Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

Mamata Banerjee: স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করাতে ভোগান্তি, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ

কোন্নগর পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের সি এস মুখার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা মিহিরবাবুর স্ত্রী প্রয়াত হয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:৫৪
Share: Save:

‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের ছবি তোলার ডাক কবে আসবে?’— পুরসভায় গিয়ে প্রশ্ন করায় বৃদ্ধকে শুনতে হত, ‘কম্পিউটারে আপডেট নেই।’ একাধিক বার আবেদনপত্র পূরণ করলেও কী কারণে কার্ড আটকে আছে, তা বুঝতে পারতেন না কোন্নগরের বাসিন্দা, বছর তিরাশির মিহির গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, এমনও শুনতে হয়েছে, ‘স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে খোঁজ করুন।’ কিন্তু অসুস্থ শরীরে সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে খোঁজ করা সম্ভব ছিল না বৃদ্ধের পক্ষে। শেষে এক পরিচিতের মাধ্যমে তাঁর হয়রানির খবর পৌঁছয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তার পরেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের ব্যবস্থা করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

তবে এটাই প্রথম নয়, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে এমন হয়রানির ঘটনা আকছার ঘটছে বলেই শোনা যায়। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, ‘‘বিষয়টি কাম্য নয়।’’ যদিও সব দেখেশুনে মিহিরবাবুর বিস্ময়, ‘‘একটা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেতে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত যেতে হল! যাঁদের সেই উপায় নেই, তাঁরা কি প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না?’’

কোন্নগর পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের সি এস মুখার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা মিহিরবাবুর স্ত্রী প্রয়াত হয়েছেন। তিনি জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প প্রথম চালু হওয়ার সময়ে স্থানীয় পুর প্রতিনিধির সাহায্যেই আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ছবি তোলা এবং আঙুলের ছাপ নেওয়ার ডাক আসেনি। মিহিরবাবু বলেন, ‘‘দায়িত্বে থাকা পুর আধিকারিককে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এই সংক্রান্ত আপডেট আসেনি।’’ এর মধ্যে মিহিরবাবুর বড় দাদাও তাঁর মেয়ের সঙ্গে প্রকল্পে যুক্ত হয়ে গিয়েছেন।

অভিযোগ, কয়েক মাস পরে ফের ওই আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তখন সেই তথ্য আপডেট না হওয়ার কারণ জানান। এর পরে ২০২১ সালের অগস্টে মেয়ে বিপাশা চক্রবর্তীর স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে নিজের নাম অর্ন্তভুক্ত করতে স্থানীয় পুর প্রতিনিধির সাহায্যে ফের আবেদন করেন মিহিরবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘তাতেও কিছু হল না। কারণ জানতে পুরসভায় গেলে বলা হয়, স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে খোঁজ নিতে। ওঁরা এক বারও বয়সের কথা ভাবলেন না। এত বড় স্বাস্থ্য ভবনে কার কাছেই বা গিয়ে খোঁজ নেব?’’ এর পরে নভেম্বরে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মিহিরবাবু।

তিনি জানাচ্ছেন, গত ২১ জানুয়ারি তাঁর এক পরিচিত মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানোর কিছু ক্ষণের মধ্যেই খাস স্বাস্থ্য ভবন থেকে ফোন করে সবটা জানা হয়। ১০ মিনিটের মধ্যেই হুগলির সদর দফতর থেকে জানানো হয়, শ্রীরামপুর শাখা কার্যালয় থেকে যোগাযোগ করা হবে। এর পরে মেয়ের কার্ডে মিহিরবাবুর নাম যুক্ত করতে কর্মীরা বাড়িতে যাচ্ছেন বলে জানান চুঁচুড়া অফিসের আধিকারিকেরা। বছরখানেক ধরে যা ঝুলে ছিল, তার নিষ্পত্তি হয় কয়েক ঘণ্টায়। বিপাশা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মানুষকে সাহায্য করতে চাইলেও প্রশাসনের নিচুতলার কর্মীদের সদিচ্ছার অভাব স্পষ্ট।’’

মিহিরবাবুর প্রশ্ন, ‘‘মেয়ের কার্ডে যে নাম যুক্ত করা যাবে, সেটা কি আগে বলা যেত না? যাঁদের বাড়িতে মহিলা সদস্য নেই, তাঁরা কি প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না?’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘নিশ্চয়ই পাবেন। পরিবারের মহিলাদের নামে কার্ড করার বিষয়ে একটি নিয়ম করা হয়েছে। কিন্তু কোনও পুরুষ সদস্য যদি একা থাকেন বা দু’তিন জন থাকেন, তা হলেও কার্ড করা যাবে। কেউ দাদা-বৌদির সংসারে থাকলে বৌদির কার্ডেও নাম অর্ন্তভুক্ত করা যাবে।’’ স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের মতে, নিয়ম থাকলেও স্থানীয় স্তর থেকে অনেক ক্ষেত্রে সেগুলি স্পষ্ট করে জানানো হয় না বলেই জটিলতা তৈরি হয়।

মিহিরবাবু আরও বলেন, ‘‘বাড়ি এসে ছবি তোলানো হয়ে যাওয়ার পরে সেই খবর পান পুরসভার ওই কর্মী। তখন তিনি জানান, আগেই নাকি নাম সংযুক্ত করা ছিল। তা হলে স্বাস্থ্য ভবনে কেন যেতে বলেছিলেন, জানি না।’’ তবে কোন্নগর পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান তন্ময় দেব বলছেন, ‘‘মাস তিনেক হল দায়িত্ব নিয়েছি। কী হয়েছে, জানি না। তবে পরিষেবা পেতে কাউকে যেন হয়রানির মুখে পা পড়তে হয়, সে দিকে লক্ষ রাখব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Swasthya Sathi Card Konnagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy