আর্শিয়া।
আজ আমাদের কম্পিউটারের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দিতে স্কুলে যাচ্ছিলাম। সঙ্গে মা সুজাতা রায়ও ছিলেন। আরও কয়েক জন পড়ুয়ার অভিভাবকও বাসে ছিলেন। আমার মা বাসের সামনের দিকের একটি সিটে বসেছিলেন। আমি বসেছিলাম পিছন দিকে। বাসটা প্রথম থেকেই জোরে চলছিল। চিৎপুর লকগেট উড়ালপুলে ওঠার পরে বাসের গতি হঠাৎ আরও বেড়ে গেল। উড়ালপুল থেকে নেমে সামনের সিগন্যালে থামল তো না-ই, উল্টে গতি আরও বেড়ে গেল। আমরা সবাই চিৎকার করে উঠলাম। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রচণ্ড জোরে একটা শব্দ আর ঝাঁকুনি। আমরা সবাই বাসের এ দিকে-ও দিকে ছিটকে পড়লাম। মাথায় চোট পেলাম খুব জোরে। সবাই তখন ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছি। আমি চিৎকার করে মাকে ডাকছিলাম। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বাসের ভিতরে তখন অনেক রক্ত। আমাকে কে উদ্ধার করল মনে নেই।
হাসপাতালে এসে দেখলাম, আমার থেকে মায়ের অনেক বেশি চোট লেগেছে। মায়ের মাথা ফেটে গিয়েছে। হাতও ভেঙেছে। দাঁত ও ঠোঁটেও মারাত্মক চোট পেয়েছে মা। ওই অবস্থায় মাকে দেখে আমি হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করি। যন্ত্রণায় মা কথাই বলতে পারছিল না। মাকে বারবার জিজ্ঞাসা করতে থাকি, তুমি কেমন আছ? ঠিক আছ তো? মাকে কিছু ক্ষণ পরে হুইলচেয়ারে করে ট্রমা কেয়ার থেকে হাসপাতালের অন্য একটা জায়গায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেল।
আমি একা নই, আমার বেশ কয়েক জন বন্ধুও এই দুর্ঘটনায় চোট পেয়েছে। ট্রমা কেয়ার থেকে বেরিয়ে বাইরে একটা জায়গায় বসে কাঁদছিলাম। আমি মানসিক ভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম যে, আমার বন্ধুর মায়েরাও তখন আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। কিন্তু কিছুতেই যেন স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। আতঙ্ক কাটছিল না। শুধু মনে হচ্ছিল, মা কেন বাসের সামনে বসেছিল? তাই তো বেশি চোট পেল।
তত ক্ষণে আমার বাবা দীপঙ্কর রায় খবর পেয়ে চলে এসেছেন হাসপাতালে। বাবাকে দেখে কিছুটা স্বস্তি পাই আমি। সামনেই পরীক্ষা রয়েছে। এখন আমার যা মানসিক অবস্থা, কী ভাবে পরীক্ষাগুলো দেব জানি না। মনে মনে শুধু বলছি, আর কখনও স্কুলবাসে চড়ব না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy