কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অভিনেত্রী অনুসূয়া সেনগুপ্ত এবং অভিনেত্রী ওমারা শেট্টি । রবিবার, নন্দন চত্বরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
এক জন এ শহরেরই মেয়ে। বার বার জানান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি বিভাগের ক্লাসঘর বা ক্লাসঘরের বাইরের খোলা হাওয়াই মানুষ হিসেবে গড়েপিটে নিয়েছে তাঁকে। আর এক কন্যা এই প্রথম কলকাতায় এলেন। রবিবার দুপুরে নন্দনে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের (কিফ) আসরে তাঁদের ছবি ‘দ্য শেমলেস’ দেখানোর পরে কানে ভারতের প্রথম সেরার শিরোপাধারিণী অভিনেত্রী অনসূয়া সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘আমার শহরে, নন্দনের পর্দায় আমাকে লিড চরিত্রে রেখে সিনেমায় নিজেকে দেখছি! কানের থেকে এ অভিজ্ঞতাও কম নয়! জীবনের একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।’’ কানের সেরা অভিনেত্রী অনসূয়া হলেও ‘দ্য শেমলেস’ জুড়ে ঠাণের মেয়ে ওমারাও রয়েছেন সমানে সমানে। শিশুর মতো উচ্ছ্বাসে তিনিও বললেন, ‘‘ছবি দেখার লম্বা লাইন, দর্শকদের ভালবাসায় নিজেকেও কলকাতার মেয়ে বলেই মনে হচ্ছে।’’
দুই নারীর স্পর্ধার উড়ান বুলগেরিয়ার পরিচালক কনস্তান্তিন বোজ়ানভের ছবি ‘দ্য শেমলেস’ই কিফের রবিবাসরীয় ভোজের মেন কোর্স। কানে অনসূয়ার সাফল্যের খবর আসা ইস্তক এ ছবি দেখার জন্য মুখিয়ে ছিল কলকাতা। মুম্বইয়ে গত অক্টোবরে মুম্বই চলচ্চিত্র উৎসব বা মামিতে মাত্র দু’টি শো-তে দেখা গিয়েছে অনসূয়াদের ছবি। তার পরেই নন্দনের এই শো। আজ, সোমবার সকাল ১১টায় নজরুলতীর্থ, কাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টেয় রাধা স্টুডিয়োতেও কানে ভারতকে গর্বিত করা অভিনেত্রীর ছবিটি দেখা যাবে। এর পরে তা কেরল, চেন্নাইয়ের উৎসবে যাওয়ার কথা। কিন্তু সাধারণ দর্শক ‘দ্য শেমলেস’ কবে দেখতে পাবেন, তা এখনও অনিশ্চিত। ফরাসি, সুইস নির্মাতাদের সঙ্গে এ ছবির অন্যতম প্রযোজক, মুম্বইবাসী মোহন নাডার বললেন, ‘‘ছবিটা এ বার সেন্সর বোর্ডে পাঠানো হবে। তার পরে দেখা যাক!’’
ছবিতে রেণুকা ওরফে অনসূয়া দাপুটে, সাহসী, তেজস্বিনী। পাকেচক্রে পেশায় যৌনকর্মী। দেবিকা ওরফে ওমারা তুলনায় মুখচোরা, শান্ত, ভিতু। ঠাকুরদেবতার ভর, কুসংস্কার ভরা সাধনার মোড়কে অনেকটা দেবদাসীদের আদলে দেবিকার মা, দিদিমারাও যৌন পেশার সঙ্গে জড়িয়ে। ‘দ্য শেমলেস’ এই দু’টি মেয়ের ভালবাসা, জীবনের প্রতি আস্থার গল্প। সমাজের নানা বাধা জয় করে অকুণ্ঠ, মুক্ত, নির্ভার হয়ে উঠতে চায় তারা। সত্যজিতের ‘চারুলতা’র ভক্ত ওমারা বলছিলেন, ‘‘আমার কাছে শেমলেস হয়ে ওঠা আসলে মুক্তির স্বাদ।’’ পরিচালক কনস্তান্তিন এক বর্ণ হিন্দি বোঝেন না। অনসূয়ারা বলছিলেন, ‘‘স্ক্রিপ্ট, ওয়র্কশপ সব কিছুতে উনি আমাদের উপরেই পূর্ণ আস্থা রাখেন। অদ্ভূত ভাবে সবার সঙ্গে মিলে কাজ করা শেখালেন কনস্তান্তিন!’’
এ ছবিতে রেণু, দেবিকাদের লড়াই কিন্তু সংগঠিত ধর্ম ও রাজনীতির নিষ্ঠুর শোষণ বা পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধেই। নিষ্ঠুর অত্যাচারী যে পুরুষের ক্ষমতার সঙ্গে এ মেয়েদের লড়তে হয়, সে আবার ‘রামসেনা’ বলে একটি দলের নেতা। ভারতে রাজনৈতিক-সামাজিক পটভূমি নিয়ে এ ছবিতে নিহিত মন্তব্য যে সবার ভাল না-ও লাগতে পারে, তা মানেন, ‘দ্য শেমলেস’-এর দুই কন্যাই। প্রযোজক মোহন বললেন, ‘‘কাউকে চটানো আমাদের মতলব নয়। আশা করি, ভারতে সবার সামনে আমাদের গল্পটা বলার সুযোগ পাব।’’ তার আগেই অবশ্য কলকাতার হৃদয় জিতে নিলেন অনসূয়া, ওমারা-রা। কানের সাফল্যের পরে দুই অভিনেত্রী, পরিচালক গলা জড়িয়ে কেঁদেছেন। কলকাতার শোয়ের পরেও দু’জনেই বললেন, ‘‘দু’টি মেয়েকে লিড চরিত্রে রেখে আমাদের ছবির জন্য এত ভালবাসা মনে থেকে যাবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy