ভগ্নদশা: ধসে পড়ল আরও একটি বাড়ি। সোমবার, সেকরাপাড়া লেনে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
বৌবাজারের সেকরাপাড়া লেনে সোমবার সকালে ফের একটি তেতলা বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ল। ৮বি সেকরাপাড়া লেনে ছিল ওই বাড়িটি। গত ৩১ অগস্ট থেকে দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেনের বেশ কয়েকটি বাড়ির কোনওটি হেলে পড়েছে, কোনওটি আংশিক ভেঙেছে, কোনওটিতে বড় বড় ফাটল ধরেছে। আগেও সেখানে কয়েকটি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। সোমবার সকালে ভেঙে পড়া বাড়িটির পিছনের অংশ আগেই ভেঙেছিল।
নিজেদের বাড়ি ধসে পড়ার খবর হোটেলে বসে শুনেছিলেন আশিস সেন ও তাঁর স্ত্রী মৌমিতা সেন। ক্রিক রো-র একটি হোটেলে পরিবার নিয়ে রয়েছেন আশিসবাবু। তিনি বলেন, ‘‘খবর শুনেই দৌড়ে স্ত্রীকে নিয়ে পাড়ার গলির সামনে পৌঁছই। নিজেদের বাড়ির ওই হাল দেখে আমার স্ত্রী মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত।’’
সেকরাপাড়া লেনের গলির মুখে দাঁড়িয়ে চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি মৌমিতা। একটু দূর থেকে দেখা যায়, তাঁদের তেতলা বাড়ির ওই তলেরই ভাঙা দেওয়ালে কোনও রকমে আটকে রয়েছে বাতানুকূল যন্ত্র। সেটির দিকে তাকিয়ে হতাশ মৌমিতা বলেন, ‘‘ওই এসিটা আমাদের শোয়ার ঘরে লাগানো ছিল। ঘরটা আর ফিরে পাব না।’’ তিনি জানান, তাঁদের সিন্দুক, আলমারি সবই চাপা পড়ে গেছে ধ্বংসস্তূপে। সোনার গয়না-সহ নানা দামি জিনিসপত্র ছিল। তাঁর সব চেয়ে আফশোস ঠাকুরঘরের লক্ষ্মীকে বার করতে না পারায়। মৌমিতা বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর সোনার চোখ, সোনার নাক, সোনার কান ও কপালে সোনার টিপ ছিল। ধ্বংসস্তূপ থেকে লক্ষ্মীকে উদ্ধার করতে পারলেও কিছুটা স্বস্তি পেতাম।’’ সঞ্জয় বসাক নামে দুর্গা পিতুরি লেনের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মেট্রো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু পাঁচ লক্ষ টাকায় কী হবে? আমরা আজ নিজেদের পাড়াতেই গৃহহীন। প্রতিবেশী, আত্মীয়-পরিজন সবাই একটা পরিবারের মতো বাস করতাম এখানে। আমাদের এই পাড়া ঘিরে কত স্মৃতি। এর ক্ষতিপূরণ কি দিতে পারবেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ?’’
এ দিন মেট্রো কর্তৃপক্ষ একটি নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেন, সেকরাপাড়া লেনের ন’টি বাড়ি ও দুর্গা পিতুরি লেনের ছ’টি বাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। ওই সব বাড়িতে কোনও ভাবেই আর ঢোকা যাবে না। এমনকি জিনিসপত্রও উদ্ধার করা যাবে না। এই নোটিসের কথা জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, গত ৩১ অগস্ট থেকে সোমবার পর্যন্ত মোট ৬৩টি বাড়ি নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু দুর্গা পিতুরি লেন বা সেকরাপাড়া লেনেই নয়, পাশের গৌর দে লেনেরও কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুর্গা পিতুরি লেনের পাশে মদন দত্ত লেনের কয়েকটি বাড়ির বাসিন্দাকেও সতর্ক করা হয়েছে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, যে বাড়িগুলি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলি সারাইয়ের কাজ কেন করছেন না মেট্রো কর্তৃপক্ষ? সেকরাপাড়া লেনের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘প্রায় রোজই কোনও না কোনও বাড়ি ধসে পড়ছে। নতুন করে ফাটল ধরছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ যদি গত শনিবার থেকে আর একটু সাবধান হতেন, তা হলে নতুন করে ফাটল ধরত না বাড়িগুলিতে। নতুন করে বাড়ি ধসে পড়ত না।’’ যদিও মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গ্রাউটিংয়ের মাধ্যমে মাটির তলায় সিমেন্টের মিশ্রণ পাঠিয়ে ওই এলাকায় মাটির ভিত শক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। গৌর দে লেনে গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রাউটিংয়ের কাজ চলছে পুরোদমে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy