ফাইল চিত্র।
শীত বিদায় নিতেই মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। গত বছর শহরে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ায় বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে করোনার প্রকোপ থাকাকালীন ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব সে ভাবে দেখা যায়নি। পুর স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-এ কলকাতায় ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় ৭১৫ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২০২১ সালে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২৮৭। অর্থাৎ, ২০১৯-এর তুলনায় ২০২১-এ ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছ’গুণ বেড়েছিল।
গত বুধবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষের বাজেট ঘোষণা করেছেন। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৭০.০৬ কোটি টাকা। মশাবাহিত রোগ দূরীকরণে বরাদ্দ ৩১ কোটি টাকা। পুর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০-’২১ সালে ওই খাতে পুরসভা ২০ কোটি টাকা খরচ করেছিল। ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ কোটি টাকা। মশা নিয়ন্ত্রণে পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। এন্টালিতে মশা নিয়ে গবেষণার জন্য তৈরি হয়েছে ল্যাবরেটরি। শহরবাসীর অবশ্য প্রশ্ন, বরাদ্দ বাড়িয়েও মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন?
পুর স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০২০-তে করোনার সংক্রমণ রুখতে সর্বত্রই জীবাণুনাশের কাজ চলায় ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার প্রকোপও তেমন ছিল না। পুর পরিসংখ্যান এ-ও বলছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২০২১ সালে ৫৯ শতাংশ কমেছে। ২০১৯ সালে শহরে ডেঙ্গি হয়েছিল ৬০০৭ জনের। ২০২১-এ তা কমে দাঁড়ায় ২৪৪৯-এ। ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা গত বছর অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় চিন্তা বেড়েছে পুরসভার। বুধবারের বাজেট বিবৃতিতে মেয়রও ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির বিষয়টি ভাবনায় রয়েছে। সম্ভাব্য কারণগুলি চিহ্নিত করে সমস্যা মেটানোর পথ বার করতে চেষ্টা চালাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।’’
পুর চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্লাসমোডিয়াম বর্গের এককোষী পরজীবীর মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। সব থেকে বেশি বিপজ্জনক প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম, যা থেকে মৃত্যুও হতে পারে। পুরসভা সূত্রের খবর, গত বছর চার, পাঁচ, ছয় এবং সাত নম্বর বরো, অর্থাৎ বড়বাজার, পোস্তা, গিরিশ পার্ক, কলেজ স্ট্রিট, শিয়ালদহ, বৌবাজার, এন্টালি, তালতলা, পার্ক সার্কাস, এসপ্লানেড, তিলজলা, তপসিয়া ও পার্ক স্ট্রিটের মতো বিভিন্ন এলাকায় ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল বেশি। পুর স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ওই চারটি বরোয় অনেক পরিযায়ী শ্রমিক ফুটপাতে থাকেন। বেশির ভাগই মশারি ছাড়া ঘুমোন। এঁদের মধ্যে অনেকের ম্যালেরিয়া হলেও তাঁরা ওষুধের পুরো কোর্স করেন না। আমরা মানুষকে সতর্ক হতে বার বার বলছি।’’
শীত বিদায় নিতেই পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগকে মশা নিয়ন্ত্রণে পুরোদমে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘যে সব কর্মী পথে নেমে কাজ করেন, গত দু’বছরে করোনার জন্য তাঁরা ব্যস্ত ছিলেন। এ বার শহরে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy