ফাইল চিত্র।
পরিবেশের স্বার্থে পরিবেশ। নাকি রাজনৈতিক কারণে পরিবেশের ‘ব্যবহার’, আবার রাজনৈতিক কারণেই পরিবেশের ‘জলাঞ্জলি’?— আসন্ন কালীপুজোর আগে পরিবেশ রক্ষায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে এই প্রশ্নেই সরব হয়েছে পরিবেশবিদ ও পরিবেশকর্মীদের একাধিক সংগঠন। কারণ, করোনার মতো শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ও বাজি-দূষণের যৌথ আক্রমণে পরিস্থিতি যে এ বার সঙ্কটজনক হতে চলেছে, তা নিয়ে সংশয় নেই বলেই জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। যদিও বাজি-দূষণ রোধে পুলিশ কতটা সক্রিয় হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
যার কারণ, ছটপুজো নিয়ে রাজ্যের ভূমিকা। গত বছর যখন জাতীয় পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো হয়েছিল, তখন ‘ধর্মীয় আবেগ’-এর যুক্তি দিয়ে পুলিশ ছিল দর্শকের ভূমিকায়। এ বছর রাজ্য সরকার আরও এক ধাপ এগিয়ে রবীন্দ্র সরোবরে ফের ছটপুজোর অনুমতি পাওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে। এতেই পরিবেশ নিয়ে রাজ্য সরকারের ‘অবস্থান’ কী, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশকর্মীরা।
যদিও রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, আসন্ন কালীপুজোয় বাজি-নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “রাজনৈতিক চাপের বিষয় জানা নেই। বরং এ বছর অনেক আগে থেকেই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। তবে মানুষের কাছেও অনুরোধ, সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে সংযত হন। বাজি পুড়িয়ে পরিস্থিতি আর জটিল করবেন না!”
পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, অথচ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করেছিলেন, সেখানে অন্য বিষয়ের সঙ্গে পরিবেশ রক্ষায় বিজেপি সরকার কতটা ব্যর্থ, সেটাও তুলে
ধরা হয়েছিল। ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পে গঙ্গার দূষণ রোধে মোদী সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি এটাও বলা হয়েছিল,—‘পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে মোদীর ব্যর্থতা স্পষ্ট হয় যখন দেখি এনভায়রনমেন্টাল পারফরমেন্স ইনডেক্স অনুসারে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৭ নম্বরে ভারত। কী লজ্জাজনক!’
এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘যে বিষয়ে (পরিবেশ রক্ষা) কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করল শাসকদল, সময় ও পরিস্থিতি বুঝে তাকেই গুরুত্বহীন করে দিল! নয়তো রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোয় পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাজ্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বলে! এটা প্রয়োজনে পরিবেশের ব্যবহার, আবার প্রয়োজন অনুযায়ী তাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কী!’’ তাই সংক্রমণ কালে বাজি-দূষণ রোধে সরকারের উপরে ভরসা রাখতে নারাজ পরিবেশবিদ ও সংগঠনগুলি। পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্তের প্রশ্ন, ‘‘রাজনৈতিক চাপ সামলে কি ঠেকানো যাবে বাজি-দূষণ? তাই ওই দূষণ রোধে পুলিশের উপরে ভরসা না রেখে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছি।’’ পরিবেশকর্মী বনানী কক্করের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকারের কাছে যে পরিবেশ রক্ষা, দূষণ-রোধের মতো বিষয়ের গুরুত্ব নেই, ছটপুজো নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ায় সেই বার্তাই মানুষের কাছে পৌঁছল।’’
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কী ভাবে বায়ুদূষণ, মোল্লার ভেড়ির আবর্জনা-সহ একাধিক মামলায় দূষণ রোধে ‘ব্যর্থতা’-র জন্য সরকারের আর্থিক জরিমানা হয়েছে। আদিগঙ্গা, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি (সিএনজি) মামলাতেও রাজ্য সরকারকে ‘ভর্ৎসনা’ করেছে আদালত। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘শব্দ ও বায়ু, দু’ক্ষেত্রেই দূষণ রোধে পরিবেশ আদালত একাধিক নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্যকে নতুন কিছু করতে হবে না। পুরনো নির্দেশগুলির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করুক, তা হলেই দূষণ রোধ হবে।’’
অন্য পরিবেশকর্মী অজয় মিত্তলের বক্তব্য, বায়ুদূষণ রোধে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ শুধু দিল্লি কেন, কলকাতার মতো সব শহরেরই মানা উচিত। কারণ, সংশ্লিষ্ট শহরগুলির বায়ুর মান ভাল নয়। এ বছর সেই সঙ্গে করোনা সংক্রমণ যুক্ত হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শব্দবাজি হোক বা আলোবাজি, সবই যাতে বন্ধ থাকে, তা পুলিশ ও প্রশাসনকে দেখতে হবে। কারণ, এ শহরের প্রায় ৪৫ লক্ষ নাগরিকের জীবন জড়িয়ে রয়েছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy