চালকের ডান দিকেও বসে যাত্রী। রাজাবাজারে। নিজস্ব চিত্র
প্রবল বৃষ্টিতে অটোয় উঠে যাত্রী বললেন, ‘‘এত বেশি টাকা দেব না।’’ চালকের জবাব, ‘‘তা হলে নেমে যান।’’ এ বার যাত্রীর পাল্টা হুঁশিয়ারি, ‘‘নামবও না, দেবও না। অটোর গায়ে আগে লিখে দিন, বখশিস না দিলে অটোয় ওঠা যাবে না।’’ রাস্তার অটো দাঁড় করিয়ে তর্ক চলল আরও কিছু ক্ষণ!
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, পুজো আসে, পুজো যায়। কিন্তু শহরের রাস্তায় অটো আর ট্যাক্সির বাড়তি ভাড়া হাঁকার পুরনো রোগ যায় না। যাত্রীদের বক্তব্য, ‘‘এর সঙ্গেই যুক্ত হচ্ছে, রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম, বেশি টাকা লাগবে বা ওই দিকে এখন যাব না গোছের মন্তব্য।’’ চালকদের পাল্টা যুক্তি, ‘‘আমাদের তো পুজোর বোনাস বা বখশিসের কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই যাত্রীদের থেকেই সেই টাকা নেওয়া হয়।’’
এই ‘টাকা তোলা’র হিড়িকেই দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোণী-রেনিয়া রুটে যে দূরত্ব যেতে ১৩ টাকা ভাড়া নেওয়া হত, সেটাই এখন ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। মুকুন্দপুর থেকে যাদবপুর অথবা বেহালা চৌরাস্তা থেকে বেহালা ট্রাম ডিপো, কবরডাঙা বা শকুন্তলা পার্ক পর্যন্ত রুটগুলির ভাড়াও আকাশছোঁয়া। তারাতলা রুটে এখন আবার সর্বোচ্চ ৩০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। পিছিয়ে নেই টালিগঞ্জ ও রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের রুটগুলিও।
উত্তর কলকাতার বেলেঘাটা, আর জি কর রোড, শিয়ালদহ, কলেজ স্ট্রিটের একাধিক রুটেও এখন কমপক্ষে ১০ টাকা করে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। কলেজ স্ট্রিট ও রাজাবাজার হয়ে যাওয়া অটোয় আবার চালকের পাশের আসনেই এক জনের বদলে বসছেন তিন জন করে। কখনও বা চালকের ডানদিকেও বসানো হচ্ছে যাত্রীকে। শোভাবাজার থেকে উল্টোডাঙা যাওয়ার জন্য এখন প্রতিদিনই ১২ টাকার পরিবর্তে ২৫ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। ওই রুটেরই এক চালকের বক্তব্য, ‘‘পুজোর চার দিন খন্না থেকে গ্রে স্ট্রিট পর্যন্ত অটো বন্ধ থাকে। সেই সময়ের টাকা কোথা থেকে উঠবে?’’
অটোর সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে চলছে হলুদ ট্যাক্সির যাত্রী-প্রত্যাখ্যান। পাঁচ-ছয় কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৪০০ টাকা করে চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ! হলুদ ট্যাক্সি ছেড়ে অ্যাপ-ক্যাবে গেলেও একই সমস্যা। সেখানেও সারচার্জ আকাশছোঁয়া। এর মধ্যে হলুদ ট্যাক্সিগুলিকেও অ্যাপ-নিয়ন্ত্রিত করে দেওয়ার কথা বলছে ট্যাক্সি সংগঠনগুলি। ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক বিমল গুহ যেমন বললেন, ‘‘আমরা কিছুতেই যাত্রী-প্রত্যাখ্যান বন্ধ করতে পারিনি। আমাদের গাড়িতেও অ্যাপ চালু করে দিলে মনে হয় এই রোগ আটকানো যাবে। যাত্রীরা অ্যাপেই অভিযোগ করতে পারবেন।’’
অটোর বখশিস-দৌরাত্ম্য নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার অটো ইউনিয়নগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত শুভাশিস চক্রবর্তী এবং উত্তর কলকাতার অশোক চক্রবর্তী (মানা) দু’জনেই বললেন, ‘‘কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। অটোচালকদের নিয়ে আবার বসতে হবে।’’ রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও বললেন, ‘‘ট্যাক্সি এখনও একই রকম করছে, মানতে পারব না। তবে অটো নিয়ে কিছু অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। নজরদারি চালানোর জন্য ১৫ জনের ‘ভিজিল্যান্স টিম’ গঠন করা হয়েছে।’’ আচমকা হানা দেওয়ার কথা ভাবছে কলকাতা পুলিশও। যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) অখিলেশ চতুর্বেদী বললেন, ‘‘সাদা পোশাকে রুটগুলিতে হানা দেওয়া যায় কি না দেখছি।’’
এতে রোগ ছাড়বে কি? উত্তর জানেন না কেউই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy