অকুস্থল: ডি এল খান রোডের এখানেই প্রৌঢ়াকে ধাক্কা মারে পুরসভার বেপরোয়া কম্প্যাক্টর গাড়িটি। শনিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে কিছু খুচরো পয়সা, ব্যবহার না-হওয়া ধূপকাঠি, আর হাত থেকে ভেঙে পড়া শাঁখা-পলা। পাশেই চাপ চাপ রক্তের মধ্যে পড়ে আছে প্লাস্টিকে মোড়া ফুল-মালা। কিছুটা দূরেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে এক প্রৌঢ়ার মৃতদেহ। অবস্থা এমনই যে, ঘাড় থেকে মাথার অংশ বলে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ঘিলু বেরিয়ে এসেছে!
শনিবার সকালে বাড়ির কাছে ডি এল খান রোড পার হয়ে উল্টো দিকে পুজো দিতে যাওয়ার সময়ে কলকাতা পুরসভার কম্প্যাক্টর গাড়ির ধাক্কায় এমনই পরিণতি হল বছর একষট্টির এক মহিলার। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম মায়া রায়। তিনি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্স ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার এই ঘটনায় প্রবল উত্তেজনা ছড়ায় ওই এলাকায়। রাস্তা অবরোধ করেন মৃতার প্রতিবেশীরা। পুলিশকর্তারা গেলে তাঁদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। এরই মধ্যে উত্তেজিত জনতা পুরসভার ওই গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। মারধর করা হয় চালককে। পুলিশ-কিয়স্কের সামনেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। যার জেরে ঘণ্টাখানেক যান চলাচল বন্ধ থাকে ডি এল খান রোডে। শনিবার গাড়ির চাপ কিছুটা কম থাকলেও গন্ডগোলের প্রভাব পড়ে কাছেই এসএসকেএম হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তায়। রেড রোড এবং এ জে সি বসু উড়ালপুল হয়ে ওই দিকে যাওয়া গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে যায়। পরে দুপুর ১টা নাগাদ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মায়ার স্বামী হেমন্ত রায় কলকাতা পুলিশে চাকরি করেন। তাঁর ছেলে, বছর আটাশের শঙ্খশুভ্র পড়াশোনা করেন। ধনধান্য সেতু যেখানে ডি এল খান রোডে মিশছে, তারই পাশে বিদ্যাসাগর কলোনিতে তাঁরা থাকেন। প্রতি শনিবার বিদ্যাসাগর কলোনি থেকে বেরিয়ে ধনধান্য সেতুর সামনে দিয়ে ডি এল খান রোড পার হয়ে উল্টো দিকের রাস্তায় একটি মন্দিরে পুজো দিতে যেতেন মায়া। এ দিনও ফুল-মালা, ধূূপকাঠি আর কিছু খুচরো পয়সা নিয়ে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ধনধান্য সেতু দিয়ে সেই সময়ে আসা পুরসভার একটি কম্প্যাক্টর গাড়ি পাশের ট্যাক্সির সঙ্গে রেষারেষি করছিল। কম্প্যাক্টর গাড়িটি মায়াকে ধাক্কা মারে। তিনি রাস্তায় পড়ে গেলে তাঁকে প্রায় ১০০ মিটার হিঁচড়ে নিয়ে যায় গাড়িটি। পুলিশ দ্রুত দেহটি উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই মৃতদেহের ময়না তদন্ত হওয়ার কথা।
এ দিন মায়াদের একতলা বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ডুকরে কেঁদে চলেছেন তাঁর আত্মীয়েরা। মায়ার ননদ রীনা গায়েন বলেন, ‘‘পুজো দিয়ে এসে হাসপাতালের জন্য বেরোনোর কথা ছিল। কিন্তু আর ফিরল না। এই মৃত্যু-ফাঁদ যত দিন থাকবে, তত দিন এমন ঘটনা ঘটেই চলবে। এটাভিআইপি-দের যাতায়াতের রাস্তা। মানুষ মরলেও মনে হয়, কারও কিছু যায় আসে না।’’ সেখানে জড়ো হওয়া প্রতিবেশীদের দাবি, আলিপুর চিড়িয়াখানার কাছের সেতুতে ‘হাইট বার’ থাকায় লরি, বাস, ডাম্পার— সবই ঘুরে এখান দিয়ে যায়। অথচ, সকালের দিকে এক জন পুলিশকর্মী থাকলেও বেলা বাড়লে আর তাঁকে দেখা যায় না। রাতের দিকে গাড়ি এমন গতিতে যায় যে, বিদ্যাসাগর কলোনি থেকে বেরিয়ে রাস্তা পার হওয়াই শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। ওই কলোনি থেকে বেরোনোর মুখে একটি ট্র্যাফিক সিগন্যাল থাকলেও সেটি দীর্ঘদিন ধরেই অকেজো বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের কর্তারা জানান, দ্রুত ওই পথের নিরাপত্তায় কী করা যায়, তা দেখা হবে। মৃতার শাশুড়ি লক্ষ্মী রায় বলেন, ‘‘পুলিশ আগেও বহু আশ্বাস দিয়েছে, কাজের কাজ হয়নি। তা ছাড়া, এখন যা-ই হোক, আমার বৌমা তো আর ফিরবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy