যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন ছাত্রাবাস। —ফাইল চিত্র।
থাকা-খাওয়ার খরচের পার্থক্য অনেকটাই। তবু হস্টেল নয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা অনেকেই তাঁদের ছেলেমেয়েকে মেসে বা পেয়িং গেস্ট হিসেবে রাখার দিকেই ঝুঁকছেন। আর সেই সুযোগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে যাঁরা মেস বা পেয়িং গেস্ট হিসেবে পড়ুয়াদের ভাড়া দেন, তাঁরা দাবি করছেন, মেসে থাকলে র্যাগিংয়ের কোনও ভয় নেই।
যাদবপুর থানার পাশে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন ছাত্রাবাসে থাকার খরচ মাসে মাত্র ২৫ টাকা। এ ছাড়া, খাওয়ার জন্য খরচ হয় ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা। পড়ুয়াদের মতে, এত সস্তায় কার্যত আর কোথাও থাকা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে মেসে থাকলে তার ভাড়াই ২৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা। সঙ্গে খাওয়ার খরচ আলাদা। আর পেয়িং গেস্ট থাকতে হলে খাওয়া ও থাকা মিলিয়ে খরচ পড়ে যায় ছ’হাজার টাকার মতো।
এই খরচের তফাত তুলনা করে তাঁর ছেলের জন্য প্রথমে হস্টেল পেতেই মরিয়া হয়েছিলেন এক অভিভাবক অর্ণব সাহা। কিন্তু যাদবপুরে ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনার পরে তিনিই এখন অন্য রকম ভাবছেন। বীরভূমের বাসিন্দা অর্ণব বলেন, ‘‘ছেলেকে হস্টেলে রাখার কথা আর ভাবছি না। মেসে থাকলে খরচ বেশি হবে। তা মেনে নিয়েই আশপাশে মেসে বা পেয়িং গেস্ট হিসাবে ছেলেকে রাখার কথাই ভাবছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছে একটা মেস খুঁজেও পেয়েছি। প্রতি মাসে খরচ ৩৫০০ টাকা। খাওয়ার খরচ আলাদা।’’ তাঁর মতোই আর এক অভিভাবক শান্তনু দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ছেলের নিরাপত্তা আগে। তাই ছেলেকে পেয়িং গেস্ট হিসাবে রাখাই স্থির করেছি।’’
অভিভাবকদের এই মনোভাব বুঝে যাঁরা মেস বা পেয়িং গেস্ট রাখার ব্যবস্থা করেন, তাঁরাও তৎপর হয়েছেন। একটি মেসের মালিক রাতুল দাস বলেন, ‘‘অভিভাবকদের মেসের প্রতি যা ঝোঁক দেখছি, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে আমার মেসের ফোন নম্বর দিয়ে আরও কিছু পোস্টার সাঁটিয়েছি। অনেকেই ফোন করে খোঁজখবর নিচ্ছেন।’’
গত দশ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পেয়িং গেস্ট হিসাবে রাখছেন রীতা দাস। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাঁটাপথে তাঁর বাড়ি। রীতা বলেন, ‘‘আমাদের এখানে যিনি পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকেন, তিনি কোনও বাইরের লোককে এনে এখানে রাখতে পারবেন না। রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘরে ঢুকতে হবে। ঘরে বন্ধুদের নিয়ে পানাহারের আসর বসানো যাবে না। এই সব আগেই অভিভাবকদের জানিয়ে দেওয়া হয়। কেউ নিয়ম না মানলে অভিভাবককে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হয়।’’ রীতার দাবি, পাড়ার মধ্যে বাড়িতে পেয়িং গেস্ট রাখার ব্যবস্থা। তাই বিশৃঙ্খল কিছু ঘটলে প্রতিবেশীরাই আপত্তি করেন। তিনি বলেন, ‘‘যাদবপুরের ঘটনার পরে অনেক ফোন পাচ্ছি। দুটো সিট পড়ে রয়েছে।’’ আর একটি মেসের মালিক সুজিত কর বললেন, ‘‘আমাদের এখানে একটা ঘরে দু’জন থাকলে ৩৫০০, তিন জন থাকলে ৩৩০০ টাকা এবং একা থাকলে ৪৫০০ টাকা। এ ছাড়া, খাওয়ার খরচ আলাদা। হস্টেলের থেকে খরচ একটু বেশি ঠিকই, কিন্তু অভিভাবকেরা নিশ্চিন্তে তাঁদের ছেলেমেয়েদের রাখতে পারবেন। আমাদের সিসি ক্যামেরা রয়েছে। র্যাগিং নিয়ে অভিযোগের প্রশ্নই ওঠে না। বরং কোনও পড়ুয়া বিপদে পড়লে বাড়ির লোকের মতো পাশে দাঁড়াই আমরা। বিশৃঙ্খলা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকদের খবর দেওয়া হয়। যাদবপুরের ঘটনার পরে এখন আমাদের এখানে প্রায় সব সিটই ভর্তি হয়ে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy