পেট থেকে বেরোনো সেই চুল। নিজস্ব চিত্র।
ক্রমেই খাওয়া কমে যাচ্ছিল বছর ১১-র মেয়েটির। তরল খাবার ছাড়া কিছু খেলেই বমি করে ফেলত। এর ফলে রক্তাল্পতায় ভুগতে শুরু করেছিল সে। হু হু করে কমছিল ওজন। সঙ্গে ছিল একটানা অসহ্য পেটের যন্ত্রণা। এমন পরিস্থিতিতে মেয়েকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসেন অভিভাবকেরা। অবশেষে সেই বালিকার পেট কেটে বেরোল পাকস্থলী ভর্তি চুলের টিউমারের মতোই শক্ত খোঁপা! দৈর্ঘ্যে যা ৯.৩ ইঞ্চি, প্রস্থে ৪.৪ ইঞ্চি, ওজনে ১ কেজি ৩০০ গ্রাম!
কী ভাবে এমনটা সম্ভব? চিকিৎসকদের মতে, ওই বালিকা ‘ট্রাইকো টিলো ম্যানিয়া’র শিকার। মানসিক এই অসুখে অবসাদ এবং উদ্বেগের কারণে রোগী নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে থাকেন। অনেকে আবার সেই চুল খেয়েও নেন। তাঁদের ক্ষেত্রে এই অসুখটিকে বলা হয় ‘ট্রাইকো টিলো ফেজ়িয়া’। এই মেয়েটি নিজের মাথার চুল ছিঁড়ে খেয়ে ফেলত। সেই চুলই পাকস্থলী থেকে বেরোনোর পথ না পেয়ে সেখানে আটকে থাকত। গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে এমনটা সে করত বলে জানা গিয়েছে।
বাইরে থেকে বালিকার পেটে হাত দিয়ে প্রথমে চিকিৎসক মনে করেছিলেন, সেটি আসলে শক্ত টিউমার। নিশ্চিত হতে এমআরআই করেন তিনি। তখনই বিষয়টি নজরে আসে। এর পরেই বালিকার পেট কেটে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত হয়। উডল্যান্ডস মাল্টিস্পেশ্যালিটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারটি করেন শিশুরোগ শল্য-চিকিৎসক অনীক রায়চৌধুরী। তিনি বলছেন, ‘‘পাকস্থলী সাধারণত আপার অ্যাবডোমেন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু মেয়েটির পাকস্থলী চুলে ঠাসা হওয়ায় তা নাভি পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে গিয়েছিল। পাকস্থলী চুলে এতটাই ভরে গিয়েছিল যে, সেখানে খাবার ঢোকার পথ ছিল না। উপরন্তু পাকস্থলীতে আর জায়গা না পেয়ে সংযোগ-পথ ধরে সেই চুল ডিওডেনামে নামতে শুরু করেছিল। ডিওডেনামকে ছুঁয়ে ফেলার ঘটনা সাধারণত দেখা যায় না। একে বলে র্যাপুঞ্জেল সিনড্রোম।’’ অনীকবাবু জানাচ্ছেন, আপাতত শারীরিক ভাবে সুস্থ ওই বালিকা। তবে তার এই মানসিক সমস্যার চিকিৎসা জরুরি।
মনোরোগ চিকিৎসক সব্যসাচী মিত্র জানাচ্ছেন, ট্রাইকো টিলো ম্যানিয়া এক ধরনের অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজ়অর্ডার (ওসিডি)। অবসাদ এবং অতিরিক্ত উদ্বেগ থেকে এমনটা করেন রোগী। মানসিক রোগীদের পাঁচ শতাংশের মধ্যে ওসিডি দেখা যায়। সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘সময়ে এই রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসায় সারানো সম্ভব। তবে ওষুধ এবং সাইকোথেরাপি, দুটোই প্রয়োজন। কোনও একটায় এই রোগ সারে না। এ ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপি হিসাবে কার্যকর ‘কগনেটিভ বিহেভিয়োরাল থেরাপি’। যদি কাউকে ক্রমাগত হাত-পা ধুতে, কোনও কাজ ঠিক মতো করা হয়েছে কি না তা বার বার দেখতে, চুল ছিঁড়তে দেখা যায়, দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy