—প্রতীকী চিত্র।
শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত দেশজোড়া একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, ২০২১-’২২ সালে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং গণিতে (সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাথমেটিক্স বা এস টি ই এম) মহিলা স্নাতক ৪২.২ শতাংশ। অথচ, এই চার বিষয়ে কাজের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, মহিলাদের সংখ্যা মাত্র ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ, পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে মোট কর্মরতের এক-তৃতীয়াংশের চেয়েও কম কর্মরত মহিলা। তা হলে এই বিপুল সংখ্যক স্নাতকেরা যাচ্ছেন কোথায়?
বুধবার, ‘সত্যেন্দ্রনাথ বসু ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেস’ আয়োজিত এক আলোচনাসভায় নানা দিক থেকে এই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলেন বক্তারা। ‘উইমেন ইন কোয়ান্টাম সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিস’ শীর্ষক ওই আলোচনায় বক্তারা এক বাক্যে বললেন যে, আর-পাঁচটা কাজের জায়গার মতো বিজ্ঞানেও মহিলারা নানা ভাবেই পক্ষপাতের শিকার।
পদ্মশ্রী সম্মানপ্রাপ্ত, প্রবীণ বিজ্ঞানী রোহিণী গোডবোলের কথায় উঠে এল সেই ‘অদৃশ্য পক্ষপাত’-এর কথা। তিনি জানান, পক্ষপাতের ফলেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করার পরেও তা নিয়ে কাজ করছেন, এমন মহিলাদের সংখ্যা ভারতে আজও কম। অনেকেই একটা সময়ের পরে কাজ ছেড়ে দেন বা বেছে নেন অন্য বিষয়। রয়েছে মহিলাদের সামাজিক দায়িত্বের দিকটিও। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যে ভাবে সাংসারিক নানা দায়িত্ব মেয়েদের উপরেই এসে পড়ে, তাতে কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‘বিজ্ঞানীর আগে মহিলা শব্দটির ব্যবহার চলতেই থাকবে, যত দিন না কাজের জায়গায় সমতা আসবে।’’
আবার উচ্চশিক্ষা বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও যে নিজেদের প্রমাণ করতে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বেশি পরিশ্রম করতে হয়, সেই দিকটি উঠে এল শিব নাদার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রূপমঞ্জরী ঘোষের কথায়। এই প্রমাণ করার চাপের জন্যই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই ভোগেন আত্মবিশ্বাসের অভাবে।
মহিলা বিজ্ঞানী-গবেষকদের কাজ যে জনমানসে বা ইতিহাসেও তেমন গুরুত্ব পায় না, সেই দিকটি তুলে ধরেন কানাডার উইলফ্রিড লরিয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সোহিনী ঘোষ। উদাহরণ হিসাবে তিনি জানান, গুগল সার্চে প্রায় ৫০ জন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীর তালিকায় রয়েছেন তিন-চার জন মহিলা। উচ্চ পদগুলিতেও মহিলাদের সংখ্যা কম। এই প্রসঙ্গেই এ দিন উঠে আসে বিভা চৌধুরী, অসীমা চট্টোপাধ্যায় ও পূর্ণিমা সিংহের কথা। যাঁরা পথপ্রদর্শক হয়েও কার্যত রয়ে গিয়েছেন অন্তরালেই।
দেশের মানবসম্পদের একটি বড় অংশকে বাদ দিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রকৃত অগ্রগতি সম্ভব নয় বলেই মন্তব্য করলেন অধ্যাপক-গবেষক উমেশ ওয়াঘমারে। মহিলাদের যোগদান আরও বাড়ানোর উপায় তা হলে কী?
এই গবেষণা কেন্দ্রের অধিকর্তা তনুশ্রী সাহা দাশগুপ্ত সওয়াল করছেন সামগ্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য। প্রথমত, মহিলাদের যোগদানের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে সরকারি নীতি নির্ধারণের স্তর থেকেই। দ্বিতীয়ত, তৃণমূল স্তর থেকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনায় মেয়েদের উৎসাহ দিয়ে যেতে হবে। সমাজে তৈরি করতে হবে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি।
পদার্থবিজ্ঞানে শান্তি স্বরূপ ভাটনাগর পুরস্কারজয়ী অদিতি সেন দে তুলে আনছেন পারিবারিক সমর্থনের দিকটিও। বাবা-মায়ের পাশাপাশি বিজ্ঞানী স্বামীর অকুণ্ঠ সমর্থনের ফলে কাজে প্রয়োজনীয় সময় দিতে পেরেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘মেয়েদের দুর্বল বলে ভাবার পক্ষপাত কিন্তু মেয়েরাও করেন। সেই ভাবনার জায়গায় বড়সড় বদল আনা দরকার। মহিলা বিজ্ঞানীদের কৃতিত্বের দিকটি আরও বেশি করে সামনে আনারও প্রয়োজন রয়েছে, যাতে তাঁরা ‘রোল মডেল’ হয়ে উঠতে পারেন।’’
পাশাপাশি, লিঙ্গসাম্য নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন, নীতি-নির্ধারণ স্তরের পদক্ষেপ যাতে ‘টোকেনিজ়ম’-এ পর্যবসিত না হয়, সে সবও দেখতে হবে বলে জানালেন বক্তারা। সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু উদ্যোগের ফলে পরিস্থিতি আগের থেকে কিছুটা ভাল হলেও এখনও যে অনেক পথ চলা বাকি, সে বিষয়ে এ দিন একমত হন বক্তা ও শ্রোতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy