গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাংলার বামেদের নিয়ে নিন্দকদের অনেকেই বলেন, তাঁরা ভিয়েতনামে বৃষ্টি হলে ভবানীপুরে ছাতা খোলেন! কিউবায় খরা হলে কসবায় জল ছেটান! কিন্তু নিজের এলাকা এবং পরিপার্শ্ব নিয়ে গা করেন না। গত ৪৮ ঘণ্টায় সেই প্রশ্ন তুলছেন স্বয়ং বামনেতাদের অনেকে। সৌজন্যে: কলকাতার বাম কাউন্সিলর মধুছন্দা দেবের বিরুদ্ধে ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্যের অভিযোগ নিয়ে নেতা-কর্মীদের ‘নীরবতা’।
বামেদের অভিযোগ, মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভার বাজেট অধিবেশনে মধুছন্দার বিরুদ্ধে ‘বর্ণবিদ্বেষমূলক’ মন্তব্য করা হয়েছেন। অভিযোগের তির তৃণমূলের এক পুরুষ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সিপিআই এবং সিপিএমের দৈনিক মুখপত্রে বুধবার প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু সমাজমাধ্যমে কোনও প্রতিবাদ দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার অবশ্য ঢাকুরিয়া এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল করবে বামেরা। কিন্তু সমাজমাধ্যমকে যখন নিজেদের কথা বলার ‘বিকল্প’ মঞ্চ হিসাবে মনে করছেন বামেরা এবং ব্যবহারও করছেন, তখন সেখানে কোনও ঢেউ নেই কেন? তাঁরা কি বিষয়টি জানেন না? অনেক বড় নেতাও ঘনিষ্ঠ আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, নানাবিধ ব্যস্ততায় তাঁরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগতই নন। আরএসপির এক সর্বভারতীয় নেতা যেমন বলেছেন, ‘‘তাই নাকি? এই রকম হয়েছে?’’
বৃহস্পতিবার সকালে একাধিক বাম নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা হয়েছে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে। কেউ এড়িয়ে গিয়েছেন। কেউ বলেছেন ঘটনার কথা তাঁর আদৌ জানা নেই। আবার সুজন চক্রবর্তীর মতো সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বলেছেন, ‘‘নারায়ণ গোস্বামীর বর্ণবাদী মন্তব্য, অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খ্রিস্টান সম্প্রদায় সম্পর্কে বক্তব্য, শিখ পুলিশকর্তাকে খলিস্তানি বলা বা মধুছন্দার গায়ের রং নিয়ে কটাক্ষ— সবটাই নিন্দনীয়। সব কিছু নিয়েই প্রতিবাদ হওয়া উচিত।’’ সুজন এ-ও বলেছেন যে, ‘‘কোনও বিষয়ে যদি প্রতিবাদ না হয়ে থাকে, তা হলে সেটাও উচিত হয়নি।’’ প্রথম সারির বাম নেতা-নেত্রীদের কাউকেই এ নিয়ে সমাজমাধ্যমে সরব হতে দেখা যায়নি বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত।
মধুছন্দা সিপিআই কাউন্সিলর। সিপিআই রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও গোটা বিষয়টি নিয়ে ‘হতাশ’। তিনি এ-ও বলেছেন, শুক্রবার বামফ্রন্টের বৈঠকে বিষয়টি তিনি উত্থাপন করবেন।
সিপিএমের এক রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘সমাজমাধ্যম কী ভাবে ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে আরও শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। এই রকম ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ হল না! অথচ দেখলাম এক ছাত্রনেতা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, কোন নেতাকে তিনি বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে গিয়েছেন সেই ছবি।’’ রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর ওই সদস্য এ-ও বলেন, ‘‘বিভিন্ন ঘটনায় যখন তৃণমূল-বিজেপি মেরুকরণ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে, তখন নিজেদের দলের লোকজনই নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে পারছেন না। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে?’’ বামনেতারাও ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, অনেকেরই বস্তুনিষ্ঠ ভাবে রাজনৈতিক পরিস্থতি অনুধাবন করতে সমস্যা হচ্ছে। এটা তারই বহিঃপ্রকাশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy