Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Police

মধুচক্র পাণ্ডা দিয়ে সমাজসেবার কাজ করানোর নির্দেশ কোর্টের, মজুরি চান আসামি

সপ্তাহে দু’দিন শিবুকে তদন্তকারী আধিকারীকের সঙ্গে দেখা করে তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে। আর দুই— ওই হাজিরার দু’দিন, তিন ঘণ্টা করে পুলিশ শিবুকে দিয়ে সমাজসেবা মূলক কাজ করাবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:৩৩
Share: Save:

ধরা পড়া মধুচক্রের পান্ডাকে দিয়ে সপ্তাহে ৬ ঘণ্টা করে সমাজসেবা করানোর নির্দেশ দিল আদালত। আর তাতে মহা ফ্যাসাদে পড়ে গিয়েছে কলকাতা পুলিশ!

গত রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে এক যোগে অভিযান চালান কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। স্পা এবং বিউটি পার্লারের আ়ড়ালে চলা চারটি মধুচক্র ধরা পড়ে নিউ মার্কেট, ভবানীপুর, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড এবং রাসবিহারী এলাকায়। চক্রের পান্ডা, দালাল, যৌনকর্মী এবং খরিদ্দার মিলিয়ে ৩০ জনকে সে রাতে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

সেই ৩০ জনের মধ্যে একজন শিবু হাজরা। ওই রাতে, যাদবপুর থানা এলাকার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের এক বহুতলের চারতলায় হানা দিয়েই সবচেয়ে বড় মধুচক্রটির হদিস পেয়েছিল পুলিশ। সামনে স্পায়ের বোর্ড লাগিয়ে সেখানে চলছিল দেহ ব্যবসা। ওই ফ্ল্যাট থেকে ধরা হয় সাত জন তরুণী এবং আট জন পুরুষকে। জেরাতে পুলিশ জানতে পারে, ওই আটজনের মধ্যে সাতজনই খরিদ্দার। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অবসর প্রাপ্ত সেনাকর্তা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিক থেকে শুরু করে আয়করের আইনজীবীর মতো লোকজন। বাকি একজন শিবু হাজরা, মধুচক্রটির ম্যানেজার।

শিবু হাজরাকে পরের দিন আদালতে তোলা হলে সরকারি আইনজীবী তাঁর পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানান। তদন্তকারীদের দাবি, ফ্ল্যাটের মালিকের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন— শিবুই ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন। চুক্তিপত্রেও নাম রয়েছে তাঁর। মাসে দেড় লাখ টাকা ভাড়ার চুক্তি। আদালতে পুলিশের যুক্তি ছিল— শিবু গোটা চক্রের অন্যতম পান্ডা, তাই তাঁকে জেরা করা প্রয়োজন। আদালত প্রথম দফায় তাঁর তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়।

আরও পড়ুন: সল্টলেক সেক্টর ফাইভে ভুয়ো কলসেন্টার খুলে বিদেশিদের কোটি কোটি টাকার প্রতারণা, সিআইডির জালে পাণ্ডারা

ফের তাঁকে আদালতে তোলা হয় বুধবার। এ দিনও সরকারি আইনজীবী শিবুর জামিনের বিরোধিতা করেন। কিন্তু অভিযুক্তের আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যের করা জামিনের আবেদন মেনে নেন আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বিচারক শিবু হাজরাকে ২ হাজার টাকার বন্ডে জামিন মঞ্জুর করে দেন। কিন্তু জুড়ে দেন দু’টি শর্ত। এক— সপ্তাহে দু’দিন শিবুকে তদন্তকারী আধিকারীকের সঙ্গে দেখা করে তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে। আর দুই— ওই হাজিরার দু’দিন, তিন ঘণ্টা করে পুলিশ শিবুকে দিয়ে সমাজসেবা মূলক কাজ করাবে। কী ধরনের সমাজসেবা? তারও কয়েকটা উদাহরণ দিয়েছেন বিচারক। রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সহায়তা বা বাগানের কাজ করার মতো কিছু একটা। দু’-এক সপ্তাহ নয়, বিচারকের নির্দেশ মতো, আগামী বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশকে সমাজসেবা করিয়ে যেতে হবে শিবুকে দিয়ে।

রায় শুনে কিন্তু মাথায় হাত তদন্তকারীদের। এক আধিকারিক বলেই ফেলেন, ‘‘এ তো বোঝার উপর শাকের আঁটি হয়ে গেল! শিবুকে দিয়ে কী সমাজসেবা করাব?” লালবাজারের এক শীর্ষ পুলিশ কর্তাও প্রশ্ন শুনে গম্ভীর হয়ে গিয়ে বললেন, “জানি না, কী সমাজসেবা করাব জানি না।”

আরও পডু়ন: মহাকাশ থেকে নজরদারি, ইসরো পাঠাল ‘রিস্যাট’, সঙ্গে ৯ বিদেশি উপগ্রহ

পুলিশ যখন সমাজসেবা নিয়ে জেরবার, তখন পাল্টা এক আর্জি জানিয়ে ফেলেছেন শিবুর আইনজীবী দিব্যেন্দু। তিনি আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘আমি প্রথম থেকেই বলছি, শিবু এক জন ম্যানেজার। কর্মী মাত্র। তিনি মূল লোক নন। আমার মক্কেল সমাজসেবা করুক আপত্তি নেই। কিন্তু জামিন পাওয়ার পর তাঁকে তো পেট চালানোর জন্য রোজগারও করতে হবে। সপ্তাহে দু’দিন তিনি তিন ঘণ্টা করে সমাজ সেবা করলে রোজগার করবেন কখন? তাই বিচারকের কাছে আবেদন জানিয়েছি, সমাজসেবার জন্য যেন পুলিশ একটা মজুরি দেয়।”

বিচারক মৌখিক ভাবে পুলিশ বলেছেন মজুরির বিষয়টি ভেবে দেখতে।

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Police Sex Racket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy