Advertisement
E-Paper

‘হেনস্থার হাতিয়ার’ বাংলাদেশ! সমাজমাধ্যমে ঘৃণা বর্ষণ

লালবাজারের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে সমাজমাধ্যমে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। এমন কোনও হুমকি বা বিদ্বেষমূলক পোস্ট দেখা গেলেই দ্রুত তা মোছানো হচ্ছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৩২
Share
Save

এত কাল তাঁকে পাড়ার অনেকেই ‘বাঙাল’ বলে ডাকতেন। ছোটখাটো কাজ করে ছেলে-মেয়ে-স্ত্রীর সংসার টানা মাঝবয়সি সেই ব্যক্তি পাড়ায় বেরোলে হাসি-মশকরাও করতেন কেউ কেউ। কিন্তু সোমবার বিকেলের পর থেকেই পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর গলায় চটির মালা পরানো বিকৃত ছবি। নীচে লেখা, ‘এই হল বাঙাল। হাসিনার (বাংলাদেশের সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বন্ধু। রাস্তায় দেখলেই মালা পরান। কিসের মালা, আপনার ব্যাপার! আর ওর দেশে ফেরার সুযোগ নেই।’ রাস্তায় বেরোনো তো দূর, ভয়ে নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন উত্তর কলকাতার হরি ঘোষ স্ট্রিটের এই বাসিন্দা।

একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে যাদবপুরের শ্রী কলোনির বাসিন্দা আর এক জনের। বাংলাদেশের সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ছবিতে তাঁর মুখের জায়গায় অবিবাহিত ওই ব্যক্তির মুখ বিকৃত করে বসানো হয়েছে। সমাজমাধ্যমে তা পোস্ট করে চলছে লাগাতার ঘৃণা বর্ষণ। সেই ছবির ‘ঘৃণার কারবারে’ এ দেশের সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি হুমকি এসেছে এই মুহূর্তে জ্বলতে থাকা বাংলাদেশ থেকেও। এমনকি, তাতে খুনের হুমকি পর্যন্ত রয়েছে। এ হেন পরিস্থিতিতে এই দুই ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশ পৌঁছয় পোস্ট দু’টি যাঁরা করেছিলেন, তাঁদের কাছে। দু’টি পোস্ট মুছিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এমন বিষয়ে কড়া নজরদারির আবেদন জানিয়ে পুলিশের তরফে বার্তা পাঠানো হয়েছে একটি বহুল প্রচলিত সমাজমাধ্যম সাইট কর্তৃপক্ষের কাছে। যদিও এমন ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দু’টি ঘটনা ছাড়াও এমন ২০০টি ঘটনায় সমাজমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্টের জন্য অনেককেই ফোন করে সতর্ক করা হয়েছে।

লালবাজারের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে সমাজমাধ্যমে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। এমন কোনও হুমকি বা বিদ্বেষমূলক পোস্ট দেখা গেলেই দ্রুত তা মোছানো হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে সতর্ক করে ছাড়া হলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে মামলাও করা হচ্ছে। যদিও অনেকেরই প্রশ্ন, ঘৃণা ভাষণ যেখানে অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত, যেখানে দেশের শীর্ষ আদালত এ ব্যাপারে ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছে, সেখানে সতর্ক করে কার্যোদ্ধারের চেষ্টা হবে কেন?

মনোরোগ চিকিৎসক দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ফুটবল খেলা থেকে খাওয়াদাওয়ার ধরন— ঘটি-বাঙালের লড়াই দেখতে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু সে লড়াই যখন মানসিক হেনস্থার পর্যায়ে পৌঁছয়, তখন আর সহ্য করার জায়গা থাকে না। ঘৃণা-ভাষণ বহু ক্ষেত্রে এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, প্রতিবেশী দেশকে আমাদের থেকে নিচুতে দেখাতে তাদের অস্তিত্বই স্বীকার করতে চাওয়া হয় না। এমন লাগাতার ঘৃণা-বর্ষণ অবসাদের পথ তৈরি করে। বহু ক্ষেত্রে আত্মহত্যার পিছনেও দায়ী থাকে এই ঘৃণা ভাষণ।’’ দেবাঞ্জন এই পরিপ্রেক্ষিতে ঘৃণা ভাষণ সংক্রান্ত কিছু শব্দ সমাজমাধ্যমে নিষিদ্ধ করে দেওয়ার পক্ষে।

সমাজতাত্ত্বিক অভিজিৎ মিত্র বললেন, ‘‘আমরা বহু ক্ষেত্রেই মুখে বলি, সকলে আমরা এক। কিন্তু মনে মনে ক’জন সেটা ভাবি? অন্যের থেকে আমি উঁচুতে, এটা দেখানোর চেষ্টাতেই দেশ ভাগের প্রসঙ্গ তুলে হেনস্থা করা হয়। এই কঠিন সময়ে দেখতে হবে, বাংলাদেশ যেন আরও একটি হেনস্থার হাতিয়ার না হয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh Unrest Bangladesh Bangladesh violence Sheikh Hasina harassment Social Media Abuse

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}