মনোযোগী: প্রতিমার কাজ শেষ করছেন চন্দন। নিজস্ব চিত্র
আপাতত তিনি ‘মুক্ত’। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের বাসিন্দা চন্দন চন্দ প্রতিমা তৈরির কাজ করে জীবনের মূল স্রোতে ফিরছেন। তাঁর হাতের তৈরি কালী প্রতিমা পোস্তা থানা এলাকার পাথুরিয়াঘাটা বালক সঙ্ঘের পুজোয় এ বার ঠাঁই পেয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেই প্রতিমা সুদূর মেদিনীপুর থেকে এসে পৌঁছেছে কলকাতায়।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত চন্দনের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে মেদিনীপুর সংশোধনাগারে। পরের ১১ বছর কেটেছে আলিপুর সংশোধনাগারে। দু’জায়গায় ভাল কাজ ও ব্যবহারের জন্য সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা মুক্ত সংশোধনাগারে যাওয়ার সুযোগ পান। সেই মতো গত বছর থেকেই চন্দন মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগারে রয়েছেন। নিজের দক্ষতায় মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগারের কাছে প্রতিমা তৈরির স্টুডিয়ো তৈরি করেছেন। মুক্ত সংশোধনাগার থেকে সকাল ছ’টায় বেরিয়ে কাজ করার সুযোগ পান চন্দন। আবার রাত আটটায় তাঁকে মুক্ত সংশোধনাগারে ঢুকে পড়তে হয়। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত চন্দন এখন প্রতিমা তৈরিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। চন্দনের কথায়, ‘‘গরাদের বাইরে ছবি তোলা ছিল আমার নেশা। এ ছাড়াও ছোটবেলায় কুমোরটুলিতে প্রতিমা গড়ায় হাতেখড়ি হয়েছিল। ২০০০ সালে একটি ঘটনার পরে কারাগারই আমার ঘর। ঠিক করে নিই প্রতিমা তৈরি করেই উপার্জন করব।’’ গত বছর আলিপুর সংশোধনাগারে দুর্গা প্রতিমা চন্দনের হাতেই তৈরি হয়েছিল।
চন্দনের কথায়, ‘‘আসামির পরিচয় ঝেড়ে ফেলে নিজ নিজ প্রতিভায় নিজেদের মেলে ধরতে চাই। আমার সঙ্গে মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগারের আরও দুই বন্দি কাজ করে উপার্জন করছেন।’’ দাঁতনে এক চিলতে ঘরে স্ত্রী এবং বৃদ্ধা মায়ের সংসার। প্রতিমা নির্মাণের উপার্জনেই দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। সংসারও চলে তাঁর টাকায়। সংশোধনাগারের এক কর্তার কথায়, ‘‘খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত চন্দন সংশোধনাগারে থেকে নিজেকে যে ভাবে আমূল বদলে ফেলেছেন, তা অন্য বন্দিদের কাছেও শিক্ষণীয়। ওঁকে দেখে সংশোধনাগারের অন্য বন্দিরাও উৎসাহিত হচ্ছেন।’’ শৈল্পিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি লেখাপড়াও করছেন চন্দন। গত বছর সংশোধনাগার থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছেন। চন্দনের কথায়, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক দেব। পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি।’’
চন্দনের প্রতিমার চাহিদা তৈরি হয়েছে কলকাতায়। গত বছর থেকে দুর্গা, বিশ্বকর্মা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কালী প্রতিমার বায়না পাচ্ছেন। পাথুরিয়াঘাটা বালক সঙ্ঘ পুজো কমিটির সম্পাদক সৌরভ পাত্রের কথায়, ‘‘গত দু’বছরে চন্দনদার হাতে তৈরি কালী প্রতিমা আমাদের মণ্ডপে আসছে। দু’বছর চন্দনদা আলিপুর সংশোধনাগারে থাকায় প্রতিমা আনতে কোনও অসুবিধা হয়নি।’’ সৌরভবাবুর সংযোজন, ‘‘চন্দনদার হাতের মুন্সিয়ানা না বললেই নয়। যার জন্য তিনি সুদূর মেদিনীপুর চলে গেলেও অতিরিক্ত টাকা খরচ করে আমরা তাঁরই প্রতিমা নিয়ে এসেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy