Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mountaineer

৫০ লক্ষের ঋণ কাঁধেই বিনা সিলিন্ডারে জোড়া অভিযান পিয়ালির

একটি ফিল্ম সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত অ্যাডভেঞ্চার ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পর্বতারোহণের ছবি দেখানোর সঙ্গে ‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস’-এর কয়েক জন কৃতীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

অদম্য: কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে পর্বতারোহী পিয়ালি বসাক। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

অদম্য: কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে পর্বতারোহী পিয়ালি বসাক। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

স্বাতী মল্লিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ ০৭:০৬
Share: Save:

অধিক উচ্চতাতেও নির্মেদ, দোহারা চেহারার তরুণীটির শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে না— এটাই ‘ইউএসপি’ চন্দননগরের পাহাড়ি কন্যার। তার জোরেই তুষারঝড়ের মধ্যে এভারেস্টে ওঠার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। বিনা অক্সিজেন সিলিন্ডারে পৌঁছেছেন ধৌলাগিরি। একে একে ছুঁয়েছেন নেপালের চার আট হাজারি শীর্ষ। এ বারও সেই সিলিন্ডারের সাহায্য ছাড়াই অন্নপূর্ণা-মাকালু জোড়া অভিযানের পথে এগোচ্ছেন চন্দননগরের পিয়ালি বসাক। শনিবার প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, ‘‘এভারেস্ট-লোৎসে অভিযানে প্রচুর মানুষ সাধ্যমতো সাহায্য করেছিলেন। এ বারেও সকলের কাছে সাহায্যের আবেদন রাখছি।’’

এ দিন নৈহাটির একটি ফিল্ম সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত অ্যাডভেঞ্চার ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পর্বতারোহণের ছবি দেখানোর সঙ্গে ‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস’-এর কয়েক জন কৃতীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে বছর বত্রিশের পিয়ালি জানান, কী ভাবে ২০১৩ সালে ভাগীরথী-২ শৃঙ্গাভিযানের মধ্যেই শুরু হয় উত্তরাখণ্ডের ভয়াবহ মেঘ ভাঙা বৃষ্টি। প্রাণ হাতে করে নীচে নামার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগে গত বছর, এভারেস্টের তুষারঝড়ে। এ বারও স্রেফ সেই মনের জোরে ৩১ লক্ষ টাকার জোড়া অভিযানে ১৩ তারিখ নেপালে যাচ্ছেন পিয়ালি। বলছেন, ‘‘মাত্র দু’লক্ষ টাকা জোগাড় হয়েছে। এখন ক্রাউড ফান্ডিং ভরসা। তবু পাহাড়কে ছাড়তে পারিনি।’’

মানাসলু (২০১৮ সাল), ধৌলাগিরি (২০২১), এভারেস্ট-লোৎসে (২০২২), নেপালের দিক থেকে প্রথম চো ইউ অভিযান (২০২২)— একের পর এক আট হাজারি অভিযানে পিয়ালির ঘাড়ে চেপেছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার ঋণ। সেই সঙ্গে শয্যাশায়ী বাবার চিকিৎসা, মধ্যবিত্ত পরিবারকে টানার চাপ। এভারেস্টজয়ীর তকমা মিললেও সরকারি অর্থসাহায্য মেলেনি এখনও। বড়সড় স্পনসরও জোটেনি। পেশায় প্রাথমিক স্কুলশিক্ষিকা পিয়ালি এখন খুঁজছেন একটি ‘ভাল চাকরি’। বলছেন, ‘‘বাবার দেখাশোনা, স্কুল, সংসারের চাপে ট্রেনিং, খাওয়াদাওয়াও নিয়মিত হয় না। তবু পাহাড়ে গেলে সবটা ঠিকঠাক হয়ে যায়।’’ সমালোচনাও দমাতে পারছে না তাঁকে। একরোখা পিয়ালির পাল্টা দাবি, ‘‘মেয়ে পর্বতারোহীদের প্রতিভা থাকলেও আগে ততটা এগোতে দেওয়া হত না তাঁদের। এখন মেয়েরা পরিবারের থেকেও সাহায্য পাচ্ছেন, তাই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে শৃঙ্গজয়ের স্বপ্ন সফল করতে পারছেন।’’

তবু অন্নপূর্ণার (৮০৯১ মিটার) মতো বিপজ্জনক শৃঙ্গে নজর কেন? পিয়ালি জানান, অন্নপূর্ণা উচ্চতায় দশম হলেও ধসপ্রবণ। সেখানে মৃত্যুর হার বেশি, সফল সামিটের সংখ্যাও কম। কিন্তু এর অভিযানের সময় মার্চ-এপ্রিল, ফলে নীচে নেমে মাকালু যাওয়ার যথেষ্ট সময় থাকবে হাতে। এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত পর্বতারোহী দেবাশিস বিশ্বাসের ব্যাখ্যা, ‘‘অন্নপূর্ণার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্যাম্পের মাঝের রাস্তাটুকু অতিরিক্ত ধসপ্রবণ। ওই রাস্তাটা কোনও ভাবে এড়িয়ে গেলে বিপদ তেমন হওয়ার কথা নয়। অন্নপূর্ণার উচ্চতাও বেশি নয়, ফলে পিয়ালির বিনা সিলিন্ডারে খুব অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না। তুলনায় মাকালু (৮৪৮১ মিটার) বেশি টেকনিক্যাল। তবে, গত কয়েক বছরে বেশ ভাল আট হাজারি অভিজ্ঞতা হয়েছে ওর। তাই আমি আশাবাদী।’’ পর্বতারোহী দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বিনা সিলিন্ডারে জোড়া অভিযানে পিয়ালি সফল হলে তা বিশাল কৃতিত্বের। তবে, যদি পথে সিলিন্ডারের ব্যবহার করতেও হয়, তা নিয়ে পরে যেন কোনও সংশয়ের অবকাশ না রাখে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mountaineer Mount Everest Chandannagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy