Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Crime

বিকল্প নম্বর ও ফেসবুকের সূত্র ধরে অপহরণে অভিযুক্ত ধৃত

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত গত শুক্রবার।

সুজয় হাজরা।

সুজয় হাজরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৪৭
Share: Save:

ছক কষে আত্মগোপন করেও শেষ রক্ষা হল না। বিকল্প নম্বরের সূত্র ধরেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে গেল কিশোরীকে অপহরণের ঘটনায় অভিযুক্ত এক যুবক। শনিবার রাতে, ধৃতের বসিরহাটের বাড়ি থেকে। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতের নাম সুজয় হাজরা। বছর ছাব্বিশের ধৃতকে রবিবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত গত শুক্রবার। বছর ষোলোর এক কিশোরী নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে বলে নিউ আলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তার পরিবারের লোকজন। কিশোরীর ফোন ওই দিন সকাল থেকেই বন্ধ ছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ একটি অপহরণের ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে। ওই কিশোরী কোনও প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়েছে কি না, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তা জানার চেষ্টা করেন তদন্তকারীরা। কিন্তু সেই সংক্রান্ত কোনও সূত্র মিলছিল না।

ওই রাতেই কিশোরীর এক কাকার কাছে অচেনা নম্বর থেকে একটি ফোন আসে। তাতে জানতে চাওয়া হয়, ‘‘আপনার ভাইঝি কি অপহৃত হয়েছে ভাবছেন?’’ ওই ফোনে আরও জানানো হয়, ‘‘সে নিজের ইচ্ছেতেই এসেছে। যেখানেই আছে, ভাল আছে!’’ কাকার মাধ্যমে এই খবর থানায় পৌঁছতেই পুলিশ ওই মোবাইল ফোনের নম্বর ধরে খোঁজ শুরু করে। দেখা যায়, ফোনটি বসিরহাট পুরাতন বাজারের কাছে চালু রয়েছে। তদন্তকারীদের একটি দল শনিবার সকালেই বসিরহাটে যায়। মোবাইল ফোনটি যাঁর, তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। বোঝা যায়, ওই ব্যক্তির সঙ্গে এই কিশোরীর নিখোঁজ হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। ওই ব্যক্তি পুলিশকে জানান, বিপদে পড়ে বাড়িতে ফোন করতে চায় বলে এক তরুণ তাঁর কাছ থেকে ফোনটি নিয়েছিল। এর বেশি তিনি আর কিছুই জানেন না। যদিও সেই তরুণকে দেখলেই চিনতে পারবেন বলে জানান ওই ব্যক্তি।

এর পরেই নিউ আলিপুর থানার তরফে নিখোঁজ কিশোরীর মোবাইলের ‘কল ডিটেলস রেকর্ড’ (সিডিআর) বার করা হয়। সেই সূত্র থেকে দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট নম্বরে কয়েক মাস ধরে তার কথাবার্তা বেড়েছিল। যদিও কিশোরীর ফোন নম্বরের মতো সেই নম্বরটিও বন্ধ ছিল। নম্বরটি যে টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিউ আলিপুর থানা। সেটি কার নামে নথিভুক্ত রয়েছে তা জানার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোনও বিকল্প নম্বর রয়েছে কি না, তাও জানতে চাওয়া হয়। সেই সূত্রেই পুলিশের হাতে আসে একটি বিকল্প নম্বর। তবে সেটিও বন্ধ ছিল। বিকল্প ওই ফোন নম্বর দিয়ে কোনও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট রয়েছে কি না, তা খুঁজতে শুরু করেন এক তদন্তকারী। দেখা যায়, ওই নম্বর দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি অ্যাকাউন্ট চালু রয়েছে। কিশোরী যে ফোন নম্বরে কথা বলত, সেটি দিয়ে খুঁজে সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও একটি অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়। কিন্তু দু’টি অ্যাকাউন্টের মালিকের একই নাম। তবে প্রোফাইলের ছবি আলাদা। এতেই সন্দেহ বাড়ে তদন্তকারীদের। বিকল্প নম্বর দিয়ে খোলা অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল ছবি বার করে দেখানো হয় বসিরহাটের সেই ব্যক্তিকে। তিনি দেখেই চিনতে পারেন। জানান, ওই তরুণই তাঁর থেকে সে দিন ফোনটি চায়। বসিরহাটের ওই এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে রাতেই গ্রেফতার হয় অভিযুক্ত। কিশোরীকে উদ্ধার করে শারীরিক পরীক্ষার পরে হোমে পাঠানো হয়েছে।

জেরায় ধৃত জানায়, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিখোঁজ কিশোরীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। কয়েক মাস কথাবার্তা চালানোর পরে শুক্রবার হাওড়া স্টেশনে তারা দেখা করে। কিশোরীকে এর পরে সে বসিরহাটে নিয়ে যায়। বিয়ে করে সেখানেই থাকবে বলে স্থির করে। কিশোরী পুলিশকে বলে, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ছেলেটির ছবি দেখে আমি কথা বলেছি, সামনে গিয়ে দেখি সে আলাদা। তখন ও আমায় বলে, ‘ওই ছেলেটিকে দেখতে ভাল আর আমায় দেখতে খারাপ বলে তুমি থাকবে না?’ ওর কথা শুনে নিজেকে ছোট মনে হয়েছিল। তাই সঙ্গে চলে গিয়েছিলাম।’’

পুলিশ অপহরণের ধারা যুক্ত করে তদন্ত শুরু করলেও দ্রুত কিশোরীর গোপন জবানবন্দি হওয়ার কথা। এর পরে শারীরিক নিগ্রহ সংক্রান্ত প্রমাণ পেলে ধারা পরিবর্তন হতে পারে বলেও তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Kidnapping Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy