Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

মুঠোয় পোলো স্টিক, অন্য উদ্‌যাপন অটিস্টিক শিশুদের

অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে বুধবারের বিকেলে এ ভাবেই মেতে উঠেছিল রেস কোর্সের প্যাট উইলিয়ামসন গ্রাউন্ডের পোলো ক্লাবের চত্বর। এই শিশুদের নিয়ে কাজ করা ‘শাম্পান’ নামে কাঁকুড়গাছির একটি সংস্থা এ দিন ওই ক্লাবের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।

পাঠ: ঘোড়সওয়ারি শিখছে ওই শিশুরা। বুধবার, পোলো ক্লাবে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

পাঠ: ঘোড়সওয়ারি শিখছে ওই শিশুরা। বুধবার, পোলো ক্লাবে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০১:১১
Share: Save:

পোলো খেলার স্টিক দিয়ে কী ভাবে বল মারতে হবে, বছর বারোর সম্রাটকে হাতে ধরে শেখাচ্ছিলেন এক প্রশিক্ষক। একে একে সবাইকেই সুযোগ দিচ্ছিলেন তিনি। তবে কী ভাবে স্টিক ধরতে হবে, অনেকেরই সেটা শিখতে সময় লাগছিল। কারণ, হাতের আঙুলের উপরে ঠিক মতো নিয়ন্ত্রণ নেই ওই অটিস্টিক শিশুদের অনেকেরই। ‘‘বারবার চেষ্টা কর, সফল তুমি হবেই’’— বলছিলেন প্রশিক্ষক। হাততালি পেয়ে উৎসাহ বেড়ে যাচ্ছিল ওই শিশুদের। শেখাতে শেখাতেই প্রশিক্ষক জানালেন, কয়েক জনের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো।

অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে বুধবারের বিকেলে এ ভাবেই মেতে উঠেছিল রেস কোর্সের প্যাট উইলিয়ামসন গ্রাউন্ডের পোলো ক্লাবের চত্বর। এই শিশুদের নিয়ে কাজ করা ‘শাম্পান’ নামে কাঁকুড়গাছির একটি সংস্থা এ দিন ওই ক্লাবের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। তিরন্দাজি এবং ঘোড়সওয়ারির ব্যবস্থাও ছিল এ দিন। ১৫৫ বছরের পুরনো পোলো ক্লাবের তরফে অটিস্টিকদের নিয়ে প্রথম এমন উদ্যোগ। ক্লাব কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, পরে এই ধরনের উদ্যোগে ফের শামিল হতে চান তাঁরা।

এ দিনের সব চেয়ে ছোট শিক্ষার্থী, বছর চারেকের বিশেষকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ‘শাম্পান’-এর প্রতিষ্ঠাতা মঞ্জুলিকা মজুমদার জানান, ২০০৪ সাল থেকে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। প্রয়োজন মতো সপ্তাহে এক দিন অথবা দু’দিন সংস্থায় যেতে হয় শিশুদের। তবে এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় অটিস্টিক শিশুর বাবা-মাকে। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা-মায়ের সঙ্গেই তো ওদের ওঠাবসা। তাই ওঁদের প্রশিক্ষণ দিলে সেটা সবচেয়ে লাভজনক হয়। কারণ, অভিভাবকেরাই ২৪ ঘণ্টা ওদের সঙ্গে থাকেন।’’ এক অভিভাবক জানান, সারা সপ্তাহের জন্য বাবা-মাকে প্রচুর কাজ দেওয়া হয় বাড়িতে। সে সব সন্তানকে দিয়ে কতটা করাতে পেরেছেন তাঁরা, তা পর্যবেক্ষণ করা হয় সংস্থায়। এ ছাড়া, বহির্জগতের সঙ্গে মেলামেশার পাঠও দেওয়া হয় এখানে।

সংস্থা সূত্রের খবর, গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীতে তিন বার ক্যাম্প হয়। সে সময়ে দল বেঁধে বেড়াতে যায় শিশুরা। বেড়াতে বেড়াতেই তারা হাতেকলমে শেখে অনেক কিছু। তাই অনেক দিন পর্যন্ত সেগুলি মনে রাখতে পারে তারা। সম্প্রতি খুদেদের নিয়ে সুন্দরবন, কুমোরটুলি ঘুরে এসেছেন মঞ্জুলিকারা। ওই শিশুরা প্রথম বার নরম মাটির দলা হাতে ধরেছিল। হাতে মাটির দলা ধরে রাখতে পারছিল না কেউ কেউ। কিন্তু বারবার চেষ্টা করে সেই শিশুরাই শিল্পীদের ঠাকুর গড়া দেখে সে দিন তৈরি করেছিল টেপা পুতুল। অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করা অনেকের মতে, চোখের সামনে দেখে বা জীবন্ত কিছু থেকে ওরা দ্রুত শিখতে পারে। তাই এমন প্রচেষ্টা আরও বাড়ুক, বলছেন তাঁরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy