ফাইল চিত্র।
একটি যন্ত্র, যার ‘চোখ’ দিয়ে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি দেখতে পান চিকিৎসক। দূরে বসেই ‘জয় স্টিক’-এর মাধ্যমে তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন ওই যন্ত্রের ‘হাত’-কে। ফলে বড় কাটাছেঁড়া না করেই, কয়েকটি ক্ষুদ্র ফুটোর মাধ্যমে করা যাচ্ছে কিডনি, মূত্রথলি, মূত্রাশয়ের অস্ত্রোপচার। আধুনিক এই চিকিৎসা পদ্ধতিকেই বলা হচ্ছে রোবোটিক সার্জারি। দেশের প্রায় ৮০টি বেসরকারি হাসপাতালে এই পরিষেবা শুরু হয়েছে। এর প্রশিক্ষণ পেয়েছেন পাঁচশোর মতো শল্য চিকিৎসক।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আগে তাঁরা যে অস্ত্রোপচার করতে ছুরি-কাঁচি নিয়ে রোগীর দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটতেন, সেই কাজেই পুরোমাত্রায় সহযোগিতা করছে রোবট। বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালের ইউরোলজিস্ট অমিত ঘোষ জানাচ্ছেন, ওই যন্ত্রের মাধ্যমে দেহে ক্ষুদ্র কয়েকটি ফুটো করে অস্ত্রোপচারের নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে যায় টেলিস্কোপিক ক্যামেরা। সঙ্গে ক্যামেরা, ছুরি, কাঁচি, সুচের মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। ক্যামেরা থেকে শুরু করে অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম, সবই সংযুক্ত থাকে রোবটের সঙ্গে। ‘সার্জন কনসোল’-এর মনিটরে চোখ রেখে ‘জয় স্টিক’-এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাটাছেঁড়া, সেলাই করেন সংশ্লিষ্ট শল্য চিকিৎসক।
অমিতবাবু বলেন, ‘‘খালি চোখে চিকিৎসক যা দেখবেন, তার কয়েক গুণ বড় আকারে দেখা যায় টেলিস্কোপিক ক্যামেরায় তুলে ধরা ছবিতে। এক ইঞ্চির কোনও জিনিসকে এক ফুট বড় করে দেখা যায়। তাতে চিকিৎসকের অনেক সুবিধা হয়।’’ তিনি-সহ রোবোটিক সার্জারির সঙ্গে যুক্ত অন্য চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, পুরো বিষয়টিই রিমোট কন্ট্রোলে নিয়ন্ত্রিত। আর রোবটের ‘হাত’ ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে পারায় সেলাই করা থেকে কাটাছেঁড়ায়ও সুবিধা অনেক বেশি। এই পদ্ধতিতে অতি সূক্ষ্ম অস্ত্রোপচারও করা সম্ভব। এতে রোগীর রক্তক্ষরণ ও যন্ত্রণা কম হয়, হাসপাতালে থাকার মেয়াদও কমে যায়। প্রযুক্তি নির্ভর এই চিকিৎসা পরিষেবা এখন দেশেও আরও বেশি মাত্রায় করার সুযোগ রয়েছে বলেই মত ইংল্যান্ডের ‘কিংস-ভাট্টিকুটি ইনস্টিটিউট অব রোবোটিক সার্জারি’-র চেয়ারম্যান তথা ইউরোলজিস্ট প্রকর দাশগুপ্তের।
২০০৯ সালে তিনিই প্রথম কিংস হাসপাতালে ইউরোলজিতে রোবোটিক সার্জারি করেন। পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত ওই চিকিৎসক শনিবার জানান, আমেরিকায় মূত্রথলি, মূত্রাশয়ের সমস্যার ৯৪ শতাংশ ক্ষেত্রেই রোবোটিক সার্জারি হচ্ছে। তাতে পুনরায় ক্যানসার ফিরে আসার আশঙ্কা অনেক কম। তবে অত্যাধুনিক পদ্ধতির এই অস্ত্রোপচার প্রথম হৃদ্রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছিল। প্রকর বলেন, ‘‘হৃদ্রোগের ক্ষেত্রে জটিলতা বেশি থাকায় রোবোটিক সার্জারির সংখ্যা কিছুটা কম। কিন্তু কিডনি, মূত্রথলি, মূত্রাশয়ের অস্ত্রোপচারে এই পদ্ধতি আগামী দিনে আরও বৃদ্ধি পাবে।’’ তাঁর মতে, শুধু প্রযুক্তির উন্নতি নয়, এতে রোগীদেরও সুবিধা হবে অনেক।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এই প্রাক্তনী বছরে অন্তত তিন বার অ্যাপোলো হাসপাতালে আসেন রোবোটিক সার্জারি করতে। এ দিনও বাইপাসের ওই হাসপাতালে ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধের মূত্রথলির ক্যানসারের অস্ত্রোপচার করেন তিনি। পরে সেখানে এক অনুষ্ঠানে প্রকরবাবু জানান, রোবোটিক সার্জারির আরও অত্যাধুনিক যন্ত্র বেরিয়েছে। যা দিয়ে ছ’টি নয়, একটি ছোট ফুটোতেই অস্ত্রোপচার সম্ভব হবে। অমিতবাবু, প্রকরবাবুরা জানাচ্ছেন, বিদেশে তৈরি ওই যন্ত্রের দাম ছিল ২০ কোটি ভারতীয় মুদ্রা। এখন সেটি ভারতীয় সংস্থাও তৈরি করায় মিলছে ৫ কোটিতে। তাঁদের কথায়, ‘‘মানুষ যত এই উন্নত প্রযুক্তির পরিষেবা গ্রহণ করবেন, ততই চিকিৎসার খরচ কমবে। পুরো কেটে অস্ত্রোপচারে বেশি দিন হাসপাতালে থাকার জন্য খরচও বেশি হত। এই পদ্ধতিতে এক-দু’দিনের মধ্যেই রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy