গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই ধুঁকতে শুরু করেছিল যন্ত্র। গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সেটি পুরোপুরি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থাও জানিয়ে দেয়, ওই যন্ত্র আর মেরামত করা সম্ভব নয়। অগত্যা ছোট একটি যন্ত্রের উপরে নির্ভর করেই চলছে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগ। তাতে ক্যানসার, হরমোনের পরীক্ষা করা গেলেও ভিটামিন ডি-র পরীক্ষা হয় না। প্রশ্ন হল, শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ মেডিক্যাল কলেজে কেন এত দিন ধরে রক্ত পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র বিকল হয়ে থাকবে? কেনই বা অবিলম্বে খারাপ যন্ত্র বদলের পদক্ষেপ করা হবে না?
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ছোট যন্ত্রটি দিয়ে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে। তবে, দ্রুত সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ করা হবে।’’ সূত্রের খবর, ক্যানসারের বায়ো মার্কার, হরমোন ও ভিটামিনের পরীক্ষার জন্য আর জি করের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে দু’টি যন্ত্র রয়েছে। একটি বড় এবং একটি ছোট। গত সেপ্টেম্বর থেকে বড় যন্ত্রটিতে সমস্যা শুরু হয়। তাতে ওই হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের রক্ত পরীক্ষা নিয়ে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়। বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে পরীক্ষা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে একাধিক বিভাগ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়। অন্য দিকে, অন্তত ছ’টি চিঠি পাঠিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে যান্ত্রিক সমস্যার বিষয়টি জানানো হয় বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের তরফেও। জানা যাচ্ছে, ২১ জানুয়ারি ওই বড় যন্ত্রটি পুরোপুরি খারাপ হয়ে যায়। পাশাপাশি, ছোট যন্ত্রটিতে পরীক্ষার ‘রিএজেন্ট’ কেনা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। যার ফলে ওই যন্ত্রেও পরীক্ষাগুলি করা সম্ভব হচ্ছিল না।
সূত্রের খবর, ক্যানসারের বায়ো মার্কার, ভিটামিন ও হরমোনের পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে দৈনিক অন্তত ১০০ জন রোগী পরিষেবা পাচ্ছিলেন না। অবশেষে বিষয়টি স্বাস্থ্যসচিবের নজরে আসায় ছোট যন্ত্রটিতে পরীক্ষা চালুর জন্য স্থানীয় ভাবে কিট ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য ভবন। সোমবার থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই সমস্ত সামগ্রী সরবরাহের পরে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে তাতে ক্যানসার, হরমোনের পরীক্ষা হলেও ভিটামিন ডি-র পরীক্ষা হয় না। চিকিৎসকদের একাংশের কথায়, ‘‘বড় যন্ত্রে ঘণ্টায় যত নমুনা পরীক্ষা করা যায়, ছোট যন্ত্রে তা সম্ভব নয়। আর, ওই একটি মাত্র ছোট যন্ত্র কোনও কারণে খারাপ হয়ে গেলে তখন বিপদ আরও বাড়বে।’’ তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, গরমের মরসুমে ওই সমস্ত পরীক্ষার চাপ বাড়ে। তাই অবিলম্বে নতুন বড় যন্ত্র কিংবা আরও কয়েকটি ছোট যন্ত্রের প্রয়োজন।
জানা যাচ্ছে, নতুন একটি সংস্থা মাঝারি আকারের একটি যন্ত্র সরবরাহ করার জন্য নভেম্বরে দরপত্র দিয়েছে। যাতে সমস্ত পরীক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু সেটি বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের পরীক্ষাগারে কী ভাবে প্রতিস্থাপন করা হবে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগী পরিষেবা যাতে ব্যাহত না হয়, তার জন্য দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)