প্রতীকী ছবি।
পকসো মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না-হওয়ায় দীর্ঘ চার বছর জেল হেফাজতে থাকা, দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি স্কুলের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে সোমবার বেকসুর খালাস করলেন আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক উমেশ সিংহ।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোজ মান্না নামে ওই কর্মীর বিরুদ্ধে এক অভিভাবক তাঁর নাবালিকা মেয়েকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বেহালা মহিলা থানায়। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। অভিযোগকারিণী জানিয়েছিলেন, খেলার ছলে তাঁর মেয়েকে শৌচাগারে নিয়ে গিয়ে যৌন নির্যাতন করেন মনোজ। তার ভিত্তিতে ওই কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পকসো আইনে মনোজের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারীরা।
এর পরে শুরু হয় বিচার-প্রক্রিয়া। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মামলায় পুলিশ ২১ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে।
পাশাপাশি, অভিযুক্তের তরফেও চার জন সাক্ষীকে কোর্টে পেশ করা হয়। নির্যাতিতা ছাত্রীর মেডিক্যাল রিপোর্টের ভিত্তিতে তিন জন চিকিৎসকের মতামত গ্রহণ করে আদালত। তাঁদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত দু’জন চিকিৎসক আদালতকে জানান, তাঁরা ওই রিপোর্টে যৌন নির্যাতনের কোনও প্রমাণ পাননি। একমাত্র পুলিশি তদন্তের সঙ্গে যুক্ত থাকা চিকিৎসক আদালতে জানিয়েছিলেন, মেডিক্যাল রিপোর্টে যৌন নির্যাতনের প্রমাণ স্পষ্ট।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিচার-প্রক্রিয়া চলাকালীন অভিযোগকারিণী এবং সাক্ষীদের বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি উঠে এসেছিল। দীর্ঘ বিচার-প্রক্রিয়ার পরে বিচারকের পর্যবেক্ষণ, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতগ্রাহ্য কোনও প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করা হল।
গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে গত চার বছর মনোজ জেল হেফাজতে ছিলেন। এ দিন তাঁর আইনজীবী সেলিম রহমান বলেন, ‘‘পকসো আইনে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে এক জন নির্দোষ ব্যক্তিকে চার বছর জেল হেফাজতে রাখা হল। অভিযোগকারীদের সমাজবিরোধী বললেও কম বলা হয়।’’
এ দিন বিচারকের নির্দেশ শুনে মনোজের প্রতিক্রিয়া, ‘‘গত চার বছর আমি রাতে ঘুমোতে পারিনি। আমার ছেলে স্কুলপড়ুয়া। ছেলে ও স্ত্রীকে চার বছর ধরে নানা ভাবে কটূক্তি করা হয়েছে। কিন্তু আমি যে নির্দোষ, প্রথম থেকেই সে কথা মামলার তদন্তকারী অফিসার ও আদালতকে জানিয়েছিলাম। কেউ আমার কথা শোনেননি। একমাত্র বিচারক ঠিক বিচার করলেন।’’ মামলার সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘সমস্ত তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করেছেন বিচারক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy