ফাইল চিত্র।
কোভিড-আক্রান্তের তথ্য লুকিয়ে না রেখে বরং তা প্রকাশ্যে আনার দাবি উঠেছে সারা বিশ্বে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, তথ্যে স্বচ্ছতা থাকলে তা সংক্রমণ রুখতে সাহায্য করবে। এ বার সেই দাবি উঠছে বাজির নিয়মভঙ্গকারীদের ক্ষেত্রেও।
অনেকে মনে করছেন, বাজি নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও কে বা কারা নিয়ম ভাঙলেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হল, তা প্রকাশ্যে এলে শাস্তির ভয় কিছুটা হলেও বাজি-তাণ্ডব রুখতে সাহায্য করবে। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, বাজি বাজেয়াপ্ত করা অথবা কত জনকে গ্রেফতার করা হল, সেই তথ্যটুকু ছাড়া নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি গ্রহণের কোনও তথ্যই নাগরিকেরা জানতে পারেন না।
বিজ্ঞানী-গবেষকদের একাংশের বক্তব্য, যে কোনও সংক্রামক রোগ ঠেকানোর প্রাথমিক শর্তই হল তথ্যে স্বচ্ছতা। এর ব্যতিক্রম হলেই বিপদ বাড়ে। যেমন, কোভিড ১৯-এর উৎসকেন্দ্র চিন সংক্রমণের তথ্য চাপার জন্যই পরিস্থিতি এত জটিল হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরামর্শদাতার কথায়, ‘‘অনেক দেশই সংক্রমণের ঠিক তথ্য প্রকাশ্যে না আনায় সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে।’’
আরও পডুন: হকারদের বাদ রেখেই ঘুরবে লোকালের চাকা, বিক্ষোভের ডাক
কোভিড-পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে তাই পরিবেশকর্মীরা নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের তথ্য জনসমক্ষে আনার দাবি জানাচ্ছেন। পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’ এই দাবিও তুলেছে, গত বছর বাজির নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা জানাক রাজ্য। এই দাবি নিয়ে সংগঠনের তরফে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে আবেদনও জানানো হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়েছে— গত বছর সংগঠনের অভিযোগ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তদন্তের উপরে ভিত্তি করে ১১টি ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তাদের শুনানিতেও ডাকা হয়েছিল। দু’টি ক্ষেত্রে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। কিন্তু অন্য নিয়মভঙ্গকারীদের ক্ষেত্রে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি না, তার কিছুই জানা যায়নি! ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্তের কথায়, ‘‘গত বছরের নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকলে তা প্রকাশ্যে আনুক রাজ্য। আর কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এখনই তা নেওয়া হোক।’’
পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র সোমবার জানিয়েছেন, এ দিন বাজি নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ছিল। জাতীয় পরিবেশ আদালতে এ দিনই বাজি সংক্রান্ত যে মামলা ছিল, ওই বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই মামলায় গত বছর দিল্লি ও অন্য শহরে যেখানে বায়ুদূষণের মাত্রা ‘খারাপ’ বা তার নীচে ছিল, সেই শহরগুলিতে বাজি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে আদালত। ফলে সে দিকে তাকিয়ে গত বছর কালীপুজোর সাত দিন আগে ও সাত দিন পরে কলকাতা-সহ রাজ্যের ‘নন অ্যাটেনমেন্ট’ শহরগুলির বাতাসের মান কেমন ছিল, তা বার করা হচ্ছে। সৌমেনবাবুর কথায়, ‘‘মাঝারি দূষণের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব বাজির অনুমতির কথা বলা হয়েছে। সেই মতো শর্তসাপেক্ষে শুধু পরিবেশবান্ধব বাজির অনুমতি দেওয়া যায় কি না, তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে। তার পরেও যাঁরা নিয়ম ভাঙবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হচ্ছে, সেই তথ্য জনসমক্ষে আনা হতে পারে।’’
কেন নিয়মভঙ্গকারীদের তথ্য প্রকাশ্যে আনা দরকার, তা বোঝাতে গিয়ে ‘ইনস্টিটিউট অব সায়কায়াট্রি’-র অধিকর্তা প্রদীপ সাহা জানাচ্ছেন, ভাল কাজের জন্য পুরস্কার দিয়ে যেমন কোনও আচরণকে উৎসাহিত করা যায়, তেমনই শাস্তির মাধ্যমে কোনও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাঁর মতে, ‘‘বারণ সত্ত্বেও যাঁরা এ বার বাজি ফাটাবেন, তাঁরা তো গণশত্রু! তাঁদের চিহ্নিত করা হোক।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত আবার বলছেন, ‘‘ঋণখেলাপিদের তথ্য প্রচারের মাধ্যমে অন্য ঋণগ্রহীতাদের উপরে চাপ তৈরি করা হয়। একই ভাবে বাজির নিয়মভঙ্গকারীদের তথ্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ওয়েবসাইটে তুলে ধরা দরকার। যাতে সবাই জানতে পারেন, ওই কাজ করলে কী শাস্তি হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy