—ফাইল চিত্র।
করোনাকালে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি কেনাকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য দফতরে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল কয়েক মাস আগেই। সেই সময়ে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের যুক্তি ছিল, জরুরি পরিস্থিতিতে অনেক নিয়ম মানা যায়নি। আবারও করোনাকালীন সময়েই চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসাকর্মীদের খাবার সরবরাহ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গত ৩ মার্চ এ ব্যাপারে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে অভিযোগও জমা হয়েছে। এবং এ বারেও স্বাস্থ্যকর্তারা সেই জরুরি পরিস্থিতির যুক্তি খাড়া করেছেন।
করোনা হাসপাতাল হিসেবে কাজ করা এম আর বাঙুরে ওই অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই হাসপাতাল গত বছর ১৩ এপ্রিল করোনা হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়। সেখানকার চিকিৎসক ও কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা হয় আশপাশের হোটেল ও লজে। খাওয়ার ব্যবস্থাও করে সরকার। সেই খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে দরপত্রের নিয়ম সম্পূর্ণ ভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ, দরপত্র ডেকে একাধিক সংস্থা বাছাই করা সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খাবার নিয়েছেন তৃতীয় একটি সংস্থার থেকে, অনেক বেশি দাম দিয়ে। অথচ, ওই সংস্থা প্রথমে দরপত্রে অংশ নিলেও বাছাই হয়নি।
সূত্রের খবর, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ন’মাস ওই ব্যবস্থা চলায় সরকারের অতিরিক্ত ১ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা গচ্চা গিয়েছে। সরকার আর্থিক অনটনের কথা বলার পরেও কী ভাবে এত টাকা স্রেফ অনিয়মে নষ্ট হল, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
লিখিত অভিযোগে জানানো হয়েছে, গত এপ্রিল মাসে প্রথমে দরপত্র না-ডেকেই একটি সংস্থাকে এম আর বাঙুর করোনা হাসপাতালে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়। কিছু দিন পরে প্রশাসনের টনক নড়ায় জেলাশাসক দরপত্র ডাকার নির্দেশ দেন। তখন দরপত্র ডাকা হয়। এবং যে সংস্থা (লোয়েস্ট বিডার) সব চেয়ে কম দর দিয়েছিল (মধ্যাহ্ন ও নৈশভোজ মিলিয়ে জনপ্রতি ১৮০ টাকা এবং জিএসটি) তাদের বাছাই করা হয়। কিন্তু তারা প্রথম দিন খাবার সরবরাহ করার পরেই খাবারের মান খারাপ বলে জানিয়ে তাদের খাবার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
দরপত্রের নিয়মানুযায়ী, এমন পরিস্থিতিতে লোয়েস্ট বিডার সংস্থার থেকে দরপত্রে যারা সামান্য বেশি দাম দিয়েছিল সেই ‘সেকেন্ড লোয়েস্ট বিডার’-এর থেকে খাবার নেওয়ার কথা বা প্রথম দরপত্র পুরোপুরি বাতিল করে আবার নতুন করে দরপত্র ডাকার কথা। সেকেন্ড লোয়েস্ট বিডার মধ্যাহ্ন ও নৈশভোজ মিলিয়ে জনপ্রতি ২২৪ টাকা, জিএসটি-সহ দর দিয়েছিল। অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতর সে সব কিছুই না করে যে সংস্থার থেকে দরপত্র ডাকার আগে খাবার নেওয়া হচ্ছিল, তাদের থেকেই মধ্যাহ্ন ও নৈশভোজ মিলিয়ে জনপ্রতি ২৯০ টাকা (জিএসটি-সহ) মূল্যে খাবার নিতে শুরু করে। সেটাই ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চলে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য দফতরের কিছু কর্তা নিজেদের স্বার্থে এবং নিজেদের পরিচিত সংস্থার আর্থিক সুবিধার জন্য এই অনিয়মের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ঘটনার বিহিতও চাওয়া হয়েছে অভিযোগপত্রে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘ওই সংস্থা আমার অফিসে অনেক দিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার দেয়। ওদের খাবারের মান নিয়ে কখনও অভিযোগ ওঠেনি। তাই যখন দরপত্রে বাছাই করা সংস্থা অত্যন্ত জঘন্য মানের খাবার দিল, তখন চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের ক্ষোভ কমাতে ও হাসপাতালের পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে আমরা পুরনো সংস্থার থেকেই খাবার নেব বলে ঠিক করি। স্বাস্থ্য দফতর আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনুমতিও দেয়। জেলাশাসকও অনুমোদন করেন।’’
কিন্তু প্রথম বাছাই হওয়া সংস্থা ব্যর্থ হওয়ার পরে নিয়মানুযায়ী দ্বিতীয় বাছাই সংস্থার থেকে কেন খাবার নেওয়া হল না? এ ব্যাপারে সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘তখন তো এই দরপত্রের পুরো ব্যাপারটাই ধামাচাপা পড়ে গেল। কেউ আর ঝুঁকি নিতে চাইলেন না। তাই আর সেকেন্ড লোয়েস্ট বিডারকে ডাকা হল না।’’
আর স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর উক্তি, ‘‘আমাদের একটা জিও রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছিল, জরুরি পরিস্থিতিতে জেলার কোনও উচ্চ আধিকারিকের করা পুরনো দরপত্রে বাছাই হওয়া সংস্থার থেকে জিনিস নেওয়া যাবে। এম আর বাঙুরে পরিস্থিতি সামলাতে আমরা সেটাই করেছিলাম। খাবার খারাপ হওয়ায় ওই সময়ে সেখানে ক্ষোভ খুব বেড়ে গিয়েছিল।’’ সেকেন্ড লোয়েস্ট বিডারের থেকে কেন খাবার নেওয়া হয়নি এ ব্যাপারে তাঁর যুক্তি, ‘‘সেকেন্ড লোয়েস্ট বিডারের খাবারও যদি খারাপ হত, তা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যেত না। তাই আমরা আর ঝুঁকি নিইনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy