—প্রতীকী চিত্র।
‘ডান্স মুভমেন্ট থেরাপি’ (ডিএমটি), যার সঙ্গে মূলত সম্পর্ক রয়েছে ছন্দের। স্ট্রোকের রোগী, কোমা থেকে ফেরা রোগী, দেহ অসাড় হওয়া রোগী বা পার্কিনসনিজ়ম-সহ বেশ কিছু স্নায়ুরোগে ডিএমটি সহায়ক। কিন্তু এর বাইরে ডিএমটি-র কার্যকারিতা এ দেশে ততটা প্রচারের আলো পায়নি।
বিশেষ ভাবে সক্ষমদের পরিচর্যায় ডিএমটি-র ভূমিকা সামনে এসেছে দীর্ঘ গবেষণায়। বিশেষ করে অটিজ়ম স্পেকট্রাম ডিজ়অর্ডার, ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তদের ক্ষেত্রে মোটর দক্ষতায়, আচরণে, আবেগে এবং সামাজিকতার বিকাশে ডিএমটি ইতিবাচক বদল আনে। তবে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের এই চিকিৎসা ব্যবস্থা এ দেশে তেমন নেই। ডিএমটি-র ডিপ্লোমা কোর্স আগে শুরু করেছিল টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস (টিআইএসএস)। তবে তা শুধুমাত্র সমাজের মূল স্রোতের জন্য।
এই জায়গাতেই এগিয়ে এসেছে শহরের একটি অলাভজনক সংস্থা। গত ন’বছর ধরে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জোট বেঁধে ডিএমটি-র উপরে গবেষণা, রোগের শনাক্তকরণ, ভবিষ্যৎ পরিকাঠামো তৈরি করছে তারা। যার স্বীকৃতিতে গত বছর নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতর পুরস্কৃত করেছে তাদের।
অটিজ়ম কী? নিউরোডাইভারজেন্ট কারা? তাঁদের চেনাতে ওই সংস্থার উদ্যোগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি ইনডাকশন প্রোগ্রাম হয়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষক-অধ্যাপকেরাই ছিলেন পড়ুয়া। উচ্চশিক্ষা লাভের পরে অনেক অটিস্টিকই শিক্ষা ক্ষেত্রে বা উচ্চ পদে কাজ করছেন। তাঁদের সঙ্গে যাতে শিক্ষাকর্মীদের মতান্তর না হয়, অটিস্টিকদের বুঝতে সহজ হয়, তাই এই পদক্ষেপ।
৮০ বছর আগে নৃত্যশিল্পী মারিয়ান চেসের হাতে আমেরিকায় সূচনা হয়েছিল ডিএমটি-র। ওয়াশিংটনে নাচের স্কুল খোলার পরে শিক্ষার্থীদের উপরে এর প্রভাব বুঝতে শুরু করেন তিনি। স্থানীয় চিকিৎসকেরা রোগীদের সেখানে পাঠান। রোগীরা কী সুবিধা পাচ্ছেন, বুঝতে পেরে মারিয়ানকে ওয়াশিংটনের সেন্ট এলিজ়াবেথ হাসপাতালে কাজ করতে বলা হয়। ১৯৬৬ সালে তিনি আমেরিকান ডান্স থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি হন। সত্তরের দশকে শুরু হয় ডিএমটি-র সাইকোথেরাপিউটিক প্রয়োগ নিয়ে পরীক্ষা।
সেই পথেই হাঁটছেন চিকিৎসক অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায়। আমেরিকার মিসৌরির ‘টমসন সেন্টার ফর অটিজ়ম’-এ শিশুরোগ বিভাগে যুক্ত থাকাকালীন অটিজ়মের চিকিৎসায় জুড়ে যান তিনি। তখনই তাঁর সামনে এসেছিল অটিজ়মে ডিএমটি-র প্রভাব। এসএসকেএমের ফিজ়িয়োলজির শিক্ষক-চিকিৎসক অদিতিরই মস্তিষ্কপ্রসূত, ‘সাম্য ফাউন্ডেশন’ নামে ওই সংস্থা। ২০০৮ সালে আমেরিকায় ছেলের জন্মের পরে নিজেই শনাক্ত করেন, সে অটিস্টিক। সংসারে ভাঙন ধরে। ছেলেকে নিয়ে দেশে ফিরে শুরু হয় দীর্ঘ লড়াই। পাশে পেয়েছেন বাবা-মা ও ভাইকে।
কী ভাবে ছেলের অটিজ়ম শনাক্ত করেছিলেন? প্রথমে ছেলে কথা বলা শুরু করলেও হঠাৎই চুপ করে যায়। খেলনা গাড়ি না চালিয়ে তা উল্টে চাকা ঘোরাত সে। এই সব দেখে দেরি না করে অদিতি ছেলের ডিএমটি থেরাপি শুরু করেন। অটিস্টিক ও অন্যান্য বিশেষ ভাবে সক্ষমদের একাগ্রতা, পারিপার্শ্বিক সচেতনতা, নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেওয়ার প্রবণতা, সরাসরি চোখের দিকে তাকানোর প্রবণতা বাড়ায় ডিএমটি।
২০১৫ সালে শুরু হয় ‘সাম্য ফাউন্ডেশন’। ডিএমটি নিয়ে গবেষণায় তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় ‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব মাইনস, ধানবাদ’। ২৫০ জন এই সংস্থা থেকে ডিএমটি-র পরিষেবা পাচ্ছে। সপ্তাহে দু’দিন বিনামূল্যের ক্লিনিকে অটিজ়ম শনাক্ত হয়।
গত বছর থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনের সঙ্গে শুরু গবেষণালব্ধ ‘সাম্য মডেল অব ডান্স মুভমেন্ট থেরাপি’র কোর্স। ছ’মাসের পাঠক্রমে শংসাপত্র দেয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। স্পিচ থেরাপিস্ট, ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট, সাইকোলজিস্ট, এমনকি, চিকিৎসক ও অটিস্টিকদের অভিভাবকেরাও এতে অংশ নিচ্ছেন।
অদিতির কথায়, ‘‘অটিস্টিকদের ভিড় এবং আওয়াজে বিভিন্ন সমস্যা হয়। তা কাটাতে নানা ধরনের যৌথ প্রশিক্ষণ (গ্রুপ থেরাপি) চলে। তারই একটি হল, ভিড় তৈরি করে তার মধ্যে দিয়ে এলোমেলো হেঁটে যাওয়া। প্রথম দিকে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে সিঁটিয়ে যায়। প্রশিক্ষণ ধীরে ধীরে পরিবর্তন ঘটায়। দলগত প্রশিক্ষণে মনোযোগ ও ধৈর্য বাড়ে।’’
ওই সংস্থায় অটিজ়ম, ডাউন সিনড্রোম, সিজ়ার ডিজ়অর্ডার, সেরিব্রাল পলসি আক্রান্তদের পাশাপাশি দৃষ্টি বা শ্রবণের প্রতিবন্ধকতা আছে, এমন বাচ্চাদেরও প্রশিক্ষণ চলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy