মানিক জানা
‘‘ওরে আর কত ঘুমোবি! ওঠ, ওঠ। পালা। বাড়ি ভেঙে পড়ছে যে।’’
মানিক জানার এই আর্ত চিৎকারেই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল মুড়িপট্টির অন্য দোকানদারদের। বাড়ি ভেঙে পড়ছে বুঝতে পেরেই তড়িঘড়ি বাইরে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। রবিবার রাতে এ ভাবেই ভেঙে পড়া বাড়িটির একতলায় ঘুমিয়ে থাকা একাধিক দোকানদারকে প্রাণে বাঁচিয়ে দিয়েছেন মানিক। নিজে অবশ্য বেরোতে পারেননি। দোকানের ভিতরেই ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েন বছর পঁয়তাল্লিশের মানিক।
মাত্র ১৫ বছর বয়সেই কাজের খোঁজে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জয়রামপুরের বাসিন্দা মানিক। বৈঠকখানা বাজারের মুড়িপট্টিতে একটি আনাজের দোকানে প্রায় ৩০ বছর কর্মচারী হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। রাত কাটাতেন ওই দোকানেই। সেখানেই বাড়ি চাপা পড়ে এই ভাবে তাঁর মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না এলাকার অন্য দোকানদারেরা। বরাতজোরে বেঁচে যাওয়া দোকানদারেরা সোমবার জানালেন, সেই রাতে ঘুম ভাঙতেই তাঁরা মানিকের চিৎকার শুনতে পেয়েছিলেন। প্রহ্লাদ হালদার নামে এক দোকানদারের কথায়, ‘‘মানিক অন্তত পাঁচ জনকে ভেঙে পড়া চাঙড়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে বাইরে বার করে দিয়েছিল। সকলের ঘুম ভাঙানোর পরে নিজের মোবাইল ফোনটা নিতে একবার দোকানে ঢুকেছিল ও। আর বেরোতে পারেনি।’’ মানিক যে দোকানে কাজ করতেন, তার পাশের দোকানটি তারা খটিকের। তিনি বলেন, ‘‘মানিককে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে সঙ্গে সঙ্গে বাজারে চলে আসি। ভেবেছিলাম, হয়তো কোনও ভাবে বেঁচে গিয়েছে। পরে শুনলাম, ওর দেহ উদ্ধার হয়েছে দোকানের ভিতর থেকে।’’
হাহাকার: ভেঙে পড়েছেন মানিক জানার স্ত্রী ও ছেলে। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।
সোমবার খবর পেয়ে মা অসীমাকে নিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন মানিকের ছেলে আশিস জানা। জানালেন, এই সপ্তাহান্তেই বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল মানিকের। কিন্তু কাজ থাকায় আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আশিস বলছেন, ‘‘আমি গ্রামে গাড়ি চালানোর কাজ করি। বাবার রোজগারেই মূলত সংসারটা চলত। বাড়িতে ছোট বোন রয়েছে। এখন কী ভাবে সংসার চলবে, কে জানে!’’
এ দিনের দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন আর এক দোকানদার, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের গোপাল নস্করও। অন্য দোকানদারেরা জানাচ্ছেন, সে রাতে বছর পঁয়ষট্টির গোপালকে ঘুম থেকে ডেকে তোলার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাঁর ঘুম ভাঙেনি। তার পরে রাতেই তাঁকে উদ্ধার করে এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গোপালকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। সোমবার ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে তাঁর ছেলে গৌতম নস্কর বলেন, ‘‘বাবার দোকানের মুড়ি গ্রামে বিক্রি করতে নিয়ে যেতাম। এখন তো আর দোকানটাই রইল না। সব অন্ধকার দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy