Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
SSKM Hospital

এসএসকেএমে আকাশের নীচে রাতভর সঙ্কটজনক রোগী, ভর্তি পরদিন

শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় শনিবার বর্ধমান থেকে দ্রুত তাঁকে নিয়ে কলকাতার পথে রওনা দেন তাঁরা। সে দিনই দুপুরে রোগীকে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে।

A critical patient has been kept outside the emergency ward of SSKM hospital on Sunday

প্রতীক্ষা: তখনও এসএসকেএমের জরুরি বিভাগের সামনে প্রিয়াঙ্কা বাদ্যকর। রবিবার।  নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:১৯
Share: Save:

হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে জরুরি বিভাগের সামনেই পড়ে রইলেন রোগী। খোলা আকাশের নীচে রোগী-সহ রাত কাটল পরিজনদের। রোগীর অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছে দেখে জরুরি বিভাগে গিয়ে ভর্তির জন্য কাকুতি-মিনতি করেন পরিবারের সদস্যেরা। কিন্তু তাঁদের বলা হয়, ‘‘চিকিৎসক নেই। সোমবার বহির্বিভাগে দেখিয়ে তার পরে আসুন!’’ দীর্ঘ চেষ্টার পরে সেই রোগী যখন এসএসকেএমে ভর্তি হলেন, তত ক্ষণে রবিবার বিকেল গড়িয়েছে। এই ঘটনায় সরকারি হাসপাতালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রোগীর পরিবার।

জানা গিয়েছে, বছর একুশের ওই রোগী প্রিয়াঙ্কা বাদ্যকর বর্ধমানের পাণ্ডুকের বাসিন্দা। একাধিক শারীরিক সমস্যা থাকায় অন্তঃসত্ত্বা ওই তরুণীকে দিন কুড়ি আগে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, প্রিয়াঙ্কার গর্ভস্থ ভ্রূণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসা চলাকালীন খিঁচুনির সঙ্গে বমি শুরু হয় তরুণীর। পরিস্থিতি ক্রমে জটিল হচ্ছে দেখে দ্রুত চিকিৎসকেরা তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করেন। মাথায় রক্ত জমাট বাঁধায় তাঁর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন আছে বলে জানিয়েছিলেন বর্ধমানের চিকিৎসকেরা।

প্রিয়াঙ্কার পরিবারের দাবি, শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় শনিবার বর্ধমান থেকে দ্রুত তাঁকে নিয়ে কলকাতার পথে রওনা দেন তাঁরা। সে দিনই দুপুরে রোগীকে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। প্রিয়াঙ্কার এক আত্মীয় শ্যামল বাদ্যকর বলেন, ‘‘হাসপাতালে যখন আসি, তখন বেলা গড়িয়ে গিয়েছে। এর পরে টিকিট করে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে জানিয়ে দেওয়া হয়, শয্যা নেই। বলা হয়, অন্য হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যান।’’ শ্যামলের দাবি, বহু অনুরোধ-উপরোধ করেও কাজ হয়নি। সন্ধ্যার দিকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরিজনেরা জানাচ্ছেন, রাতেই রোগীকে নিয়ে তাঁরা ছোটেন এম আর বাঙুর হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেও তাঁর চিকিৎসার কোনও বন্দোবস্ত নেই বলে আত্মীয়দের জানিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফের প্রিয়াঙ্কাকে এসএসকেএমেই নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরিজনদের দাবি, রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ফের তাঁরা রোগীকে নিয়ে এসএসকেএমে পৌঁছন। আবারও জানিয়ে দেওয়া হয়, শয্যা না থাকায় ভর্তি নেওয়া যাবে না। এমনকি, সোমবার বহির্বিভাগে রোগীকে দেখিয়ে তার পরে জরুরি বিভাগের মাধ্যমে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয় বলে প্রিয়াঙ্কার আত্মীয়দের অভিযোগ।

এর পর থেকে জরুরি বিভাগের সামনে আকাশের নীচে তরুণীকে নিয়ে রাত কাটে গোটা পরিবারের। রবিবার সকালে ফের এক বার টিকিট করে হাসপাতালে প্রিয়াঙ্কাকে ভর্তির চেষ্টা করেন আত্মীয়েরা। শ্যামল বলেন, ‘‘সকালে দীর্ঘ সময় প্রিয়াঙ্কা হাসপাতাল চত্বরেই পড়ে ছিল। তার পরে জরুরি বিভাগের ভিতরে শুইয়ে রাখা হয়। কিছু বলতে গেলেই বলা হয়, চিকিৎসক এলে দেখবেন।’’

শেষমেশ রবিবার বিকেল চারটে নাগাদ এসএসকেএমে ভর্তি হতে পারেন ওই তরুণী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, জরুরি বিভাগে আসার পরে ওই রোগীকে বাঙুরের জরুরি বিভাগে যেতে বলা হয়েছিল। সেখানেই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। রোগীর পরিজনেরা এম আর বাঙুর হাসপাতালে চলে যান। ফিরে এসে আবার যখন যোগাযোগ করেন, তখন আর শয্যা খালি ছিল না। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওঁকে বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেসে যেতে বলা হয়েছিল। রবিবার দুপুরে বিষয়টি নজরে এলে প্রথমে রোগীর সিটি স্ক্যান করানো হয়। বিকেল ৪টে নাগাদ প্রিয়াঙ্কাকে ইমার্জেন্সি অবজার্ভেশন ওয়ার্ডে (ইওডব্লিউ) ভর্তি করা হয়েছে।’’

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এম আর বাঙুর থেকে এসএসকেএমে ফিরে আসার পরেও সারা রাত রোগীকে হাসপাতালের বাইরে কেন পড়ে থাকতে হল? এসএসকেএমের সুপার পীযূষ রায় বলেন, ‘‘অনেক সময়েই শয্যা থাকে না। তবে তার জন্য রোগীর এ ভাবে বাইরে পড়ে থাকার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছিল, দেখা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Hospital Hospital Negligence medical service
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE