তাণ্ডব: প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রায় হাজির সাউন্ড বক্স। শোভাবাজার চত্বরে। ফাইল চিত্র
আইনের ফাঁস এড়াতে নাম বদল হয়েছে। কিন্তু চেহারা বদলায়নি কলকাতার বিসর্জনের ‘শব্দদানব’-এর! তাই দশমী থেকেই পাড়ায়, মহল্লায় বিসর্জনের শোভাযাত্রার নামে চলেছে বিকট শব্দের উৎপাত।
এই উৎপাতের নাম ‘ডিজে বক্স’ (পেল্লায় মাপের সাউন্ড বক্স)। শব্দদূষণের জেরেই প্রশাসন যেটি প্রকাশ্যে বাজানো নিষিদ্ধ করেছে অনেক দিন আগে। তাই পুজোর উদ্যোক্তা থেকে পুলিশের একাংশের বক্তব্য, ‘ডিজে’ যন্ত্র তো নেই। এ শুধুই সাউন্ড বক্স। তবে সেই সাউন্ড বক্সের তাণ্ডবই বিসর্জন কিংবা বর্ষবরণের রাতে হাড়ে হাড়ে টের পান শহরবাসী।
নাইটক্লাবে ‘ডিস্কো জকি’ (ডি জে)-রা একটি যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন গানকে নির্দিষ্ট তালে মিশিয়ে বাজান। সেই সংস্কৃতি গত কয়েক বছরে নাইটক্লাবের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে চলে এসেছে পুজোর ভাসান কিংবা পাড়ার বর্ষবরণের অনুষ্ঠানেও। এ ক্ষেত্রে পাড়ার পুজোর সাউন্ড অপারেটর উচ্চ শব্দযুক্ত তালের সঙ্গে গানকে মিশিয়ে বাজানোর যন্ত্রটি জুড়ে দিচ্ছেন পেল্লায় মাপের সাউন্ড বক্সের সঙ্গে। আর তার জেরেই পাড়া তো বটেই, বিসর্জনের রাস্তায় দাঁড়ানো পথচারীরও হৃৎযন্ত্র বিকল হওয়ার জোগাড় হচ্ছে। এ ভাবেই সাউন্ড বক্সের ঢাল সামনে রেখে ডিজে সংস্কৃতি শহরের শব্দদূষণ বাড়াচ্ছে বলেই দাবি সাউন্ড বক্সের কারবারিদের।
মধ্য কলকাতার ম্যাডান স্ট্রিটে চোঙা, মাইক, সাউন্ড বক্সের বিরাট বাজার রয়েছে। ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘‘একটি মুরগিকে ওই শব্দের সামনে বেঁধে রাখলে হৃৎযন্ত্র বিকল হয়ে মারা যাবে।’’ তাঁরা জানান, সাধারণত ১২, ১৫ ও ১৮ ইঞ্চি মাপের সাউন্ড বক্স হয়। এর মধ্যে ১৫ ইঞ্চির বক্সের ক্ষমতা সর্বাধিক দেড় হাজার ওয়াট। অন্য দু’টির ক্ষমতা ৩০০ থেকে ৬০০ ওয়াটের মধ্যে। তবে চাইলে এর চেয়েও বেশি ক্ষমতার শব্দ তৈরির স্পিকার আলাদা করে তৈরি করে দেওয়া যায় বলেই জানান ম্যাডান স্ট্রিটের ব্যবসায়ীরা। এমন কয়েকটি বক্স একসঙ্গে বাজালে কয়েক হাজার ওয়াটের শব্দ বেরোয়। সেগুলির পিলে চমকানো শব্দ এবং আলোর ঝলকানির মাঝে চলা উদ্দাম নাচের সংস্কৃতিরই এখন চাহিদা শহর ও শহরতলির বিভিন্ন পুজোয়। এরই নাম হয়েছে ‘ডিজে বক্স’।
তবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘কী যন্ত্র, কী বক্স, সেটা কথা নয়। আসল বিষয়, কত জোরে সেটি বাজাচ্ছে। নির্দিষ্ট শব্দমাত্রার থেকে জোরে গান বাজালেই সেটা অপরাধ।’’
পুলিশের একাংশের যুক্তি, শব্দমাত্রা তাঁরা বুঝতে পারেন না। যদিও পর্ষদ সূত্রের দাবি, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁরা পুলিশের হাতে শব্দ মাপার যন্ত্র তুলে দিচ্ছেন। এক পদস্থ পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘বিসর্জনের শোভাযাত্রার সময়ে পুলিশ বিশৃঙ্খলা ঠেকাবে, না কি শব্দ মাপবে?’’
পরিবেশবিদেরা বলছেন, এই প্রচণ্ড শব্দ মানুষ এবং অন্যান্য পশুপাখির শরীরে কুপ্রভাব ফেলে। সেই কারণেই প্রকাশ্যে এই ধরনের পেল্লায় বক্স বাজানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এক পর্ষদকর্তার বক্তব্য, ‘‘আসলে এই উপদ্রব থামানোর সদিচ্ছা প্রয়োজন।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার রাতে সিঁথিতে একটি ক্লাবের শোভাযাত্রা থেকে ডিজে বক্স বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সোমবার মুরারিপুকুরে একটি পুজোমণ্ডপে পুলিশ গিয়ে গান বাজানোর সাউন্ড বক্স খুলে দেয়। তার পরে সেই প্রতিমাটিকে বিসর্জনের পথে যেতে দেয়।
উৎসবের মরসুম শুরুর আগে পুলিশের একাংশ দাবি করেছিল, এই উপদ্রব রুখতে বৈঠক করা হয়েছে। নির্দেশ না মানলে ক়়ড়া ব্যবস্থা হবে। কিন্তু সে কথা আদৌ কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, সেই প্রশ্ন রয়েছে পরিবেশকর্মীদের মনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy