সেটা তাঁরই ভাবার কথা। সদুত্তর দিতে না পেরে শেষমেশ চটে গিয়ে ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘এত লোক তো ফেলছে। শুধু আমাকেই দেখলেন!’’

এ সবের মধ্যে অনেকটাই ব্যতিক্রমী আলিপুর চিড়িয়াখানা। সেখানে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিয়ে ঢোকা নিষেধ। উচ্ছিষ্ট খাবার, পাতা ফেলতে প্রচুর ডাস্টবিন রাখা হয়েছে। দর্শকদের অনেকেই বলছেন, এ সব করে আগের থেকে অনেকটাই পরিচ্ছন্ন হয়েছে চিড়িয়াখানা চত্বর। প্লাস্টিকহীন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বিড়লা তারামণ্ডলকেও। ভিড়ে হাজির অনেকে অবশ্য এই প্রশ্নও তুলেছেন, শহরের দ্রষ্টব্য প্রতিষ্ঠানগুলির চারপাশে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন রয়েছে কি?

এ সব কাণ্ড শুনে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘এটাই সমস্যা। আর পাঁচ জন নোংরা করলে আমারও যেন নোংরা করার অধিকার জন্মায়! একটু খুঁজে ডাস্টবিন বার করতে চান না অনেকেই।’’ তাঁর দাবি, প্রতিটি উৎসবের আগেই দূষণ-বিরোধী প্রচার চালানো হয়। কিন্তু সেই প্রচার এখনও পুরোপুরি সফল হচ্ছে না।

কিন্তু নজরদারিই বা থাকবে না কেন? পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের জবাব, এত ভিড়ে নিরাপত্তা, ভিড়, যানজট সামলে এই নোংরা ঠেকানোর উপায় থাকে না। তারই মাঝে চেষ্টা করা হয়। ‘‘কোন সভ্য শহরের মানুষকে এ ভাবে পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দিতে হয় বলতে পারেন?’’ প্রশ্ন করছেন এক পুলিশকর্তা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy