প্রতীকী ছবি।
‘‘আপনার একটা চোখের তো ছবি উঠছে না। চোখটা কি খারাপ?’’
উত্তরটা ‘হ্যাঁ’ হতেই সেই কর্মীর বক্তব্য ছিল, ‘‘তা হলে তো আপনার আধার কার্ড হবে না।’’
চোট পেয়ে একটি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে আধার কার্ড করাতে গিয়ে প্রথমে এমনটাই শুনতে হয়েছিল শুভম রায়কে (নাম পরিবর্তিত)। পরে অবশ্য ‘ইউআইডিএআই’-এর কর্তাদের হস্তক্ষেপে আধার কার্ড হয় শুভমের।
শুভমের কথায়, ‘‘যন্ত্র দিয়ে আমার দু’চোখের ছবি তুলে কম্পিউটারে তা সেভ করার পরে ওই কর্মীকে কিছু ‘অপশন’ দেখিয়ে এক কর্তা জানিয়ে দেন, কারও চোখ নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকলে আধার কার্ডের জন্য কী ভাবে ছবি তুলতে হয়। তিনি এটাও জানিয়ে দেন, পরবর্তী কালে বায়োমেট্রিক পরীক্ষা হলে ওই আধার কার্ডই জানিয়ে দেবে, গ্রাহকের ওই চোখের কতটা অংশ খারাপ।’’
ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই) কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, চোখ বা হাত না থাকলেও কাউকে আধার কার্ডের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। কোনও ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাই আধার কার্ড করানোর ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে না। সেই জন্য নিয়ম অনুযায়ী, শয্যাশায়ী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে তাঁদের বাড়িতে গিয়েই আধার কার্ড করাতে হয়। ইউআইডিএআই-এর এক কর্তা জানান, এ রাজ্যে অনেকের ক্ষেত্রেই সরকারি কর্মীরা সমস্ত যন্ত্রপাতি নিয়ে বাড়িতে গিয়ে আধারের জন্য তথ্য সংগ্রহ করে এনেছেন।
বাস্তবে অবশ্য সব সময়ে সরকারি নিয়ম মানা হচ্ছে না। এমনটাই অভিযোগ বহু গ্রাহকের। কারও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলে তাঁর হাতের ও চোখের ছবি কী ভাবে তুলতে হবে, সেই পদ্ধতিই জানা নেই নিচু স্তরের বহু কর্মীর। সেই জন্যই ‘আপনার আধার কার্ড হবে না’ জাতীয় কথা বলে দেন তাঁরা। কারও কারও ক্ষেত্রে আবার বায়োমেট্রিক নিয়েও তথ্য ঠিকমতো নথিভুক্ত করতে না পারায় আধার কার্ড হচ্ছে না। যেমন হয়েছিল শুভমের ক্ষেত্রে।
আধার কার্ড সম্পর্কিত বড় ধরনের জটিলতা দেখা দিলে তা মেটাতে যেতে হয় রাঁচীতে, ইউআইডিএআই-এর আঞ্চলিক সদর দফতরে। এ রাজ্যের বাসিন্দাদের অনেককেই রাঁচীতে যেতে হয়েছে। একটি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শুভমকেও আধার কার্ড করাতে যেতে হয়েছিল সেখানে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, আধার নথিভুক্ত করার যে কোনও কেন্দ্রেই এটা হওয়ার কথা।
শুভম জানান, তাঁর একটি চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই কারণে রাঁচীতে যখন বায়োমেট্রিক ছবি তোলা হচ্ছিল, তখন ওই চোখের মণিটি কম্পিউটারের পর্দায় পুরো কালো দেখাচ্ছিল। তাই তাঁর চোখের তথ্য নিচ্ছিল না কম্পিউটার।
এর পরেই সমস্যার সমাধানে আসেন ইউআইডিএআই-এর এক কর্তা। তিনি বিশেষ একটি ‘অপশন’ দিতেই কম্পিউটার তা সেভ করে নেয়। কিছু দিন পরে আধার কার্ডও পেয়ে যান শুভম। তাঁর কথায়, ‘‘রাঁচীর কর্তারাই বলেছিলেন, প্রাণটুকু থাকলেই আধার কার্ড করা সম্ভব। শুধু কী করে করতে হয়, সেই প্রশিক্ষণটুকু জরুরি।’’
প্রশিক্ষণের সেই অভাবেরই মাসুল দিতে হচ্ছে অনেককে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy