মনোতোষ চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র
জীবন বিপন্ন করে মাত্র পাঁচ দিন আগে গঙ্গায় ঝাঁপ দিতে যাওয়া এক প্রৌঢ়কে বাঁচিয়েছিলেন তিনি। সেই তিনিই এ বার রক্ষাকর্তা হলেন গঙ্গায় প্রায় তলিয়ে যেতে বসা এক প্রাক্তন সেনাকর্মীর।
উদ্ধারকারীর নাম মনোতোষ চৌধুরী। রাজ্যের সমস্ত লঞ্চঘাটে যাত্রীদের সাহায্যের জন্য চালু হয়েছে যে ‘জলসাথী’ প্রকল্প, সেই প্রকল্পেরই অস্থায়ী কর্মী তিনি।
সোমবার কী ঘটেছিল? এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ হাওড়া লঞ্চঘাটের এক নম্বর জেটি থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছিলেন প্রৌঢ় ওই প্রাক্তন সেনাকর্মী। হাবুডুবু খেতে খেতে তলিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সেই দৃশ্য দেখে এক মুহূর্ত অপেক্ষা করেননি সুঠাম চেহারার মনোতোষ। এক সহকর্মীর হাতে মোবাইল এবং ঘড়ি দিয়ে একটি বয়া নিয়ে গঙ্গায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। ওই প্রৌঢ়কে উদ্ধার করে টেনে আনেন জেটির কাছে। আর একটি বয়া ফেলে তাঁকে উপরে তুলে আনেন জলসাথী প্রকল্পেরই আর এক কর্মী সোনু আদক। পরে পুলিশ এসে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা ওই প্রৌঢ়কে হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, তিনি আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
আরও পড়ুন: অনলাইনে সোফা বেচতে গিয়ে প্রতারণার শিকার
এর আগে গত বৃহস্পতিবার এক নম্বর জেটি থেকেই গঙ্গায় ঝাঁপ দিতে যাচ্ছিলেন এক প্রৌঢ়। শেষ মুহূর্তে ঘটনাটি দেখে তাঁকে জাপটে ধরে বাঁচান বছর একুশের মনোতোষই। তবে টাল সামলাতে না পেরে নিজে পড়ে যান জেটি আর লঞ্চের ফাঁকে। ভাগ্যক্রমে নদীতে পড়ে যাননি। কোনও রকমে লঞ্চের হাতল ধরে উঠে আসেন।
কী ভেবে এত ঝুঁকিপূর্ণ চাকরি বেছে নিলেন? মনোতোষ বলেন, ‘‘মাইনের টাকা আমার কাছে বড় নয়। এক জন মানুষ আমার সামনেই আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন, সেটা মেনে নিতে পারি না। একটা জীবন বাঁচানোর প্রাপ্তি অনেক বেশি। সেটাই আমি করেছি।’’
আরও পড়ুন: দমকলের নির্দেশ মানছে না নিমতলার কাঠগোলা পাড়া
মনোতোষ জানান, এ দিন ওই প্রৌঢ় একটি ব্যাগ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ জেটির শেষ প্রান্তে বসেছিলেন। তাঁর ব্যবহারে অস্বাভাবিকতা লক্ষ করায় মনোতোষই তাঁকে সেখান থেকে এনে টিকিট কাউন্টারের কাছে একটি জায়গায় বসিয়ে ফের জেটি পাহারায় চলে আসেন। কিন্তু এরই মধ্যে কর্মীদের চোখ এড়িয়ে প্রৌঢ় সোজা চলে আসেন জেটির ধারে। সেখানে থাকা দড়ি টপকে ঝাঁপ দেন গঙ্গায়। তখন জেটি পাহারায় মনোতোষ ছাড়াও ছিলেন জলসাথী প্রকল্পের আরও পাঁচ কর্মী। তাঁরাও সাহায্যের জন্য ছুটে এসেছিলেন। কিন্তু গঙ্গায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন শুধু মনোতোষ।
গত দু’দিনে দু’টি প্রাণ বাঁচিয়ে লঞ্চযাত্রী থেকে সহকর্মী, সকলের বাহবা পেয়েছেন আড়িয়াদহের বাসিন্দা ওই যুবক। গৌতমকুমার নন্দী নামে এক লঞ্চযাত্রী বলেন, ‘‘এটা ভেবেই ভাল লাগছে যে, এখনও এমন মানুষ আছেন যিনি অন্যদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে নিজের জীবনের কথা ভাবেন না। সরকারের উচিত ওঁদের স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy