প্রতীকী ছবি
মাস দেড়েক আগে যুবক পুত্র বাবাকে জানিয়েছিলেন, তিনি সমকামী। মা-বাবা চাইলেও আর পাঁচ জনের মতো কোনও মহিলাকে বিয়ে করে দাম্পত্য যাপন তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। এর জবাবে বারাসতের নবপল্লির যুবককে পিটিয়ে ‘সংশোধনে’র চেষ্টার অভিযোগ উঠল বাবার বিরুদ্ধে। স্থানীয় পুরসভার ছ’নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে ডেকে এনে যুবকটিকে ‘বোঝানো’র চেষ্টা এবং নেতাদের নাম করে হুমকির অভিযোগও উঠেছে। ফলে কার্যত বাড়িছাড়া হয়ে হতাশার শিকার শুভঙ্কর রায় নামে এক তরুণ। বিষয়টি নিয়ে বারাসত থানার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।
শুভঙ্কর বলেন, ‘‘আমি সমকামী, আর এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্কেও আছি, এটা বাড়িতে জানাতেই বিপত্তি! স্থানীয় কাউন্সিলর এবং তাঁর দলের ছেলেদের ডেকে এনে তাঁদের সামনেই শাসানো হয়েছে।’’ শুভঙ্করের দাবি, তাঁর প্রেমিক যুবকটিকেও নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ‘‘আমার এক আত্মীয় কৌশলে ওঁর পরিচয়ের বিভিন্ন নথি কেড়ে ভয় দেখাচ্ছে! ওঁর চাকরির দফা রফা করার কথাও বলা হয়েছে।’’ শুভঙ্করের প্রেমিক একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবে চাকরি করেন। আপাতত কলকাতায় কয়েক জন বন্ধুর আশ্রয়ে থাকলেও মানসিক অবসাদগ্রস্ত শুভঙ্কর এখন মনোবিদের সাহায্য নিচ্ছেন। একটি বেসরকারি সংস্থায় তিনি চাকরি করতেন। সেই চাকরিটিও ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। বাড়িতে ফিরতে তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন জানিয়ে বারাসত থানার পুলিশকে অভিযোগও জানিয়েছেন তিনি। বারাসতের আইসি দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘ইমেলে অভিযোগটি এসেছে, শুনেছি। সবই খতিয়ে দেখব।’’
শুভঙ্করের বাবা গোপাল রায় অবশ্য এখনও ছেলের সমকামী পরিচিতি মানতে নারাজ। তিনি বলছেন, ‘‘সব মিথ্যে। ছেলে (শুভঙ্কর) চাইলে আমার কাছে থাকুক। কিন্তু পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক মানা সম্ভব নয়।’’ স্থানীয় কাউন্সিলর চম্পককুমার দাস অবশ্য বাবা-ছেলের সম্পর্কের ভিতরে ঢুকতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘আমার পাড়ার ঘটনা, গোপালবাবু ডেকেছিলেন তাই গিয়েছিলাম।’’ চম্পকের প্রকাশ্যে দাবি, তিনিও ওই ব্যক্তিকে বুঝিয়েছেন, ছেলে যা চাইছে তা মেনে নেওয়া ছাড়া গতি নেই। বাস্তবিক, এ দেশে ২০১৭-র মানবাধিকার-সংক্রান্ত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, সমকামীদের ৯৮ শতাংশই তাঁদের কথা বলার পরে ঘরছাড়া হয়। ২০১৪-র নালসা বিচারে তাঁদের অস্তিত্বের স্বীকৃতি এবং ৩৭৭ ধরা অপরাধের তকমামুক্ত হলেও সমকামীদের বিষয়ে ভুল ধারণা এবং বিদ্বেষ সমাজে নানা স্তরে বহাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy