টেকনো সিটি থানার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে না চাওয়ার অভিযোগ। ছবি: সংগৃহীত।
সম্প্রতি বিধাননগর কমিশনারেটের একাধিক থানার ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। ওই কমিশনারেটের অধীন নিউ টাউন ও নারায়ণপুর থানার দু’টি মামলার ক্ষেত্রে তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। অভিযুক্ত প্রোমোটারের সঙ্গে কার্যত ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠেছে নিউ টাউন থানার আইসি-র বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় ডিসি-কে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছে হাই কোর্ট। আবার নারায়ণপুর থানার ক্ষেত্রে আইসি-কে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।
এ বার ওই কমিশনারেটেরই টেকনো সিটি থানার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে না চাওয়ার অভিযোগ উঠল। ছেলের মৃত্যু রহস্যজনক মনে হওয়ায় একটি পরিবার টেকনো সিটি থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, গুরুত্ব পায়নি অভিযোগ নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে দেওয়া নির্দেশও। শেষে বারাসত সিজেএম আদালতের নির্দেশে, ঘটনার পাঁচ মাস পরে পুলিশ খুনের মামলা রুজু করতে বাধ্য হয়। পরে দু’জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।
টেকনো সিটি থানার অধীন বালিগড়ি এলাকায় থাকতেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, শামিম আলি শেখ (৩১) নামে ওই যুবক। গত জুন মাসে তাঁর রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। তারা
জানায়, বাড়ির অমতে বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে বালিগড়িতে ভাড়ার বাড়িতে থাকতেন আদতে পানাগড়ের বাসিন্দা শামিম।
শামিমের মা সামিরুন বেগম জানান, গত ১০ জুন তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়। পানাগড়ের বাড়িতে তাঁর কাছে খবর যায় যে, ছেলে অসুস্থ। তাঁদের কলকাতায় পৌঁছতে বলা হয়। সামিরুনের অভিযোগ, ‘‘কলকাতা পৌঁছনোর আগেই জানতে পারি, ছেলের মৃত্যু হয়েছে। বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের থেকে জানতে পারি, ছেলেকে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল। যে বাড়িতে ছেলে ও তার স্ত্রী ভাড়া থাকত, সেই বাড়ির মালিক এবং তাঁর স্ত্রী আমাকে বার বার জানান যে, ছেলের স্ট্রোক হয়েছিল। ছেলের স্ত্রী আমাকে কিছুই জানায়নি। কিন্তু ময়না তদন্ত হওয়ার পরে জানতে পারি, ছেলের গলায় ফাঁসের দাগ ছিল এবং শ্বাসরুদ্ধ হয়েই তার মৃত্যু হয়েছে।’’
পরিবারটি জানায়, শামিমকে মৃত অবস্থায় দেখে হাসপাতাল থেকে স্থানীয় বিধাননগর উত্তর থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। সামিরুনের অভিযোগ, ‘‘ছেলের স্ত্রী, ভাড়া বাড়ির মালিক ও তাঁর স্ত্রীর কথাবার্তা, ব্যবহার সন্দেহজনক ঠেকে। ছেলের ফোনটিও আমাকে দেননি ওঁরা। আমি সেই রাতে টেকনো সিটি থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করি। সারা রাত আমরা থানায় বসেছিলাম। সকালে পুলিশ আমাদের নিয়ে ওই বাড়িটিতে গিয়ে নামমাত্র কথাবার্তা বলে চলে আসে। আমরা ছেলের ঘরেও ঢুকতে পারিনি। ওই দিন ময়না তদন্তের পরে ছেলের দেহ সৎকার করতে নিয়ে যাই।’’ আরও অভিযোগ, এর কিছু দিন পরে ওই পরিবারটি ফের টেকনো সিটি থানায় গেলে শামিম স্ট্রোকে মারা গিয়েছেন বলে পুলিশ অভিযোগ নেয়নি।
পরিবারের আইনজীবী অঞ্জনা মেহবুব বলেন, ‘‘আমার মক্কেল মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে যোগাযোগ করার পরে থানা ওঁকে ডেকে পাঠায়। কিন্তু তখনও অভিযোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি, ময়না তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে যাওয়ার পরেও অভিযোগ নেওয়া হয়নি। তার পরে বারাসত সিজেএম আদালতে আমরা অভিযোগ জমা দিলে পুলিশ আদালতের নির্দেশে অক্টোবর মাসে খুনের মামলা রুজু করে। শামিমের স্ত্রী এবং বাড়ির মালকিনকে গ্রেফতার করা হয়। এতেই কার্যত পরিষ্কার, পুলিশ ইচ্ছাকৃত ভাবেই অভিযোগ নিচ্ছিল না।’’ এ ক্ষেত্রে বিধাননগর উত্তর থানাও জ়িরো এফআইআর (অন্য থানা এলাকার ঘটনায় এফআইআর দায়ের) করেনি বলেই অভিযোগ ওই আইনজীবীর। তাঁর দাবি, আরও দুই অভিযুক্তের ক্ষেত্রে এখনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
এই প্রসঙ্গে কমিশনারেটের এক পদস্থ আধিকারিকের দাবি, ‘‘ঘটনার তদন্ত না করে কী ভাবে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে? পুলিশ ময়না তদন্ত, ফরেন্সিক পরীক্ষা করার পরে যখন বুঝেছে ছেলেটির মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, তখনই অভিযোগকারীকে অভিযোগ জমা দিতে বলে। কিন্তু ওঁরা পুলিশকে জানান, আদালতে মামলা করেছেন। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাবেন না।’’ যদিও পুলিশের এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন অঞ্জনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy