Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
COVID Deaths

Covid Death: ‘অক্সিজেনের অভাবে কেউ মরেননি! মায়ের মৃত্যু কী ভাবে?’

কথাগুলো বলেই কয়েক মুহূর্ত চুপ পর্ণশ্রীর মহেন্দ্র ব্যানার্জি রোডের বাসিন্দা সুমন নাথ।

মায়ের ছবি হাতে সুমন নাথ। নিজস্ব চিত্র

মায়ের ছবি হাতে সুমন নাথ। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২১ ০৭:২১
Share: Save:

রাত তিনটেয় হাসপাতাল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, অক্সিজেন শেষ। রোগীর পরিবারকেই অক্সিজেন জোগাড় করে আনতে হবে! শহর জুড়ে তখন অক্সিজেনের হাহাকার চলছে। হন্যে হয়ে শুধু একটি জায়গা মিলেছিল, যেখানে ফাঁকা সিলিন্ডার নিয়ে গেলে অক্সিজেন ভরে দেওয়া হবে। অভিযোগ, হাসপাতালে গিয়ে তা জানালে বলে দেওয়া হয়, ফাঁকা সিলিন্ডারও দেওয়া যাবে না।

অনেক খুঁজে সকাল ন’টা নাগাদ ভাড়ায় পাওয়া সিলিন্ডার যখন উত্তর কলকাতা থেকে বেহালার বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্যাক্সিতে তুলছেন তিনি, তখন হাসপাতাল থেকে তাঁর মাসি ফোন করে বলেন, ‘‘অক্সিজেন এনে কী হবে? তোর মা বেঁচে নেই!’’

কথাগুলো বলেই কয়েক মুহূর্ত চুপ পর্ণশ্রীর মহেন্দ্র ব্যানার্জি রোডের বাসিন্দা সুমন নাথ। তিন মাস আগে মাকে হারানো সেই ছেলে বললেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, অক্সিজেনের অভাবে কেউ মারাই যাননি! মা এবং তাঁর মতো আরও অনেকের মৃত্যু তা হলে কী ভাবে হল?’’

কংগ্রেসের সাংসদ তথা সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপালের প্রশ্নের উত্তরে সংসদে নরেন্দ্র মোদীর সরকার জানিয়েছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে অক্সিজেনের অভাব ছিল। কিন্তু সেই অভাবে কারও মৃত্যুর খবর কেন্দ্রের কাছে নেই! যদিও এ দেশে সংক্রমিতেরা তখন কী ভাবে অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছিলেন, সেই স্মৃতি জনমানসে টাটকা। অক্সিজেন-সঙ্কট নিয়ে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল হাসপাতালগুলিও। পরিস্থিতি সামলাতে মাসখানেক শিল্প ক্ষেত্রে অক্সিজেনের ব্যবহার বন্ধ রাখে কেন্দ্র।

সুমন জানাচ্ছেন, মে-র শুরুতে হঠাৎ জ্বর হয় তাঁর মা, বছর সাতচল্লিশের যমুনা নাথের। পাড়ার চিকিৎসককে দেখিয়ে দু’দিনে তা কমেও যায়। তবে খুব দুর্বলতা ছিল। ১০ মে ভোরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় যমুনাদেবীর। ওই দিনই বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। সুমনের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালে একটি সিলিন্ডার থেকে চার-পাঁচ জনকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। ওই দিনই রাত তিনটে নাগাদ বলা হয়, অক্সিজেনের ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে। চেষ্টা করেও পারিনি। রাত তিনটে থেকে সকাল ন’টা পর্যন্ত মা অক্সিজেন ছাড়া ছিল।’’ ছেলের দাবি, ‘‘হাসপাতাল ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানোয় কর্তৃপক্ষ বলেন, অক্সিজেন নয়, সিলিন্ডারে লাগানোর ফ্লো-মিটারের অভাবে পরিষেবা দিতে সমস্যা হয়েছে। তা-ই যদি হবে, তা হলে ফ্লো-মিটার নিয়ে আসতে বলা হল না কেন? রাজ্যের এক মন্ত্রী আমাকে ফোন করে বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন। তার পরেও অবশ্য পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।”

যমুনাদেবী গৃহকর্মীর কাজ করতেন। স্বামী অরূপ নাথ রিকশাচালক। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সুমন একটি জল পরিশোধন যন্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থায় মিস্ত্রির কাজে ঢুকেছেন। যমুনাদেবীর বাড়ি পৌঁছে দেখা গেল, টালির চালের ঘর আর সঙ্কীর্ণ বারান্দায় বাবা-ছেলের সংসার। দেওয়ালে পরিবারের অনেকের ছবি। স্বামীর সঙ্গে যমুনাদেবীর পুরনো ছবি থাকলেও সাম্প্রতিক ছবি নেই কেন? সুমন বলেন, ‘‘কাজ থেকে ফিরলে মা-ই খাবার দিত। আমি রান্না পারি না। বাবা এক বেলা রিকশা চালায়, অন্য বেলা রান্না আর ঘরের কাজ করে। মৃত্যুর পরে মায়ের ছবি বাঁধিয়েছিলাম। কিন্তু টাঙানোর সাহস হয় না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus COVID Deaths
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy