Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

কুমিরদের ‘গৃহত্যাগ’ ঠেকাতে নালার মুখে বসল জাল

আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিস সামন্ত বলেন, ‘‘কুমিরদের খাঁচার নিকাশি নালার সঙ্গে আদিগঙ্গার যে সংযোগ রয়েছে, তার মুখেই বসানো হয়েছে মোটা ও শক্ত জাল। বড় তো নয়ই, ছোট কোনও কুমিরও নালা দিয়ে বাইরে যেতে পারবে না।’’

পরিখা: কুমিরের (চিহ্নিত) বাসস্থান সংলগ্ন এই নালাতেই বসেছে জাল। আলিপুর চিড়িয়াখানায়। নিজস্ব চিত্র

পরিখা: কুমিরের (চিহ্নিত) বাসস্থান সংলগ্ন এই নালাতেই বসেছে জাল। আলিপুর চিড়িয়াখানায়। নিজস্ব চিত্র

কৌশিক ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ০১:০৭
Share: Save:

তাঁরা মর্জি মতো কিছু সময় জলে কাটান, আর কিছু সময় স্থলে। তাঁদের ভাল রাখতে সম্প্রতি বাসস্থানের নালা সংস্কারও হয়েছে। সেই নালার জল এখন সরাসরি যায় আলিপুরের আদিগঙ্গায়। আর এই সংস্কারের পরেই তৈরি হয়েছিল নতুন আশঙ্কা। নালার জলের সঙ্গে চিড়িয়াখানা ছেড়ে তাঁরা যদি গিয়ে ওঠেন আদিগঙ্গায়! আর সেখান থেকে সরাসরি গৃহস্থের উঠোনে!

জনবসতি ভরা শহরে সেই দৃশ্য কল্পনা করেই ঘাম ছুটেছিল চিড়িয়াখানার কর্তাদের। তাই চিড়িয়াখানার কুমিরদের আদি গঙ্গায় যাওয়া আটকাতে নালার মুখে জাল বসিয়েছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিস সামন্ত বলেন, ‘‘কুমিরদের খাঁচার নিকাশি নালার সঙ্গে আদিগঙ্গার যে সংযোগ রয়েছে, তার মুখেই বসানো হয়েছে মোটা ও শক্ত জাল। বড় তো নয়ই, ছোট কোনও কুমিরও নালা দিয়ে বাইরে যেতে পারবে না।’’

চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, সেখানকার যে জায়গা কুমিরদের থাকার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে সেখানে নিকাশি নালার সমস্যা ছিল। ফলে বৃষ্টি হলে অনেক সময়েই জলাশয়ের জল বেড়ে সমস্যা তৈরি হত। আশিসবাবু বলেন, ‘‘জলের পরিমাণ বেড়ে গেলে অনেক সময়ই কুমিরের খাঁচার বাইরে চলে আসার আশঙ্কা থাকত। সেই কারণেই এই উদ্যোগ। কলকাতা পুরসভাও এই বিষয়ে সাহায্য করেছে।’’

অন্য দিকে, কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, কুমির ছাড়াও আদিগঙ্গা এবং চিড়িয়াখানার খালের সংযোগস্থলে জাল দেওয়া হয়েছে খালের জলে প্লাস্টিক বা অন্য কোনও কঠিন বর্জ্য ঢুকে পড়া আটকাতে। কারণ প্লাস্টিক বা কঠিন বর্জ্য কোনও প্রাণী খেয়ে ফেললে সমস্যা হতে পারে।

চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, কুমিরদের থাকার জায়গায় পলি পড়ে যাওয়ার ফলে একটুতেই জল জমে যেত। সেই কারণে নিকাশির উন্নতির সঙ্গে পলিও তুলে ফেলা হয়েছে। বহু বছর আগে প্রবল বৃষ্টিতে কুমিরের জলাশয় থেকে জল উপচে পড়ার ফলে কুমির বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল বলে শোনা যায়। যদিও বর্তমানে সেই ধরনের কোনও আশঙ্কা নেই বলেই জানান চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। রাজ্য বন দফতরের অতিরিক্ত মুখ্য বনপাল তথা ‘জু অথরিটি’-র সদস্য সচিব বিনোদকুমার যাদব বলেন, ‘‘পলি তোলা ছাড়াও কুমিরের থাকা জায়গায় নিকাশির সংযোগ আদিগঙ্গার সঙ্গে এমন ভাবে করা হয়েছে, যাতে বেশি বৃষ্টি হলে ওই জল আদিগঙ্গা দিয়ে বার করে দেওয়া যেতে পারে। মোটা জাল থাকায় কোনও কুমির ওই নালার মাধ্যমে আদিগঙ্গায় যেতে পারবে না। আবার গঙ্গার সঙ্গে ওই জলাশয় যুক্ত থাকলে জলের অভাবও হবে না।’’ তিনি জানান, কুমিরদের বংশবৃদ্ধির জন্য চিড়িয়াখানা চত্বরে অন্য একটি প্রান্তে বালি ফেলে সেখানে প্রজননের জন্য জায়গা করা হয়েছে।

বিনোদবাবু জানান, আপাতত চিড়িয়াখানায় তিন ধরনের কুমির রয়েছে। ‘মার্শ ক্রোকোডাইল’ ছাড়াও রয়েছে নোনা জল ও মিষ্টি জলের কুমির। ভারতীয় প্রাণী সর্বেক্ষণ-এর বিজ্ঞানী কৌশিক দেউটি বলেন, ‘‘মার্শ ক্রোকোডাইল জলাজমিতে থাকতেই অভ্যস্ত। সুন্দরবনে যে সমস্ত সুমির রয়েছে তারা নোনা জলে থাকে। কিন্তু ঘড়িয়ালদের মিষ্টি জলে দেখা যায়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Alipore Zoo Crocodile
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy