ফাইল ছবি
২৮ বছর আগে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকারপত্রে সই করেছিলেন হাবড়ার দম্পতি। কয়েক দিন আগে স্কুলে যাওয়ার পথে মোটরবাইক থেকে পড়ে মাথায় চোট পান স্ত্রী। সেই ঘটনায় সব ওলটপালট হয়ে গেলেও দেহদানের সিদ্ধান্তে অটুট ছিলেন স্বামী। তাই স্ত্রীর ব্রেন ডেথ ঘোষণার পরে তাঁর অঙ্গদানে সম্মতি দেন। তবে সেখানেই শেষ নয়। ওই প্রৌঢ়ার শরীর থেকে অঙ্গ তুলে নেওয়ার পরে চিকিৎসাবিজ্ঞানে পঠনপাঠনের জন্য তাঁর দেহটিও দান করে দিলেন স্বামী। শিক্ষা দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ওই বৃদ্ধের কথায়, ‘‘দু’জনেই অঙ্গীকার করেছিলাম যে। তা খণ্ডন করি কী করে!’’
সাধারণত অঙ্গ তুলে নেওয়ার পরে সেই দেহ দান করা যায় না। এমনকি রাজ্যে তেমন কোনও নজির এখনও পর্যন্ত নেই বলেই জানাচ্ছেন অ্যানাটমির চিকিৎসকেরা। কিন্তু সেই কাজই করলেন হাবড়ার রমেশ ভক্ত। তাঁর কথায়, ‘‘স্ত্রীর অঙ্গে চার জন নতুন জীবন পেয়েছেন। তার পরে ভাবলাম, দেহটি পুড়িয়ে নষ্ট করব কেন? দেহের কঙ্কালও তো চিকিৎসাশাস্ত্রের কাজে লাগতে পারে।’’ সোমবার সকালে ওই শিক্ষিকার দেহ তুলে দেওয়া হয় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের হাতে।
ওই বিভাগের প্রধান চিকিৎসক ভাস্কর পাল বলেন, ‘‘আমাদের কলেজে বা অন্যত্র এমন হয়েছে বলে জানা নেই। ওই মৃতদেহের ভিসেরা, কঙ্কাল চিকিৎসাশাস্ত্রে অবশ্যই কাজে লাগবে।’’
গত ২ জুলাই বোনপোর বাইকে চেপে স্কুলে যাচ্ছিলেন মঞ্জুবালা ভক্ত (৫৮)। আচমকাই রাস্তায় পড়ে গিয়ে প্রায় সংজ্ঞাহীন, কথা বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। প্রথমে তাঁকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়। পরিজনেরা মঞ্জুবালাদেবীকে সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ৮ জুলাই চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হন যে, প্রৌঢ়ার ব্রেন ডেথ হচ্ছে। কিন্তু ওই হাসপাতালে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের লাইসেন্স না থাকায় ‘রিজ়িওনাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্ল্যান্ট অর্গানাইজ়েশন’-এর (রোটো) সহযোগিতায় মঞ্জুবালাদেবীকে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়।
সূত্রের খবর, গত ১০ জুলাই, রবিবার ভোরে প্রৌঢ়ার শরীর থেকে কিডনি, হার্ট ও যকৃৎ তোলা হয়। কর্নিয়া-সহ ত্বকও দান করা হয়। রমেশবাবু বলেন, ‘‘এর পরে আমাদের ইচ্ছানুসারে গণদর্পণ ও রোটোর আধিকারিকেরা মিলে দেহটিও দান করার ব্যবস্থা করেন।’’ গণদর্পণের তরফে শ্যামল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘১৯৯০ সালে সুকুমার হোমচৌধুরীর প্রথম মরণোত্তর দেহদানের মাধ্যমে শুরু। ২০২১-এ করোনায় মৃত ব্রজ রায়ের দেহ প্যাথলজিক্যাল অটোপসির জন্য দান। তার পরে অঙ্গদান করা মৃতদেহ কঙ্কালের জন্য দেওয়া আরও একটা ইতিহাসতৈরি করল।’’
অ্যানাটমির শিক্ষক চিকিৎসক তথা এসএসকেএমের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দেহটি কঙ্কাল করা হবে জেনেও পরিজনেরা তাতে রাজি হলেন। অঙ্গদানের পরে দেহদান অবশ্যই নজির তৈরি করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy