Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Illegal Construction

শাসকদলের পুরপ্রতিনিধির বাড়িই বেআইনি!

সম্প্রতি পুরপ্রতিনিধির বাড়ির তেতলায় নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু তেতলা নির্মাণের জন্য পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ ছাড়পত্র না দেওয়ায় গত ১৫ মে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারেরা ওই কাজ বন্ধের নোটিস দেন।

বিধি ভেঙে: সবুজ কাপড়ে ঘেরা রয়েছে তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি মীরা হাজরার বাড়ির বেআইনি অংশ। বৃহস্পতিবার।

বিধি ভেঙে: সবুজ কাপড়ে ঘেরা রয়েছে তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি মীরা হাজরার বাড়ির বেআইনি অংশ। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৪ ০৮:১৯
Share: Save:

শাসকদলের পুরপ্রতিনিধির বাড়ির একাংশই বেআইনি!

কলকাতা পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধি মীরা হাজরা। তাঁর বাড়ি উত্তর কলকাতার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ৯সি, মথুর সেন গার্ডেন লেনে। সেই বাড়ির পরে চারটি বাড়ি পেরোলেই জোড়াবাগান থানা। সম্প্রতি পুরপ্রতিনিধির বাড়ির তেতলায় নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু তেতলা নির্মাণের জন্য পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ ছাড়পত্র না দেওয়ায় গত ১৫ মে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারেরা ওই কাজ বন্ধের নোটিস দেন। অভিযোগ, তার পরেও সেখানে নির্মাণকাজ চলেছে। এই অভিযোগ ঘিরে সংশ্লিষ্ট পুরপ্রতিনিধি এবং ওই বাড়ির কাজে যুক্ত লাইসেন্সড বিল্ডিং সার্ভেয়রের (এলবিএস) মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়েছে।

পুরপ্রতিনিধির বাড়ি লাগোয়া ৯এ, মথুর সেন গার্ডেন লেনের বাড়িতে থাকেন নন্দ মণ্ডল, মিতা চৌধুরীরা। কলকাতার মেয়রের কাছে তাঁরা দু’-দু’বার লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, বিল্ডিং-আইনের তোয়াক্কা না করে তাঁদের বাড়ির পাঁচিল ঘেঁষে পুরপ্রতিনিধির বাড়ির তেতলা তৈরি হয়েছে। ওই বেআইনি অংশ ভাঙতে তাঁরা ১৭ মে এবং ২০ মে মেয়র, জোড়াবাগান থানা, পুর কমিশনার ও পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ডিজি-র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। নন্দ মণ্ডলের ছেলে রাজা মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘পুরপ্রতিনিধি ও তাঁর স্বামী নিয়ম বহির্ভূত ভাবে প্রভাব খাটিয়ে ছাদে ঢালাই করে ঘর তৈরি করেছেন। তাতে আমাদের বাড়ির অংশ আটকে গিয়েছে। মেয়র এবং থানাকে জানিয়েও কাজ না হওয়ায় এ বার আদালতে যাব।’’

পুরপ্রতিনিধি মীরা হাজরার অবশ্য দাবি, ‘‘অভিযোগ ঠিক নয়। নিয়ম মেনেই কাজ হয়েছে। তেতলায় নির্মাণের ছাড়পত্র যে রয়েছে, তা আমাদের এলবিএস (লাইসেন্স বিল্ডিং সার্ভেয়র) জানিয়েছিলেন। সেই মতো কাজ শুরু করেছিলাম। পরে বিল্ডিংয়ের নকশা দেখে জানতে পারি, পুরো ছাড়পত্র নেই। তার পরেই কাজ বন্ধ করি।’’ যদিও ওই নির্মাণে যুক্ত এলবিএস সুজিত বসাক বলেন, ‘‘পুরপ্রতিনিধি ঠিক কথা বলছেন না। আমার অনুমতি না নিয়ে তেতলায় কাজ শুরু করায় আমি দু’নম্বর বরোর এগ‌্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। তার পরেই ওই নির্মাণের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিই।’’ ঘটনাস্থল ২০ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি বিজয় উপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ পেয়েই আমি পুলিশ ও পুরসভাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম।’’

বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুরপ্রতিনিধির বাড়ির তেতলার চার দিক সবুজ কাপড় দিয়ে ঘেরা। নীচের চার পাশে বালির বস্তা পড়ে আছে। পাশের বাড়ির ছাদে উঠে দেখা গেল, দু’টি বাড়ির মাঝখানে এতটুকু ফাঁক নেই। পুরপ্রতিনিধির বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে জোড়াবাগান থানা। মাস কয়েক আগে গার্ডেনরিচে অবৈধ বহুতল ভেঙে ১৩ জনের মৃত্যুর পরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, বেআইনি নির্মাণ হলেই সেখানে দ্রুত নোটিস সেঁটে থানায় এফআইআর করবেন পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা। সেই মতো ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারেরা পুরপ্রতিনিধির বাড়িতে কাজ বন্ধের নোটিস দেন, জোড়াবাগান থানায় এফআইআর করেন। অভিযোগ, তার পরে দু’সপ্তাহ কেটে গেলেও পুরসভার তরফে বেআইনি অংশ ভাঙতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তবে কি শাসকদলের পুরপ্রতিনিধি হওয়ায় বেআইন-কে আইনে পরিণত করার চেষ্টা চলছে? যার জন্য অভিযোগের পরেও থানা ও পুর কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ করেননি? জোড়াবাগান থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এফআইআরের পরেই আমরা কাজ বন্ধ করিয়েছি। তা ছাড়াও যাবতীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ সব শুনে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণে যুক্ত কাউকে ছাড়া হবে না। পুরপ্রতিনিধির ওই বাড়ির বেআইনি অংশ দ্রুত ভাঙা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Construction TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy