Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
R G Kar Medical College And Hospital Incident

একবিংশ শতাব্দীতে মেয়েদের জন্য এমন নিদান খুবই লজ্জার

রাতে ডিউটি করতে হবে, সে কথা জেনেই আমরা নার্সিং পেশায় এসেছি। চিকিৎসকেরাও তাই। রাতে কাজ করতে আমাদের কোনও অসুবিধা বা আপত্তি নেই। কারণ, আমাদের একটাই লক্ষ্য— রোগী পরিষেবা।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় (রাজ্য সম্পাদক, নার্সেস ইউনিটি ও সিস্টার ইনচার্জ, রামরিক হাসপাতাল)
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৪৩
Share: Save:

আমরা দাবি করেছিলাম, রাতে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু শনিবার রাজ্য প্রশাসনের জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘যত দূর সম্ভব মহিলাদের নাইট ডিউটি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে’! যেখানে খোদ মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা ও রাজ্যকে মহিলাদের জন্য ‘সবচেয়ে নিরাপদ’ বলে দাবি করেন, সেখানে এমন নির্দেশিকার অর্থ কী? তা হলে কি ধরে নিতে হবে, সরকার স্বীকার করছে, আদৌ মহিলারা রাতে নিরাপদ নন? তাই রাতে কাজ না করার এই নিদান?

রাতে ডিউটি করতে হবে, সে কথা জেনেই আমরা নার্সিং পেশায় এসেছি। চিকিৎসকেরাও তাই। রাতে কাজ করতে আমাদের কোনও অসুবিধা বা আপত্তি নেই। কারণ, আমাদের একটাই লক্ষ্য— রোগী পরিষেবা। সেখানে যেমন লিঙ্গ-বর্ণ-জাত-ধর্মের বৈষম্য থাকে না, তেমনই সকাল-রাতেরও বিভেদ নেই। আমরা দাবি করেছি সুষ্ঠু নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেটা না করে মহিলাদের নাইট ডিউটি নিয়ে এমন নির্দেশিকায় আমরা বিস্মিত।

ধরা যাক, এ বার থেকে মহিলা নার্সেরা রাতে ডিউটি করবেন না। কিন্তু হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়ার মতো এত পুরুষ নার্সও কি রাজ্যে আছেন? আগামী ২০ বছরেও তা হওয়া সম্ভব নয় বলে আমাদের পর্যবেক্ষণ। ধরে নিচ্ছি, মহিলা নার্স ও চিকিৎসকেরা রাতে ডিউটি করলেন না। তা হলেও কি নিশ্চিন্ত হতে পারবে সরকার? চিকিৎসাধীন বহু মহিলা রোগী থাকেন, অনেক প্রসূতি রাতে ভর্তি হতে আসেন। তবে কি রাতে মহিলা রোগীদের পরিষেবা বন্ধ থাকবে? এর চেয়ে বরং মহিলা চিকিৎসক, নার্স, অন্যান্য সংস্থার কর্মী এমনকি রোগীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুক সরকার। সে জন্য কী করণীয়, তা মহিলাদের থেকেই জেনে নিক। তা না করে রাতের ডিউটি কমানোর সিদ্ধান্ত কোনও কৃতিত্বের নয়, বরং প্রশাসনিক ব্যর্থতার ছবি ফুটিয়ে তুলছে।

আমার মনে হয়, সরকারের উচিত ছিল মহিলাদের রাতের নিরাপত্তা জোরদার করার দিকে নজর দেওয়া। কেন্দ্রের রিপোর্টেও বলা হয়েছে— মহিলাদের নিরাপত্তায় সবচেয়ে এগিয়ে কলকাতা। তা হলে রাজ্যের নির্দেশিকার পরে কি ধরতে হবে, সেই রিপোর্টেও ‘জল’ রয়েছে? একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে মেয়েদের জন্য এমন নিদান খুবই লজ্জার। যেখানে নারীশক্তি বা নারী ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী এক জন মহিলা হয়ে কী ভাবে এমন নির্দেশ দেন? তাঁর প্রশাসনের পারিষদবর্গ তাঁকে এই পরামর্শ দিয়ে থাকলে তো তাঁরই সর্বাগ্রে প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। রাজ্যে কখনও রাতে কোনও ঘটনা ঘটলে কি মহিলা বলে মুখ্যমন্ত্রী সেখানে যাবেন না? আমরা চেয়েছি, হাসপাতাল থেকে সর্বত্র রাতে সব পেশার মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হোক। বদলে যা জুটল, সেটাকে অবজ্ঞা বলেই মনে করি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy