ফাঁকা: প্রবল গরমে ক্রেতাদের দেখা নেই। কার্যত খাঁ খাঁ করছে নিউ মার্কেট চত্বর। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
দিনভর দহন জ্বালায় নাজেহাল অবস্থা। সূর্যাস্তের পরেও গায়ে বাতাস লাগছে না। বরং, চূড়ান্ত আপেক্ষিক আর্দ্রতায় ঘামের ধারাস্নান চলেছে! আবহাওয়া দফতরও জানাতে পারছে না, বর্ষা কবে আসবে। কারণ, মৌসুমি বায়ু কেরলে ঢোকার তারিখ ফেল করেছে। উল্টে জানানো হয়েছে, আগামী কয়েক দিন তাপপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি চলবে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায়। স্থানীয় ভাবে কিছু জায়গায় বৃষ্টি হলেও গরম থেকে এখনই নিস্তার নেই। এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে চিকিৎসকদের চিন্তায় রেখেছে একের পর এক হিট স্ট্রোকের ঘটনা।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জেরিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘হিট স্ট্রোকের বহু রোগী পাচ্ছি আমরা। এত শুষ্ক এবং গরম, একসঙ্গে ভাবা যায় না। মরুভূমির মতো অবস্থা হয়েছে। প্রধান পরামর্শ, সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত চড়া রোদে বেরোনো যত দূর সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।’’ হৃদ্রোগ চিকিৎসক বিশ্বকেশ মজুমদার বলেন, ‘‘গরমে এমনিতেই রক্তচাপ কমে যায়। সেটা ক্ষতি করতে পারে। তা ছাড়া যাঁদের হার্টের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জল একটু কম খেতে বলা হয়। কিন্তু, তাতে আবার শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হতে পারে। আশঙ্কা থাকে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ারও। তাই সকলকেই প্রচুর জল খেতে হবে। হিট স্ট্রোক এড়াতেও পর্যাপ্ত জল পান আর চড়া রোদে না-বেরোনো জরুরি।’’
চিকিৎসকদের পরামর্শ, সতর্ক হতে হবে নিজেদেরই। হঠাৎ এসি থাকা প্রবল ঠান্ডা জায়গায় ঢুকলাম, হঠাৎ প্রচণ্ড গরমে বেরিয়ে এলাম— সেটা করা যাবে না। কারণ, শরীর ১০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রার হেরফের নিতে পারে না। সেই সঙ্গে দেখতে হবে, শরীরে যাতে জলের ঘাটতি না হয়। ঘামের সঙ্গে যে হেতু নুনও বেরিয়ে যায়, তাই শরীরে জলের
পাশাপাশি নুনও যাওয়া দরকার। ডাবের জল খাওয়া খুব ভাল। চিঁড়ে-মুড়ি ভেজানো জল শরীরের পক্ষে আরামদায়ক। সমান গুরুত্বপূর্ণ পরনের পোশাকও। এ বিষয়ে চিকিৎসকদের ভোট পেয়েছে সুতির জামা, সানগ্লাস, সানস্ক্রিন, টুপি অথবা ছাতার ব্যবহার। কোনও মতেই কালো পোশাক ব্যবহারের পক্ষে নন চিকিৎসকেরা। ত্বক নিয়েও সতর্ক থাকতে বলছেন তাঁরা। জানাচ্ছেন, গরম পড়তেই অনেকের ত্বকে র্যাশ বেরোনো, চামড়া লালচে হয়ে যাওয়ার মতো অসুবিধা দেখা দেয়। যাঁদের ত্বক অত্যন্ত স্পর্শকাতর, তাঁদের বেশি সতর্ক থাকা জরুরি। খাবারের মধ্যে একেবারেই চলবে না রাস্তার ধারের কাটা ফল, মশলাযুক্ত খাবার ও ফাস্ট ফুড। চিকিৎসকদের মতে, অফিসপাড়ায় দুপুরে কাটা ফল খেয়ে পেটের অসুখে ভুগছেন, এমন উদাহরণ অসংখ্য।
চোখ নিয়েও তাঁরা বাড়তি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। চক্ষু চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত বললেন, ‘‘চার থেকে ২০ বছর বয়সিদের চোখে এই সময়ে এক ধরনের কনজাংটিভাইটিস দেখা যায়। চোখ লাল হয়ে যায়, প্রচণ্ড করকর করে। কিন্তু এটা ছোঁয়াচে নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে ভাল হয়ে যায়। কিন্তু পর পর দু'-তিন বছর গরমের সময়ে এই জিনিস হতে পারে। ভুল হয়, যখন অভিভাবকেরা ফের এই জিনিস হলে চিকিৎসকের
পরামর্শ ছাড়াই আগের ওষুধই দিতে থাকেন। এর জেরে চোখে ছানি পড়তে পারে। ফলে গরমে সতর্ক না হলে ভুগতে হতে পারে সব দিক থেকেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy