কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সুনীল মন্ডল ও অমিত শাহ।
তৃণমূল ছেড়ে সদ্য বিজেপি-তে যোগদানকারী সাংসদ সুনীল মণ্ডলের গাড়ির উপর ‘হামলা’ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখলেন বিজেপি-র পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। শনিবার সকালে সুনীল যখন হেস্টিংসে বিজেপি-র নির্বাচনী কার্যালয়ে আসছিলেন, তখন তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে তৃণমূলের কিছু সমর্থক-কর্মী বিক্ষোভ দেখান বলে অভিযোগ। কালো পতাকাও দেখানো হয়। সুনীলের গাড়ি কিছুক্ষণের জন্য আটকেও পড়ে। তার পর অবশ্য পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে গাড়ি যাওয়ার রাস্তা করে দেয়।
কৈলাস কালক্ষেপ না করে ওই ঘটনার কথা জানিয়ে অমিতকে চিঠি লেখেন। পাশাপাশিই তিনি ফোনেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। বিজেপি সূত্রের খবর, কৈলাস কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে যে আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ। সুনীলের গাড়ির উপর ‘হামলা’র অভিযোগের পাশাপাশি কিছুদিন আগে ডায়মন্ড হারবার যাওয়ার পথে বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডার গাড়ির উপর হামলার ঘটনাও জুড়ে দিতে চাইছে রাজ্য বিজেপি। দু’টি ঘটনাকেই ‘দৃষ্টান্ত’ হিসেবে তুলে ধরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন কৈলাস।
শনিবার দুপুরে শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি-তে যোগ দেওয়া অন্য নেতাদের হেস্টিংসের দফতরে আসার কথা ছিল এক সংক্ষিপ্ত বৈঠক এবং সংবর্ধনা কর্মসূচির জন্য। তার আগেই সেখানে মঞ্চ বেঁধে একটি বিক্ষোভ সভা করছিল তৃণমূল। সেখান থেকেই গোলমালের সূত্রপাত। বিজেপি দফতরে সুনীলের গাড়ি আসতে গেলে সেটিকে আটকে দেওয়া হয়। কালো পতাকাও দেখানো হয়। সঙ্গে চলে অবিরত স্লোগান। ঘটনাস্থলে তৃণমূল-বিজেপি’র মধ্যে ধস্তাধস্তি বেধে যায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। বাড়তি পুলিশও মোতায়েন করা হয়। ওই ঘটনার সময় শুভেন্দু সেখানে পৌঁছননি। ফলে দফতরে ঢোকার সময় তাঁকে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়নি। তবে কর্মসূচি সেরে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে শুভেন্দুর গাড়ি ঘিরে একপ্রস্ত বিক্ষোভের চেষ্টা করা হয়। তার মধ্যেই অবশ্য কৈলাস ফোনে কথা বলেছেন অমিতের সঙ্গে। কথা বলার পর তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে চিঠিও পাঠিয়েছেন।
বিজেপি সূত্রের খবর, নড্ডার কনভয়ে হামলা এবং তার পর সুনীলের গাড়ি ঘিরে ধরে বিক্ষোভ এবং ‘হামলা’র ঘটনাকে একসঙ্গে জুড়ে তারা দেখাতে চাইবে, সামগ্রিক ভাবে বাংলায় আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিরির অবনতি হয়েছে। বলবে, পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কোনও পরিসর নেই। তাদের গণতান্ত্রিক কার্যকলাপে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সেই পথ ধরেই আসবে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের আবেদন এবং তার জন্য লাগাতার কেন্দ্রকে আর্জি জানিয়ে যাওয়া। যদিও নড্ডার গাড়ির উপর হামলা আর সুনীলের গাড়ি ঘিরে ধরে বিক্ষোভ এক পর্যায়ের নয় বলে বিজেপি-র অন্দরেই অভিমত রয়েছে। কিন্তু পাশাপাশিই বলা হচ্ছে, এই ‘প্রবণতা’ বিপজ্জনক। বিশেষত, রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে।
প্রসঙ্গত, সুনীলের গাড়ি বিক্ষোভের ঘটনাকে ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ বলে অভিহিত করেছেন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর কথায়, ‘‘এটা পরিকল্পনা করে করা হয়নি। সুনীল দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাই মানুষ তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ দেখিয়েছে।’’ রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম আবার বলেছেন, ওই ঘটনার সঙঅগে দলের কারও যোগ নেই। যদিও তৃণমূলের ঝান্ডা এবং প্রতীক লাগানো মঞ্চেই বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। দলের মহাসচিব তথা রাজ্যের অপর মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সুনীল মণ্ডল হাতে-গোনা নেতাদের মধ্যে পড়েন না!’’
বিজেপি দফতরে সংবর্ধনার সময় সুনীলের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভের ঘটনার উল্লেখ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘লজ্জা লাগে ভাবতে যে, ২১ বছর ওই দলটা করেছি!’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘তৃণমূল তো একটা কোম্পানি। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি! এতদিন কোম্পানিতে ছিলাম। এখন রাজনৈতিক দলে এসেছি।’’ সেই সভাতেই রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘একসময় সরকারের স্লোগান ছিল, ছোট পরিবার, সুখী পরিবার। আমরা বলি, বড় পরিবার, সুখী পরিবার। একসময় জনসঙ্ঘ ছওট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। যে গ্রামে পোস্ট অফিস নেই, সেখানেও বিজেপি-র ঝাণ্ডা আছে।’’ দিলীপের আরও বক্তব্য, ‘‘২০২১ সালে ভোটের আগে মোদী সরকারের সুশাসন বনাম তৃণমূলের কুশাসনকে তুলে ধরা হবে মানুষের সামনে।’’ প্রাক্তন তৃণমূল নেতা তথা অধুনা বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় বলেন, ‘‘এই নির্বাচন থেকে তৃণমূল উঠে যাওয়ার পর্ব শুরু হবে। তৃণমূলের অবস্থা বিপ্লবী বাংলা কংগ্রেসের চেয়েও খারাপ হবে!’’
আরও পড়ুন:শুভেন্দু আসার আগে হেস্টিংসে গোলমাল, বিক্ষোভ তৃণমূলের, বচসা
আরও পড়ুন:টিকা নিতে নামের তালিকা তৈরি হচ্ছে পুলিশের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy