মৃত রঞ্জন বসু। —নিজস্ব চিত্র।
সকালে শুনশান আবাসনে ভারী কিছু উপর থেকে নীচে পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেয়েছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। শব্দ শুনে তড়িঘড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে তাঁরা দেখেন, আবাসনের নীচে পড়ে রয়েছেন এক প্রৌঢ়। তাঁর মাথা, মুখ থেঁতলে গিয়েছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে আশপাশ। দ্রুত রক্ষীরা আবাসনের অন্য বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশকে খবর দেন। রবিবার সকাল ছ’টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব যাদবপুর থানা এলাকার মুকুন্দপুর সংলগ্ন একটি আবাসনে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম রঞ্জন বসু (৬৬)। ওই আবাসনেই থাকতেন তিনি। দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পূর্ব যাদবপুর থানার পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, উপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই প্রৌঢ়।
ওই আবাসনে একাধিক টাওয়ার রয়েছে। জানা গিয়েছে, আবাসনের ১-ই ব্লকের ১৪তলায় স্ত্রীর সঙ্গে থাকতেন রঞ্জন। বিএসএনএলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী। ওই দম্পতির এক মেয়ে আছেন। তিনি কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকেন। ২০১৮ সাল থেকে ওই বহুতলে সপরিবার থাকতেন রঞ্জন। গত ২০ নভেম্বর দিল্লিতে মেয়ের কাছে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী। ফলে, বাড়িতে একাই ছিলেন প্রৌঢ়। এ দিন সকালে আবাসনের নীচ থেকে উদ্ধার হয় তাঁর রক্তাক্ত দেহ। আবাসন সমিতির সম্পাদক নীলাঞ্জন মৈত্র বলেন, ‘‘সকালে নিরাপত্তারক্ষীর অফিস থেকে আমার কাছে ফোন আসে। ওই নিরাপত্তারক্ষী জানান, এক জন ঝাঁপ দিয়েছেন। তা শোনার পরেই আমি দ্রুত পুলিশকে খবর দেওয়ার কথা বলি। আমরা নীচে নেমে আসতে আসতেই দেখি, ততক্ষণে পুলিশ চলে এসেছে।’’
একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পূর্ব যাদবপুর থানার পুলিশ। তদন্তে পুলিশ জানতে পেয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে স্নায়ুর রোগে ভুগছিলেন রঞ্জন। মল্লিকবাজারের একটি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। ইদানীং কারও সঙ্গে তেমন কথা বলতেন না প্রৌঢ়। নিজেকে কার্যত ঘরবন্দি করে রাখতেন। ওই বহুতলের অন্য আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা আরও জেনেছেন, আবাসনের ছাদ সব সময়ে বন্ধই থাকত। তাই ছাদ থেকে যে ওই প্রৌঢ় ঝাঁপ দেননি, তা নিয়ে এক প্রকার নিশ্চিত তাঁরা। তবে, আবাসনের ১৭তলায় সামনের অংশের একটি জানলার একাংশ খোলা অবস্থায় দেখা গিয়েছে। সেখানে এক জোড়া জুতোও মিলেছে। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা মনে করছেন, সেখান থেকেই ওই প্রৌঢ় ঝাঁপ দিয়ে থাকতে পারেন। তবে, নিশ্চিত হতে আবাসনের নীচের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই প্রৌঢ়ের ঘর খতিয়ে দেখেছে পুলিশ। সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে ওষুধ মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। রঞ্জনের স্ত্রী ও মেয়েকে খবর পাঠানো হয়েছে। তাঁদের সঙ্গেও কথা বলতে চান তদন্তকারীরা।
তবে গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত বহুতলের অন্য আবাসিকেরা। ওই প্রৌঢ়ের পরিবারে কোনও অশান্তি ছিল কি না, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি প্রতিবেশীরা। রঞ্জন প্রতিবশীদের সঙ্গে কম কথা বললেও তাঁর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেননি বলে দাবি করছেন তাঁরা।
এক আবাসিকের কথায়, ‘‘দিন দুয়েক আগে বাজার করে ফেরার সময়ে দেখা হয়েছিল। ভাল-মন্দ জিজ্ঞাসা করে চলে গেলেন। আর কোনও কথা বলেননি। তবে কোনও অস্বাভাবিকতা লক্ষ করিনি।’’ এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। তবে গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy