ডালিম শেখ। —ফাইল চিত্র।
হাত-পায়ের দুর্বলতা ক্রমশ বাড়ছিল বছর বিয়াল্লিশের যুবকের। সমস্যা গুরুতর আকার নেয় বছর দেড়েক আগে। একেবারেই অসাড় হয়ে যায় হাত-পা। শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন পেশায় রাজমিস্ত্রি ওই যুবক। অবশেষে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পরে ফের হাঁটছেন তিনি। নাড়াতে পারছেন হাতও।
মুর্শিদাবাদের কান্দির বাসিন্দা, ডালিম শেখ নামে ওই যুবককে দক্ষিণ ভারতে নিয়ে গিয়েছিলেন পরিজনেরা। কিন্তু সেখানে জানিয়ে দেওয়া হয়, ঘাড়ের কাছে মেরুদণ্ডের ভিতরে থাকা টিউমার অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়। কারণ তাতে প্রাণসংশয় হতে পারে। এর পরে, মাসকয়েক আগে তাঁরা কলকাতার স্নায়ু-শল্য চিকিৎসক অমিতাভ চন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর পরামর্শ মতো, গত এপ্রিল মাসে ডালিমকে আর এন টেগোর হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিজনেরা।
অমিতাভ জানান, তখন ডালিমের বাঁ হাত খুব সামান্য নড়ছিল। ডান হাত ও দু’টি পা একেবারেই অসাড় ছিল। পরীক্ষায় বোঝা যায়, শুধু মেরুদণ্ডের ভিতরে নেই টিউমারটি, একটি ফাঁক দিয়ে সেটি বেরিয়ে এসেছে গলার কাছেও। যা অনেকটা ‘ডাম্ববেল’-এর আকার নিয়েছে। মেরুদণ্ডের ভিতরে টিউমারটি ক্রমাগত চাপ তৈরির কারণেই ওই যুবক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। অমিতাভ বলেন, ‘‘ওই যুবকের কোমরের কাছেও মেরুদণ্ডে একটি ছোট টিউমার ছিল। কিন্তু তাতে সমস্যা ছিল না। বরং ঘাড়ের কাছে মেরুদণ্ডের ভিতরে ও বাইরে থাকা টিউমারের দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল।’’
ওই চিকিৎসক জানাচ্ছেন, দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলে ফল ভাল হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয় ডালিমের পরিজনদের। তাঁরা সম্মতি দেন। অস্ত্রোপচারটি সাধারণত দু’টি পর্যায়ে করার নিয়ম হলেও রোগীর আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে একবারেই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অমিতাভ বলেন, ‘‘গলার পাশ দিয়ে কেটে প্রথমে একটি টিউমার বাদ দেওয়া হয়। তার পরে গুরুত্বপূর্ণ ধমনী, শিরা বাঁচিয়ে মেরুদণ্ডের নালির (স্পাইনাল টানেল) মধ্যে বড় ফুটো করে ভিতরের টিউমারটি বাদ দেওয়া হয়।’’
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার। অমিতাভ-সহ চিকিৎসকেরা সকলেই জানাচ্ছেন, তাঁরা ভেবেছিলেন অস্ত্রোপচারে খুব বেশি সাফল্য মিলবে না। কিন্তু পরের দিন থেকেই পা নাড়তে শুরু করেন ডালিম। তার পরে ফিজ়িক্যাল রিহ্যাবিলিটেশনের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চলে হাঁটাচলা ও হাত নাড়ার প্রশিক্ষণ। এখন কিছুতে ভর না দিয়েই চলতে পারা ডালিম বলেন, ‘‘জড় পদার্থ হয়ে পড়েছিলাম। সেখান থেকে আবার হাঁটব, হাত দিয়ে কিছু ধরব— ভাবতেও পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy