প্রতীকী ছবি।
ফের ডেঙ্গিতে মৃত্যু হল শহরে। শুক্রবার সকালে মৃত্যু হয় নাকতলার বাসিন্দা এক তরুণীর। দেবপ্রিয়া রায় নামে বছর আটাশের ওই তরুণীর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি পজ়িটিভ এসেছিল। ৭ সেপ্টেম্বর তাঁকে বেহালার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ দিন ভোরে সেখানে মারা যান দেবপ্রিয়া। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি শকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হওয়ার উল্লেখ রয়েছে। এই নিয়ে গত দু’দিনে বালি ও কলকাতা মিলিয়ে ডেঙ্গিতে চার জনের মৃত্যু হল।
এ দিকে গত দু’মাস ধরে কলকাতা পুরসভার ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক বাসিন্দাও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি অনেকেই। বৃহস্পতিবার ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৌমিতা মুখোপাধ্যায় যখন মারা গিয়েছিলেন, তখনও জানা ছিল না যে ওই দুপুরেই একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা আরও এক জনের মৃত্যু হয়েছে।
দক্ষিণ কলকাতার এক হাসপাতালে বৃহস্পতিবার মারা যান কায়স্থপাড়ার বাসিন্দা মৌমিতা মুখোপাধ্যায় (৪০)। ওই দুপুরেই বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় উত্তর পূর্বাচলের বাসিন্দা অনুরাগ মালাকার (৩৭) নামে এক যুবকের। চলতি মরসুমে এই নিয়ে কলকাতায় ডেঙ্গিতে মৃত দাঁড়াল পাঁচ।
পুর তথ্য বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শহরে ডেঙ্গি আক্রান্ত ৭৯৪। গত এক সপ্তাহেই ২১৬ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। একই ওয়ার্ডে দু’টি মৃত্যু নিয়ে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের বক্তব্য, ‘‘এনএসওয়ান পজ়িটিভ হলেও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন মৌমিতা। মারা যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে পরিজনদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। ওঁর হার্টের সমস্যা ছিল, তাই এক ঘণ্টায় তিন বার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। মৌমিতার ডেথ সার্টিফিকেটে ‘ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট উইথ এনএসওয়ান পজ়িটিভ’ লেখা ছিল। সব রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরে পাঠাচ্ছি। তবে অন্য জন ডেঙ্গিতেই মারা গিয়েছেন।’’ যার প্রেক্ষিতে চিকিৎসকদের একাংশ যদিও মনে করছেন, পুরসভা ফের দায় এড়ানোর পুরনো খেলা শুরু করেছে।
অন্য দিকে মৌমিতার স্বামী জয় মুখোপাধ্যায় শুক্রবার বলেন, ‘‘আমার স্ত্রীর হার্টের সমস্যা ছিল না। ছোট ছেলেরও ডেঙ্গি হয়েছে। সে এখন হাসপাতালে ভর্তি। প্রশাসনের কাছে আবেদন, মশাবাহিত রোগ দমনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজ়েন্টেটিভ অনুরাগ ১৮ অগস্ট থেকে জ্বরে ভুগছিলেন। মা, স্ত্রী ও শিশুপুত্র নিয়ে থাকতেন উত্তর পূর্বাচলে। বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষায় তাঁর ডেঙ্গি পজ়িটিভ আসে। ৪ সেপ্টেম্বর ফের জ্বর আসে। ৬ তারিখে বাইপাসের এক হাসপাতালে ভর্তি হন অনুরাগ। স্থানীয় কাউন্সিলর অরিজিৎ দাসঠাকুরের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গি আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পুরসভাকে দেওয়া হয়। যে ল্যাবে অনুরাগের রক্ত পরীক্ষা হয়েছিল, তারা পুরসভাকে জানায়নি।’’ পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী মঙ্গলবার ১২ নম্বর বরো অফিসে সব কাউন্সিলর, আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য)।
কায়স্থপাড়া, উত্তর পূর্বাচলে শুক্রবার গিয়ে দেখা গেল, এলাকায় জঞ্জাল পড়ে। মৌমিতার বাড়ির পিছনে মাঠের পাশেই জঞ্জালের স্তূপ। তার পাশেই জলাজমি ভরে কচুরিপানায়। কায়স্থপাড়ার এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘দু’মাস ধরে ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে। পুরসভা আগে থেকে সতর্ক হলে এটা হত না।’’
উত্তর পূর্বাচলে ডেঙ্গি আক্রান্ত আরও বেশি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুর স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে যান। মশা মারার তেল দেন না। পুর স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, অনুরাগের বাড়ির পিছনে ময়লা জমে থাকায় ১৬ অগস্ট পুরসভা নোটিস দিয়েছিল। কাউন্সিলরের দাবি, জঙ্গল কাটা হয়। তবে ১২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ মানছেন, ‘‘জঞ্জাল পরিষ্কারের জন্য যত কর্মী থাকার কথা, তত নেই।’’
অতীনের দাবি, ‘‘মশাবাহিত রোগ দমনে পুরসভা কাজ করে। যেখানে মশার লার্ভা মিলবে সেখানেই তেল ছড়ানো হয়। মানুষের সচেতনতা জরুরি। জল জমা, ময়লা পরিষ্কার নিয়ে পুরসভা নোটিস পাঠালেও আমল দেওয়া হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy