—প্রতীকী ছবি।
চাপা গলায় কেউ এক জন বললেন, ‘‘দুটো আছে, ছয় হলেই দিয়ে দেব।’’ এ কথা শুনে থমকে দাঁড়াতেই কথা না বাড়িয়ে চোখের ইশারায় একটু দূরে, আড়ালে যাওয়ার ইঙ্গিত করা হল। সেই মতো আড়ালে যেতে সেখানেই হয়ে গেল সব হিসেব-নিকেশ।
ইডেনে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের সময় যত এগিয়ে আসছে, ময়দান চত্বরে ততই বাড়ছে টিকিটের কালোবাজারি। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দেদার চলছে এই ব্যবসা। বুধবার এ বিষয়ে ময়দান থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সিএবি এবং অনলাইন টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার প্রতিনিধিদের ডেকে পাঠায় পুলিশ। এর পাশাপাশি, ময়দান চত্বরে টিকিটের কালোবাজারির অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতারও করেছিল লালবাজার। ধৃতদের এক জনের কাছ থেকে ২০টি টিকিট এবং বুধবার ধরা পড়া গুঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ১৬টি টিকিট আটক করেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। গুঞ্জনকে বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। বৃহস্পতিবারও চলে ধরপাকড়। গড়িয়া এবং শহিদ মিনার চত্বর থেকে মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের কাছ থেকে বেশ কিছু টিকিট মেলে। তবে পুলিশি ধরপাকড়, থানায় অভিযোগের পরেও বন্ধ হয়নি টিকিটের কালোবাজারি।
ময়দানের বিভিন্ন ক্লাব সংলগ্ন রাস্তার আনাচকানাচে ঘুরলেই টিকিটের কালোবাজারির কারবারিদের দেখা যাচ্ছে। এমনকি, পুলিশের নজর থেকে বাঁচতে ধর্মতলার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকাতেও তাঁদের আনাগোনা চলছে। কান পাতলেই আওয়াজ আসছে, ‘‘অনলাইনে নেই, আমার কাছে দুটো আছে।’’ কেউ আবার বলছেন, ‘‘আড়াইয়ের একটা ছয়। দুটো নিলে একটু কম হবে।’’ টিকিট নিয়ে হাহাকার যত বাড়ছে, ততই টিকিটের কালোবাজারির দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার টিকিটের হাহাকার এবং তার জেরে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে ইডেনের সামনে। টিকিটের কালোবাজারির অভিযোগ তুলে দুপুরে সেখানে বিক্ষোভ দেখান জনা পঞ্চাশেক ক্রিকেটপ্রেমী। টিকিটের খোঁজে ময়দান এলাকায় ঘুরছিলেন ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা এক যুবক। তিনি বললেন, ‘‘অনলাইনে কোনও টিকিট নেই। কিন্তু টাকা ফেললেই টিকিট চলে আসছে। দুশো-পাঁচশো বেশি হলে নেওয়া যায়। এখানে তো চার গুণ, পাঁচ গুণ বেশি চাইছে।’’
শুধু টিকিটের কালোবাজারিই নয়, বিশ্বকাপের ম্যাচ ঘিরে বিভিন্ন বেআইনি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বেটিং-চক্রের রমরমাও নজরে আসছে বলে খবর। এমনকি, বিদেশে বসেও এই কারবার চালাচ্ছে চক্রের মাথারা। লালবাজারের তদন্তকারী আধিকারিকেরা যদিও টিকিটের কালোবাজারি এবং বেআইনি বেটিং-চক্র বন্ধ করতে নজরদারি চলছে বলে দাবি করেছেন। লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগকেও টিকিটের কালোবাজারি বন্ধ করতে নজরদারিতে লাগানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া ময়দান চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশকর্মীর পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশকর্মীদেরও মোতায়েন করা হয়েছে।
টিকিটের কালোবাজারি প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার লালবাজারে কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘টিকিটের কালোবাজারি বন্ধে অভিযান চলছে। গ্রেফতারও করা হচ্ছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কারা কালোবাজারি করছে, কী তাদের সূত্র, সব দেখা হচ্ছে।’’ পাশাপাশি, এ দিন ময়দান থানায় টিকিটের কালোবাজারি নিয়ে সিএবি এবং অনলাইন টিকিট বুকিং সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন নগরপাল। তিনি বলেন, ‘‘ক্রিকেট প্রশাসক সংস্থার প্রতিনিধিদের উত্তরে পুলিশ খুশি নয়। আবারও তাঁদের তলব করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy