শিশুদের, অল্পবয়সি মুখেদের দিকে তাকিয়ে দেখতাম, ভাল লাগত ওদের আঁকতে। ঘাটশিলায়, সুবর্ণরেখার ধারে বসে আছি, নৌকো করে কত মানুষ যাচ্ছে, শিশুকে নিয়ে নদী পেরোচ্ছে মা... এই দৃশ্যের মধ্যে একটা পবিত্রতা, সরলতা আছে, বয়স হলে তো মানুষ জটিল হয়ে যায়!”— ছোট্ট ভিডিয়োয় শিল্পীজীবনের এক অতীতখণ্ড ফিরে দেখছিলেন গণেশ হালুই। ‘দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাস’ তাদের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেছে ভিডিয়োটি। আগামী কাল, ৪ জুন থেকে আবাসে শুরু হচ্ছে প্রেজ়েন্স অ্যান্ড অ্যাবসেন্স নামে শিল্পী গণেশ হালুইয়ের নতুন যে চিত্রপ্রদর্শনীটি, তারই নান্দীমুখ যেন এই স্ব-কথন।
এই প্রদর্শনী মোট বারোটি শিল্পকর্ম নিয়ে। নতুন কী আছে তাতে? আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর আগের কাজ, এবং এর আগে কখনও কোথাও এই চিত্রগুলি প্রদর্শিত হয়নি। শিল্পপ্রেমীদের সামনে এই প্রথম তাদের আত্মপ্রকাশ, এবং এই কলকাতায়— গর্বের বইকি! শিল্পী গণেশ হালুইয়ের সঙ্গে শিল্পরসিকের পরিচয় সুদীর্ঘ ও প্রগাঢ়, আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলায় তিনি নতুনের সংযোজন ঘটিয়েছেন। তাঁর রং-তুলিতে জেগে ওঠে প্রকৃতির ছন্দ। জীবনানন্দ দাশ যদি এই রূপসী বাংলার অক্ষরশিল্পী হন, সেই বাংলার চিত্রকাব্যের রচয়িতা গণেশ হালুই, এ অত্যুক্তি নয়। সেই প্রকাশে তাঁর সঙ্গী বিমূর্ততা।
তবে এই প্রদর্শনীতে তাঁর যে ছবিগুলি থাকছে, তা যেন একেবারে আলাদা এক পথপরিক্রমা। জলরং, গুয়াশ, প্যাস্টেলে করা শৈশব-মুখাকৃতি (ছবিতে তেমনই দু’টি)— তাঁর অজন্তা স্টাডি বা প্রথম যুগের প্রতিকৃতি স্টাডির সঙ্গে কোনও মিল নেই যাদের। এই সব প্রতিকৃতি জীবন্ত হয়ে উঠেছে জনজাতি-জীবনের প্রবাহে শিশুর নির্মল সারল্যের গভীর নিরীক্ষণে, শিল্পীর নিজস্ব কল্পনায়। তাঁর কথায়, “বরাবর ছোটদের চোখের চাহনিতে আমি আকৃষ্ট হয়েছি। সেখানে প্রকৃতির মতোই নিষ্পাপ চোখে করুণ দৃষ্টি— নীল আকাশের মতো বাধাহীন, গভীরতায় যেন অন্ত নেই। আমার জীবনে এক সময় এরা সহজেই এসেছিল, সুবর্ণরেখার এ পার-ও পারের আদিবাসীদের জীবনপ্রবাহে, বা অজন্তার কাছে লেনাপুরের মানুষের নিরীহপনায়।” সে অনেক দিন আগের কথা। ১৯৯৫ সালে এই মুখাবয়বেরা ধরা দেয় ছবিতে। এত দিন তারা ছিল শিল্পীর কাছেই, দেবভাষার উদ্যোগে সেই সব ছবিই এ বার দেখতে চলেছে মহানগর। এও এক ইতিহাসের সৃষ্টি!
আগামী কাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন, ৭০/২ সেলিমপুর রোডে দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাসে। চলবে ৪ জুলাই অবধি, রবিবার বাদে। শুভারম্ভে থাকবেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, লালুপ্রসাদ সাউ ও যোগেন চৌধুরী, শিল্পীর উপস্থিতিতে প্রকাশিত হবে এই ছবিগুলি নিয়ে শিল্পীর স্বাক্ষর-সহ সীমিত সংস্করণের এক ব্যতিক্রমী প্রকাশনা, সেই সঙ্গে শিল্পীর ১৯৯৬ সালের বারাণসী স্কেচখাতার ফ্যাক্সিমিলি সংস্করণও। প্রদর্শনী চলাকালীন প্রকাশ পাবে শিল্পীর আমার শিল্পভাবনা বইয়ের ইংরেজি সংস্করণ— জয়তী দত্তের অনুবাদে, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়।
প্রাণের টানে
‘অফর বেলায় তুমি কোথায় যাও’, ‘সোহাগ চাঁদবদনি’, ‘উথালিপাথালি আমার বুক’... মুখে মুখে ফেরা গান এই সব গানের সুরনায়ক নির্মলেন্দু চৌধুরী (ছবি)। নির্মলেন্দু চৌধুরীর পারিবারিক সংগঠন ‘লোকভারতী’ ও ‘অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন অব শ্রীহট্ট সম্মিলনী’ একত্রে তাঁর জন্মশতবর্ষ অনুষ্ঠান করছে আজ ও আগামী কাল, ৩-৪ জুন, মধুসূদন মঞ্চে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা। শিল্পীর প্রয়াণের পরে পুত্র উৎপলেন্দু ধরেছিলেন দলের হাল, দু’জনেই আজ স্মৃতি। আজ সংবর্ধিত হবেন পূর্ণচন্দ্র দাস বাউল, গীতা চৌধুরী ও শিবব্রত কর্মকার। সঙ্গীতানুষ্ঠানে যাঁরা সঙ্গত করবেন, পিতা-পুত্র দু’জনেরই সুরসঙ্গী ছিলেন তাঁরা দীর্ঘ দিন, জানিয়েছেন নির্মলেন্দুর পুত্রবধূ উত্তরা। থাকছে স্বপন বসু প্রাণেশ সোম অভিজিৎ বসু লোপামুদ্রা মিত্র সুরজিৎ দোহার মা-দল’সহ বিশিষ্ট শিল্পী ও গান-দলের শ্রদ্ধার্ঘ্য। লোকসঙ্গীত খুব ভাল নেই ‘অতি আধুনিক’ এ যুগস্পর্শে, শিল্পীর স্মরণে ফিরুক মাটি আর প্রাণের টান।
কল্লোল ১০০
১৯২৩-এ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী কলকাতায় এক দল যুবার মনে হয়েছিল, নতুন এক যুগের পত্তন হওয়া দরকার বাংলা সাহিত্যে। কল্লোল-এর শুরু সে থেকে। দীনেশরঞ্জন দাস-গোকুলচন্দ্র নাগের সম্পাদনায় মাসিক সাহিত্যপত্রে প্রকাশিত হয় আধুনিক ভাব-ভাষা-আঙ্গিকের কবিতা, গান, গদ্য-প্রবন্ধ-কথাসাহিত্য। বুদ্ধদেব বসু বিষ্ণু দে অজিত দত্ত প্রেমেন্দ্র মিত্র অচিন্ত্যকুমার জীবনানন্দ তারাশঙ্কর বনফুল অমিয় চক্রবর্তী এবং আরও কত জন, কে লেখেননি কল্লোল-এ! নবীনদের সঙ্গে সে কালের প্রতিষ্ঠিতরাও। ১৩৩০-এর বৈশাখ থেকে ১৩৩৬-এর পৌষ, প্রায় সাত বছরের আয়ুষ্কালে বঙ্গসাহিত্যের বাঁক বদলে কল্লোল-এর ভূমিকাকে ফিরে দেখল মহারানি কাশীশ্বরী কলেজের বাংলা বিভাগ, গত ২৬ মে। ছিলেন বুদ্ধদেব বসুর দৌহিত্রী কঙ্কাবতী দত্ত।
ঠিকানা
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির ‘ওল্ড অ্যান্ড রেয়ার বুকস’ বিভাগে সম্প্রতি যুক্ত হল অমূল্য এক সংগ্রহ— ‘শঙ্খ ঘোষ পত্রিকা সংগ্রহ’। শঙ্খ ঘোষের ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা পত্রিকা, সংখ্যায় দশ হাজারেরও কিছু বেশি। পরিবারের তরফ থেকে এই সংগ্রহ যাদবপুরের গ্রন্থাগারে রাখার প্রস্তাবে এগিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। তাঁর উপস্থিতিতে গত ২২ মে সেন্ট্রাল লাইব্রেরির ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক শ্রবণা ঘোষের হাতে এই পত্রিকা-সংগ্রহ দিয়ে এসেছিলেন পরিবারের সদস্যেরা। তারই সূত্র ধরে গত ৩০ মে বিকেলে, ছোট্ট অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানে উদ্বোধন হল সুসজ্জিত এই সংগ্রহের, শঙ্খ ঘোষের দুই বন্ধু সৌরীন ভট্টাচার্য ও অমিয় দেবের হাত ধরে। ‘বইয়ের ঘর’-এর ঠাঁই বদল— শঙ্খ ঘোষের প্রিয় কর্মস্থল, যাদবপুরে।
পরিবেশের ছবি
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব। সিনেমা সহজ করে দেয় বোঝার সঙ্কট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব আরবান অ্যাফেয়ার্স (এনআইইউএ)-এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় গৃহ ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক, ইউ২০, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রেঞ্চ ডেভলপমেন্ট এজেন্সি ও নিউ টাউন কলকাতা গ্রিন স্মার্টসিটি কর্পোরেশন লিমিটেড একত্রে আয়োজন করেছে ‘আরবান ক্লাইমেট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’— এই প্রথম। দিল্লিতে হয়ে গিয়েছে এ বছর মার্চে, মুম্বই হয়ে উৎসব এ বার কলকাতায়। নিউ টাউনের নজরুলতীর্থে শুরু আজ, চলবে ৫ জুন পর্যন্ত। দেখা যাবে বারোটি দেশের ষোলোটি ছবি, উপস্থিত থাকবেন পরিচালকেরাও, রয়েছে আলোচনার পরিসর। ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসও উদ্যাপন হবে উৎসবমঞ্চে। citiis.niua.in/event/urbanclimatefilmfestival ক্লিক করে জানা যাবে ছবির সময়সূচি।
মঞ্চে নতুন
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নাটকটি লিখেছিলেন গেরহার্ট হাউপ্টমান-এর বিফোর ডন আর প্রফুল্ল রায়ের জনগণ অবলম্বনে— জন্মান্তর। বলতেন, “যা সমসময়ের স্বদেশের ক্ষেত্রেও সত্য বলে প্রত্যয় হয় সেইটাকেই রাখার চেষ্টা করতে হবে অ্যাডাপ্টেশনে।” নব্বইয়ের দশকে লেখা এ নাটক প্রাসঙ্গিক আজও, মত পৌলমী চট্টোপাধ্যায়ের: “আজও মেয়েদের ডাইনি বলে পুড়িয়ে মারা হয়, তাঁদের বাল্যবিবাহ হয়... একটা ভাঙাচোরা বাঁকা আয়নায় নিজেদের মুখ দেখতে কেমন লাগে তা আছে এ নাটকে।” সামগ্রিক পরিকল্পনা ও নির্দেশনা তাঁর, অভিনয়ে তাঁর সঙ্গে দেবদূত ঘোষ ও সহ-অভিনেতারা। ‘শ্যামবাজার মুখোমুখি’-র নতুন প্রযোজনা, দলের ২৭তম জন্মদিন উপলক্ষে রবীন্দ্রসদনে আজ ৩ জুন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।
দু’চাকায়
ভালবাসার সহজ বাহন সাইকেল, অগণিত মানুষের জীবন-জীবিকার প্রাণভ্রমরা। নাগরিক ও পরিবেশগত নানা সঙ্কটে জেরবার এ মহানগরে বাসযোগ্য ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায় পরিবেশবান্ধব সাইকেল, সে কারণেই আজকের দিনটি— ৩ জুন, বিশ্ব সাইকেল দিবস— নিয়ে চর্চা জরুরি। সমাজ ও জননীতির সঙ্গে সাইকেলের সম্পর্ক ও দ্বন্দ্ব নিয়ে এ শহরে চর্চা জারি রেখেছে নাগরিক সংগঠন ‘কলকাতা সাইকেল সমাজ’। সাইকেল ও সমাজ নামে পত্রিকাও প্রকাশ করেন তাঁরা, তৃতীয় সংখ্যাটি বেরিয়েছে এ বছর বইমেলায় (ছবিতে প্রচ্ছদ)। সংগঠনের উদ্যোগে আজ ‘বিশ্ব সাইকেল দিবস’ উদ্যাপন, সকালে সাইকেল র্যালি গৌরীবাড়িতে, বিকেল ৫টায় এলাকার শান্তি ভবনে আলোচনা, নাট্যাভিনয় ও ছবি প্রদর্শন। নীচে ডান দিকের ছবিতে পঞ্চাশের দশকে প্যারিসের রাস্তায় কাপড়ে চোখ বেঁধে পি সি সরকার (সিনিয়র)-এর সাইকেল-চালনা।
প্রত্যাবর্তন
‘প্রেম, পলিটিক্স, পড়াশোনা’... আর ‘প্রতিস্পর্ধা’। ‘স্বপ্নের নাম প্রেসিডেন্সি’। শব্দগুলি লেখা দ্য প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি ম্যাগাজ়িন, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্রিকার প্রচ্ছদে (ছবি)। কয়েক বছরের বিরতি পেরিয়ে সম্প্রতি বেরোল এ পত্রিকা, গত ১৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ কে বসাক মিলনায়তনে হল আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। বিশ শতকাবধি কলকাতার ইতিহাসে এই পত্রিকার এক বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় তখন ভবিষ্যতের গর্ভে। ১৯১৪-১৫ সাল থেকে পত্রিকার সম্পাদক ও পাবলিকেশন সেক্রেটারি ছিলেন যাঁরা, পরবর্তী কালের তাঁদের অনেকে কৃতবিদ্য, বরেণ্য হয়েছেন সমাজে। গুরুত্বপূর্ণ এই তালিকাটি মুদ্রিত হয়েছে সাম্প্রতিক ২০১৯-২০২৩ সংখ্যার শুরুতে। পুনর্মুদ্রিত হয়েছে কলেজের রবীন্দ্র-পরিষদে বলা ‘আচার্য’ রবীন্দ্রনাথের অভিভাষণ, ১৯৫৫-র পত্রিকায় প্রকাশিত অমিয়কুমার বাগচীর নিবন্ধ ‘দ্য মিথ অব দি ওয়েলফেয়ার স্টেট’, এলিয়টকে নিয়ে সুকান্ত চৌধুরীর ১৯৭২-এর লেখা। আর এই সময়ের শিক্ষক-ছাত্রদের লেখা একগুচ্ছ প্রবন্ধ গদ্য পদ্য সমালোচনা, চিত্রকৃতি, আলোকচিত্রও।
বিদায়
পঞ্চাশের দশকে নীতিন বসুর হাত ধরে টালিগঞ্জপাড়ায় শিশুশিল্পী হিসাবে পা রাখা, অভাবের তাড়নায়। সুরঞ্জন রায় পরে অভিনয় করেন দেড়শো খোকার কাণ্ড, অবাক পৃথিবী, রাজা সাজা-র মতো ছবিতে। নান্দীকারের সূচনালগ্নে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যে আসেন, নাট্যকারের সন্ধানে ছ’টি চরিত্র নাটকে বাচ্চা ছেলেটির ভূমিকায় অভিনয় পর পর আশিটা শোয়ে। সারদারঞ্জন রায়ের নাতি, সেই সুবাদে সত্যজিৎ রায়ের আত্মীয় এই মানুষটি পরবর্তী কালে বেশ ক’টি প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাতা, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ও শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে ছবি করেছেন। বই লিখেছেন সিনেমা নিয়ে, পেয়েছেন বিএফজেএ পুরস্কার। সাতাত্তর বছর বয়সে চলে গেলেন সম্প্রতি, দিল্লিতে। গত ৩১ মে বৌবাজারের কেএমডিএ মিলনায়তনে তাঁকে স্মরণ করলেন স্বজন-বন্ধুরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy