Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

পুরী এক্সপ্রেসে ‘হেনস্থা’য় ক্ষতিপূরণ আট বছর পরে

আট বছর আগের এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত কার্যত তুলোধোনা করল দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষকে।

পুরী এক্সপ্রেস।—ফাইল চিত্র।

পুরী এক্সপ্রেস।—ফাইল চিত্র।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৩২
Share: Save:

সম্প্রতি চলন্ত ট্রেনে ব্যাগ ছিনতাই রুখতে গিয়ে লাইনে পড়ে মৃত্যু হয়েছে দুর্গাপুরের বাসিন্দা মীনা ডোম ও তাঁর মেয়ে মনীষার। ঘটনাটি ঘটেছিল ত্রিবান্দ্রম এক্সপ্রেসে, মথুরা ও বৃন্দাবন রোড স্টেশনের মাঝে। দূরপাল্লার ট্রেনে যাত্রী-সুরক্ষা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, এই ঘটনায় তা আবার সামনে এসেছে।

এ বার আট বছর আগের এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত কার্যত তুলোধোনা করল দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষকে। যার কেন্দ্রে সে-ই নিরাপত্তা। সংস্থাকে আদালতের আরও নির্দেশ, অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ বাবদ অভিযোগকারীকে দেড় লক্ষ টাকা দিতে হবে।

ঘটনাটি ঠিক কী?

ক্রেতা সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর পুরী এক্সপ্রেসে সপরিবার কলকাতা ফিরছিলেন চেতলার বাসিন্দা, কলকাতা দূরদর্শনের প্রাক্তন কর্মী দেবাশিস গৌতম। তিনি জানিয়েছেন, ট্রেন দু’টি স্টেশন পার হওয়ার পরেই তাঁরা দেখেন, তাঁদের সংরক্ষিত কামরায় প্রচুর এমন লোক উঠেছেন যাঁদের অসংরক্ষিত কামরার টিকিট রয়েছে। অভিযোগ, দেবাশিসবাবুরা প্রতিবাদ করায় তাঁরা কোনও কথা শোনেননি। উল্টে কামরার অন্য যাত্রীদের উদ্দেশ্যে কটূক্তি করেন এবং দেবাশিসবাবুদের আসনেই বসে পড়েন। ওই রাতে কোনও টিকিট পরিদর্শক বা রেলরক্ষী বাহিনীর কর্মীর দেখা পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ।

দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘রাতে একটু চোখ লেগে এসেছিল। রাত দুটো নাগাদ ট্রেন খড়্গপুরে পৌঁছনোর পরে হঠাৎ খেয়াল করি, আমার ব্যাগ উধাও। তাতে দামি ক্যামেরা, একাধিক সামগ্রী-সহ প্রায় হাজার দু’য়েক টাকা ছিল।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, পরের দিন সকালে হাওড়া পৌঁছে গার্ডের কাছে গেলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এর পরে ওই ব্যক্তি হাওড়া রেলপুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাটি জানান ভিজিল্যান্স-সহ রেলের পদস্থ কর্তাদেরও। কিন্তু দেবাশিসবাবুর অভিযোগ, কোনও মহল থেকেই কোনও সাড়া আসেনি। বাধ্য হয়ে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বিরুদ্ধে কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত তাদের রায়ে রেলের কোনও দোষ নেই বলে মামলা খারিজ করে দেয়। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন দেবাশিসবাবু। গত ৬ অগস্ট ওই আদালতের বিচারক শ্যামল গুপ্ত এবং উৎপলকুমার ভট্টাচার্য তাঁদের রায়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‘সংরক্ষিত কামরায় অবৈধ যাত্রীরা প্রবেশ করছেন। তাঁরা যাত্রীদের সামগ্রী লুট করছেন। এই ঘটনায় রেল কোনও ভাবেই তার দায় এড়াতে পারে না।’’ সংস্থা কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করে আদালতের আরও মন্তব্য, ‘‘ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায় টিকিট পরিদর্শকের সামনেই অবৈধ যাত্রীরা উঠে পড়েন। ওই ঘটনায় কোনও টিকিট পরিদর্শক না থাকায় যাত্রীরা কোন অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, তা ভালই বোঝা যাচ্ছে।’’

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার এবং মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিককে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত নির্দেশ দিয়েছে, রায় বেরোনোর চল্লিশ দিনের মধ্যে মামলাকারীকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দেড় লক্ষ টাকা দিতে হবে। রায় প্রসঙ্গে দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত যে ভাবে মামলা খারিজ করেছিল, তাতে খুব অবাক হয়েছিলাম। আট বছর আগের সেই ঘটনা এখনও ভুলতে পারি না। যত দূর যেতে হয়, যাব।’’ দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘রায়ের প্রতিলিপি হাতে পাইনি। তা দেখেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Puri Express Consumer Court Indian Railway
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy