Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

এগারো বছর পরেও পাল্টাল না নন্দরাম মার্কেট

এ দিন পরিদর্শনের শুরুতে পাম্প চালাতেই দেখা যায়, স্প্রিঙ্কলার ঠিক মতো কাজ করছে না। আগুন লাগলে চোদ্দোতলা ওই বাড়ির উপরে যে চাপে জল ওঠার কথা, সেই চাপও ছিল না।

সরেজমিন: নন্দরাম মার্কেট পরিদর্শনে এসে এক পুলিশকর্মীর সঙ্গে কথা বলছেন দ‌মকলের ডিজি। সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

সরেজমিন: নন্দরাম মার্কেট পরিদর্শনে এসে এক পুলিশকর্মীর সঙ্গে কথা বলছেন দ‌মকলের ডিজি। সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ০২:০০
Share: Save:

বারবার আগুন লাগে। তার পরে নিয়মমাফিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মন্ত্রী-আধিকারিকেরা। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঠেকাতে দমকলের তরফে কিছু সুপারিশ করা হয়। সেগুলি মেনে চলারও প্রতিশ্রুতি দেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই ফিরে আসে অসাবধানতার সেই পুরনো ছবি। যার জ্বলন্ত উদাহরণ নন্দরাম মার্কেট।

এগারো বছর আগে, ২০০৮ সালে ছ’দিন ধরে জ্বলেছিল ওই বাজার। এ বছর ১২ জুলাই ফের নন্দরাম মার্কেটের ন’তলায় আগুন লাগে। সে দিন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ঘটনাস্থলে এসে বলেছিলেন, প্রথম বার আগুন লাগার পরে যে সুরক্ষা-কবচের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তা কতটা মানা হয়েছে খতিয়ে দেখা হবে। মন্ত্রীর নির্দেশে সোমবার ওই বাজার পরিদর্শনে আসেন দমকলের ডিজি জগমোহন। কিন্তু চোদ্দোতলা নন্দরাম মার্কেট ঘুরে তাঁর চোখে পড়ে, অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থায় একাধিক ফাঁক রয়ে গিয়েছে এখনও। এর পরে ব্যবসায়ীদের সামনেই ক্ষোভ উগরে দেন ডিজি।

এ দিন পরিদর্শনের শুরুতে পাম্প চালাতেই দেখা যায়, স্প্রিঙ্কলার ঠিক মতো কাজ করছে না। আগুন লাগলে চোদ্দোতলা ওই বাড়ির উপরে যে চাপে জল ওঠার কথা, সেই চাপও ছিল না। এমনকি, জলাধারে ছিল না পর্যাপ্ত জলও! পাম্প চালানোর পরে প্রথম দিকে ঘোলা জল বেরোচ্ছিল। চোখের সামনে অগ্নি-সুরক্ষার এমন নমুনা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন জগমোহন। এখানেই শেষ নয়। বড়বাজারের মতো ঘিঞ্জি জায়গায় এ হেন বহুতলে আপৎকালীন সিঁড়ি এতটাই সরু যে, দমকলের ডিজি সেখান দিয়ে উপরে যেতেই পারলেন না। চোদ্দোতলা ভবনের বিভিন্ন তলে যত্রতত্র মিটার বক্স ছড়িয়ে থাকায় ব্যবসায়ীদের সিইএসসি-র সঙ্গে অবিলম্বে কথা বলতে বলেন তিনি।

প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে পরিদর্শনের শেষে কলকাতা পুলিশ, পুরসভা, সিইএসসি ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করেন জগমোহন। তিনি ব্যবসায়ীদের থেকে ওই বাড়ির অনুমোদিত নকশা দেখতে চান। কিন্তু ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁদের কাছে নকশা নেই। স্পষ্টতই ক্ষুব্ধ ডিজি তখন বলেন, ‘‘আপনারা এখানে এত দিন ধরে ব্যবসা করছেন। অথচ বহুতলের নকশাই নেই?’’ তিনি সাফ জানিয়ে দেন, শীঘ্রই কলকাতা পুরসভার থেকে ওই নকশা নিতে হবে। ২০০৮ সালে প্রথম বার আগুন লাগার পরে এত বছর কেটে গেলেও কেন এখনও ফায়ার ডিটেক্টর চালু করা গেল না, তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ডিজি। বৈঠকে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের একাংশ জনান, জলাধার রয়েছে বাজারের নীচে। অথচ আগুন লাগলে পাম্প চালাতে যেতে হয় সেই চোদ্দোতলায়। অবিলম্বে যাতে পাম্পের ব্যবস্থা নীচে করা যায়, সেই আর্জি জানান তাঁরা।

পরে জগমোহন বলেন, ‘‘নন্দরাম মার্কেটে অগ্নিরোধক ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ঘিঞ্জি ওই বাজারে চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারির জন্য কন্ট্রোল রুম খোলার কথা ব্যবসায়ীদের বলেছি। অবিলম্বে ফায়ার ডিটেক্টর চালু করতে হবে। এ ছাড়াও আরও নানা বিষয় কার্যকর করতে পুরসভা, সিইএসসি ও পুলিশের সঙ্গেও ব্যবসায়ীদের দেখা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ নির্দেশ মানার কোনও সময়সীমা বেঁধে না দিলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘‘অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু না করলে বাজার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ নন্দরাম মার্কেট বাঁচাও কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দেবদাস মুহুরি বলেন, ‘‘ব্রিটিশ আমলের এই বাড়ির খোলনলচে বদলে সংস্কার করা অনেক সময় ও খরচসাপেক্ষ। তা-ও দমকলের নির্দেশ মেনে আমরা কাজ করব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Fire Brigade Nandaram Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy