Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

‘আমার দাদা নোবেলজয়ী, তবে খুবই সাধারণ’

সোমবার দিল্লি থেকে বিমানে ওঠার আগেই অনিরুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে পেরেছিলেন, দাদার নোবেল জয়ের খবর।

সহোদর: মা ও দাদার সঙ্গে অনিরুদ্ধ (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র

সহোদর: মা ও দাদার সঙ্গে অনিরুদ্ধ (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৩২
Share: Save:

ভাল ছাত্রেরা নাকি সারা দিন বই মুখে নিয়ে বসে থাকে। কিন্তু যিনি নোবেল জয় করেন তিনিও কি তাই করেন? অন্যদের প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। তবে নিজের দাদাকে কখনও সারা দিন বই মুখে নিয়ে বসে থাকতে দেখেননি নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহোদর। উল্টে জানালেন, আড্ডায় নাকি ভীষণ উৎসাহ অভিজিৎবাবুর। রান্নাবান্নায়ও তুখোড়।

সোমবার দিল্লি থেকে বিমানে ওঠার আগেই অনিরুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে পেরেছিলেন, দাদার নোবেল জয়ের খবর। মাঝ আকাশে ওড়ার সময়ে মনের মধ্যে চেপে রেখেছিলেন উচ্ছ্বাস। সন্ধ্যায় বিমান কলকাতার মাটি ছুঁতেই দাদা অভিজিৎবাবুকে ফোনে ধরে ছোট ভাই বলেছিলেন, ‘ফাটিয়ে দিয়েছ...!’

অভিজিৎবাবুর চেয়ে বয়সে সাড়ে চার বছরের ছোট অনিরুদ্ধ পেশায় ব্র্যান্ড ও স্ট্র্যাটেজির পরামর্শদাতা। কাজের প্রয়োজনে সোমবার দিল্লি থেকে কলকাতায় এসেছেন। ‘ফাটিয়ে দিয়েছ’— ভাইয়ের এ হেন শুভেচ্ছাবার্তা শুনে হেসেছিলেন একুশ বছর পরে ফের বাংলায় নোবেল এনে দেওয়া অভিজিৎ বিনায়ক।

আসলে তাঁদের দাদা-ভাইয়ের সম্পর্কের বাইরে নিবিড় বন্ধুত্ব রয়েছে বলেই জানান অনিরুদ্ধ। নোবেলজয়ী দাদাকে কখনও সারা দিন বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে থাকতে দেখেছেন বলে মনে করতে পারলেন না। বললেন, ‘‘দাদা পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী। তবে সারা দিন পড়াশোনা করত তা একেবারেই নয়। বরং দাদার প্রচুর বন্ধু ছিল। আড্ডা, গানবাজনা, সবই চলত।’’

মঙ্গলবার এক বন্ধুর মাধ্যমে দাদা ও বৌদির নোবেল পাওয়ার খবর পেয়েছেন অনিরুদ্ধ। মাত্র ৫৮ বছর বয়সেই দাদা যে নোবেল পেতে পারেন, তা অবশ্য ভাবেননি অনিরুদ্ধ। তবে মা নির্মলাদেবী এবং তাঁর বিশ্বাস ছিল, বছর পাঁচেক পরে হয়তো নোবেল পাবেন অভিজিৎবাবু। কলকাতায় সময় না হলেও দিল্লিতে দাদা-ভাইয়ের মাঝেমধ্যে দেখা হয়।
আর প্রতি বছর নিয়ম করে গরমের ছুটিতে মা নির্মলাদেবীকে নিয়ে দু’ভাই দিন দশেকের জন্য পাড়ি দেন দেশ কিংবা বিদেশের কোনও গন্তব্যে। হোটেলের আলাদা ঘরে নয়। বরং মাকে নিয়ে বাড়ি ভাড়া করেই থাকেন দুই ভাই। অনিরুদ্ধবাবু জানান, বাইরে গেলে হেঁসেলের দায়িত্ব সামলান তাঁর নোবেলজয়ী দাদাই। দেশি থেকে বিদেশি বিভিন্ন পদ অনায়াসেই রেঁধে ফেলেন অভিজিৎবাবু। অনিরুদ্ধ বলেন, ‘‘দিল্লিতে আমাদের বাড়িতে এক দিন কেক তৈরি নিয়ে কথা হচ্ছিল। আলোচনা হচ্ছিল মিষ্টি ছাড়া কেক ভাল হয় না। আচমকাই রান্না ঘরে কী কী আছে জেনে নিয়ে দাদা সটান গিয়ে সুস্বাদু অথচ মিষ্টি ছাড়া একটি কেক বানিয়ে ফেলল।’’

নতুন বছরে তাঁরা সকলে মিলে পাড়ি দেবেন ফুকেত। কলকাতার কাজ মিটিয়ে দু’দিনের মধ্যে দিল্লি ফিরে যাবেন অনিরুদ্ধ। শনিবার সেখানেই দেখা হবে দাদা-ভাইয়ের। প্রতি বারের মতো এ বারও দাদা বিশেষ কোনও উপহার আনবেন ভাইয়ের জন্য। তবে বিশ্বজয়ী দাদার জন্য তিনি কী উপহার কিনবেন, তা অবশ্য এখনও ঠিক করেননি অনিরুদ্ধ। হেসে বললেন, ‘‘কিছু একটা কিনে নেব। আমার দাদা নোবেলজয়ী, তবে খুবই সাধারণ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Abhijit Banerjee Nobel Prize Economics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy