ফাইল চিত্র।
পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিভিন্ন ওয়েবসাইটকে ব্যবহার করে চলছে আর্থিক প্রতারণার চক্র। রাজারহাটের বাসিন্দা এক তরুণীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে এমনটাই মনে করছে পুলিশ। সম্প্রতি এমনই একটি প্রতারণার ঘটনায় অভিযুক্তকে উত্তরপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার করেছে বিধাননগর পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত ব্যক্তি আদতে নাইজিরিয়ার নাগরিক। এ দেশে অবৈধ ভাবে বসবাস করছিল সে। গত কয়েক বছরে একই কায়দায় বেশ কয়েক জন মহিলাকে প্রতারণা করেছে ওই যুবক। আপাতত তার ঠিকানা, দমদমের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। পুলিশ জানায়, পাত্র নির্বাচনের উদ্দেশ্যে একটি ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন রাজারহাটের ওই তরুণী। সেখানেই নাইজিরীয় ওই যুবক নিজেকে কানাডাবাসী চিকিৎসক বলে দাবি করে এবং তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবে সাড়া দেন ওই তরুণী। তার পরে ধীরে ধীরে দু’জনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথা বলতেন তাঁরা। তবে ভিডিয়ো কলে কোনও দিন তাঁদের কথা হয়নি। এক দিন ওই যুবক তরুণীকে জানায়, সে তাঁর জন্য ১০ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি উপহার পাঠিয়েছে। তিনি যেন কলকাতা বিমানবন্দরের কাস্টমস বিভাগ থেকে সেটি সংগ্রহ করে নেন। ‘কাস্টমস ফি’ বাবদ তাঁকে কিছু টাকা দিতে হবে। কিছু দিন পরে নিজেকে কাস্টমস অফিসের কর্মী বলে দাবি করে এক ব্যক্তি তরুণীকে ফোন করে। তার কথা মতো তিন কিস্তিতে ৮০ হাজার ৮০০ টাকা একটি অ্যাকাউন্টে জমা দেন ওই তরুণী। তার পরেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় নাইজিরীয় ওই যুবক। হোয়াটসঅ্যাপে কল বা মেসেজ করেও কোনও উত্তর পাননি তরুণী। তার পরেই বিধাননগর পুলিশে অভিযোগ জানান তিনি। তদন্তে নামে পুলিশ।
পুলিশ যোগাযোগ করে ওই ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। অভিযুক্ত যুবক যে স্মার্টফোন ব্যবহার করে ওই সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল, তার সন্ধান পায়
পুলিশ। সেই সূত্র ধরে গত মাসের মাঝামাঝি তুঘলকাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। গত ২০ ডিসেম্বর বিধাননগর আদালতে তোলা হলে বিচারক ওই যুবককে পুলিশি হেফাজতে পাঠান। পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষে ফের আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ধৃতকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত স্মার্টফোনটি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
ওই মামলায় নিযুক্ত রাজ্য সরকারের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটগুলি ব্যবহার করে প্রতারণা-চক্র চালাচ্ছে অনেকে। তাই ওই ধরনের সাইট ব্যবহার করার সময়ে সতর্ক থাকা দরকার।’’ পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ধৃত যুবক নাইজিরিয়ার নাগরিক হলেও ফ্রান্সের এক নাগরিকের নামে ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি করে সে ভারতে এসেছিল। তাই প্রতারণা ছাড়াও ভারতীয় দণ্ডবিধির আরও দু’টি ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘২০১৫ সালে অভিযুক্তের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। তুঘলকাবাদে বসবাসকারী নাইজিরিয়ার এক নাগরিককে বিয়ে করে সংসার পাতে সে। গত তিন-চার বছর ধরে প্রতারণার ব্যবসা চালাচ্ছিল ওই যুবক।’’
পুলিশ জানায়, শেষ যে দিন ধৃতকে আদালতে তোলা হয়েছিল, সে দিন হাজির ছিলেন তার আইনজীবী। তাঁর মাধ্যমে ওই তরুণী টাকা ফেরত পেয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে, ওই নাইজিরীয় নাগরিক একা নয়, তার মতো অনেকেই একই কায়দায় প্রতারণা-চক্ত চালাচ্ছে। ওই পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘তুঘলকাবাদ এবং ফরিদাবাদকে ঘাঁটি করে এই চক্র চলছে বলে মনে হচ্ছে। ওই অঞ্চলে অনেক নাইজিরীয়র বাস।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy