এই ঘর থেকেই উদ্ধার হয় সুস্মিতা মণ্ডলের দেহ। নিজস্ব চিত্র
পর্ণশ্রীতে মা-ছেলের খুনের ঘটনায় জড়িত তাঁদেরই অতি পরিচিত কেউ, সন্দেহ তদন্তকারীদের। পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে অন্য কেউ পরিকল্পনামাফিক এই খুন করে থাকতে পারে বলেও মনে করছেন তাঁরা। ঘটনার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে। মঙ্গলবার রাতে পাওয়া ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও খুনের প্রমাণ স্পষ্ট হয়েছে। মায়ের দেহে ২০টি আঘাতের চিহ্ন মিলেছে এবং কিশোরের দেহে আঘাতের পাঁচটি চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।
সোমবার রাতে মা সুস্মিতা মণ্ডল (৪৫) এবং ছেলে তমোজিৎ মণ্ডলের (১৩) দেহ উদ্ধারের পর থেকে গৃহকর্তা তপন মণ্ডল এবং আবাসনের একাধিক বাসিন্দাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। খুনের সময়ে তমোজিতের অনলাইন ক্লাস চলছিল বলে অনুমান পুলিশের। সুস্মিতার দেহ যে ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে, তার পাশের ঘরের খাটে ছিল কিশোরের রক্তাক্ত দেহ। তার গলার ডান দিকে ক্ষত ছিল। পরনে থাকা স্কুলের জামা এবং টাইও রক্তমাখা ছিল। খাটের পাশে থাকা অষ্টম শ্রেণির কিশোরের খাতাবইয়েও লেগেছিল রক্ত। ফরেন্সিক দলের সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরে তদন্তকারীরা জানান, সুস্মিতার গলার নলি কাটার পরেই তমোজিৎকে সম্ভবত খুন করা হয়েছে। মহিলার দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। অনুমান, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য ফ্ল্যাটের ভিতরে স্নান করেছে আততায়ী। তার আগে বেসিনে হাতও ধুয়েছে।
তদন্তে জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটের পর থেকে অনলাইনে আর কোনও ক্লাস তমোজিৎ করেনি। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, দুপুরে খাওয়ার দু’ঘণ্টা পরেই খুন করা হয়েছে তাঁদের। দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে তপনবাবু কোথায় ছিলেন, তা জানতে তাঁর থিয়েটার রোডের কর্মস্থলে যান তদন্তকারীরা। জানা যায়, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার পরে তপনবাবু ব্যাঙ্কেরই কাজে বেরিয়ে যান। ফেরেন বিকেলে। সন্ধ্যা ৭টার পরে ফের ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে যান। যে যে কাজের সূত্রে তিনি বেরিয়েছিলেন, সে সব তিনি ব্যাঙ্কে জমা দিয়েছেন বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।
এ দিন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা ঘর থেকে এবং বাইরের জলের পাইপ থেকে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন। ঘটনার পর থেকে উধাও তমোজিতের মোবাইল। পাওয়া যাচ্ছে না ঘরের চাবির গোছাটিও। সূত্রের খবর, স্বামীর ফোন পেলে ওই চাবিই দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দিতেন সুস্মিতা। ঘরের ভিতরে একাধিক জিনিস লন্ডভন্ড ছিল। কিছু গয়না চুরি গেলেও আলমারি বা অন্য সব গোছানোই ছিল। অতএব লুটের জন্য খুন নয় বলেই অনুমান পুলিশের।
এক তদন্তকারী জানান, পরিচিত ব্যক্তি ছাড়া এ ভাবে খুন এক প্রকার অসম্ভব। কারণ, আততায়ীর সঙ্গে মা-ছেলের ধাক্কাধাক্কির চিহ্ন ঘরে মেলেনি! অর্থাৎ, আততায়ী বাধাই পায়নি। আততায়ী যে পরিচিত, সেই সন্দেহকে আরও কয়েকটি জিনিস জোরালো করছে। তা হল, সুস্মিতা অপরিচিত কাউকে ঢুকতে দিতেন না বলে জানা গিয়েছে। অন্য কারণটি হল, এক জন খুন হওয়ার সময়ে বাধা দিলে অন্য ঘরের বাসিন্দার টের পাওয়া উচিত। পুলিশের অনুমান, পরিচিত দেখেই দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগে পিছন থেকে হয়তো দু’জনকে খুন করা হয়েছে।
ওই রাতেই সুস্মিতার স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত থানায় চলে জিজ্ঞাসাবাদ। তদন্তকারীদের দাবি, তাঁর বয়ানে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। তা দেখা হচ্ছে। তপনবাবুর দাবি, রাত সাড়ে আটটার পরে বাড়ির নীচ থেকে স্ত্রীকে ফোন করেন তিনি। সাড়া না পেয়ে তেতলার ফ্ল্যাটে ওঠেন। সদর দরজা ভেজানো ছিল। ধাক্কা দিতেই তা খুলে যায়। ঢুকে দেখেন, দুই ঘরে স্ত্রী এবং ছেলের দেহ পড়ে। যদিও তমোজিতের গৃহশিক্ষক পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি সাড়ে ৫টা নাগাদ ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখেন, দরজা বন্ধ! বার বার বেল বাজালেও কেউ দরজা না খোলায় তিনি ফিরে যান। এ দিন তপনবাবুকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে লালবাজারে। আবাসনের বেশ কয়েক জনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, আবাসনের মূল গেটে বেশির ভাগ সময়ে তালা লাগানো থাকে। দুপুরে বন্ধই থাকে। তা হলে কে দুপুরে গ্রিলের তালা খুলেছিল? ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। সুস্মিতার বাবা রূপম চট্টোপাধ্যায় জানান, মেয়ে ও জামাইয়ের মধ্যে অশান্তির খবর তিনি জানতেন না।
বিকেলে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, পুলিশকে বলা হয়েছে তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy