কলকাতা পুরসভা
‘কলকাতার ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভা ও কলকাতা পুলিশ পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে কাজ করবে।’— করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন বিধি পালন, কন্টেনমেন্ট জ়োন চিহ্নিতকরণ-সহ একাধিক বিষয়ে পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে এমনই নির্দেশিকা জারি করেছিল নবান্ন। এক বার নয়, একাধিক বার। কোভিডে মৃতের মর্যাদাপূর্ণ সৎকারের ক্ষেত্রেও পুলিশ এবং পুরসভার পারস্পরিক সমন্বয়ের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ‘সমন্বয়’, ‘পারস্পরিক আলোচনা’, এগুলি কি শুধুই অভিধান বা রাজ্য সরকারের জারি করা নির্দেশিকার গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ? সমন্বয়ের বাস্তবায়নে কি কোথাও বড় ‘ফাঁক’ থেকে যাচ্ছে?
কসবায় ভুয়ো ভ্যাকসিন শিবিরের পরে এমন প্রশ্ন উঠছে। অতীতেও বহু ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাবে কী ভাবে বিপাকে পড়েছেন শহরবাসী, সামনে আসছে সে সব তথ্যও। ডেঙ্গি অভিযান, করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, হুকিং অভিযান, সবেতেই এমন একাধিক অভিযোগ।
এক বরো কোঅর্ডিনেটরের বক্তব্য, “ডেঙ্গি অভিযানের সময়ে ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরদের সরেজমিন নিজের এলাকা পরিদর্শনের একটাই কারণ, তা হল, তিনিই ভাল জানেন, কোথায় জল জমে রয়েছে কিংবা কোথায় আবর্জনা পড়ে আছে। রক্তদান বা প্রতিষেধক শিবিরের বিষয়ও কিন্তু তা-ই। অথচ পুলিশ মনে করে ওরাই বেশি জানে।” দক্ষিণ কলকাতার একটি থানার ওসি-র পাল্টা দাবি, “যে কোনও ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি পুলিশেরই কাজ। অনেক ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই করে প্রকৃত বিষয়টা আমরাই পুরসভাকে জানাই। কিন্তু পুরসভা সেটা ভুলে যায়।”
পুরকর্তাদের একটি অংশের মতে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে কে বেশি জানে, সেটা জাহির করাই মুখ্য হয়ে ওঠে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘ধরুন, একটি থানা কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সেই সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট থানা এলাকার পুলিশকর্মীরা ভাল জানবেন, না পুরসভা জানবে? পুরসভা কি এ ক্ষেত্রে থানার দাবিকে নস্যাৎ করে কোনও মতামত দিতে পারে? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দু’তরফেই এই সমস্যাটা হয়। যে কারণে কসবার শিবিরের ক্ষেত্রেও অভিযোগ জমা পড়া সত্ত্বেও থানা তা গোড়ায় উড়িয়ে দিয়েছিল।”
নবান্ন সূত্রের খবর, গত বছরের জুলাইয়ে তৎকালীন অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের জারি করা নির্দেশিকায় সংক্রমণ রোধে কলকাতা পুরসভা ও কলকাতা পুলিশের যৌথ ভাবে কাজ করার কথা বলা হয়েছিল। পুরকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, শুধু অতিমারিই নয়, বেআইনি নির্মাণ ভাঙা, ঝড়বৃষ্টির সময়ে বিপর্যয় সামলানো-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশ ও পুরসভার সমন্বয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তার পরেও পারস্পরিক তথ্যের লেনদেনে যে ‘ঘাটতি’ রয়েছে, তা ভুয়ো শিবিরের ঘটনাতেই প্রমাণ। যদিও কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, এই ঘটনাটি গুরুতর, সে বিষয়ে সংশয় নেই। কিন্তু এর ভিত্তিতে পুলিশ ও পুরসভার সামগ্রিক সমন্বয়কে বিচার করা উচিত হবে না। পুরসভার দু’নম্বর বরোর কোঅর্ডিনেটর সাধন সাহারও বক্তব্য, ‘‘পুরসভা, পুলিশের যৌথ কাজ করার ক্ষেত্রে আমার বরোয় কোনও সমস্যা হয়নি।” ছ’নম্বর বরোর কোঅর্ডিনেটর সঞ্চিতা মণ্ডল বলছেন, ‘‘থানার সঙ্গে যৌথ ভাবেই কাজ করি।’’
কসবার সংশ্লিষ্ট এলাকার বরো কোঅর্ডিনেটর সুশান্ত ঘোষ বলছেন, ‘‘ঘটনাটি দ্রুত পুলিশ, পুরসভাকে জানানো হয়েছিল। অভিযুক্ত সে দিনই গ্রেফতার হয়েছে, এটাই বড় কথা।’’
তবু পুলিশ এবং পুরসভার সমন্বয় থাকলে প্রতারক আরও আগে কি ধরা পড়ত না? এ প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy